UsharAlo logo
সোমবার, ১৮ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৩রা অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অন্তর্বর্তী সরকারের পাশে থাকবে যুক্তরাষ্ট্র

usharalodesk
সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২৪ ১১:৫৭ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

ঊষার আলো রিপোর্ট : অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেওয়া নানা সংস্কার, দেশ পুনর্গঠন, অর্থনৈতিক সংকট নিরসনসহ নানা পদক্ষেপে সব ধরনের সহযোগিতায় পাশে থাকবে যুক্তরাষ্ট্র। সহায়তা করবে পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনতে। দেশের উন্নয়নে যুক্তরাষ্ট্র ২০০ মিলিয়ন ডলারের নতুন সহায়তা চুক্তি সই করেছে। সফররত উচ্চপর্যায়ের মার্কিন প্রতিনিধিদল দ্বিতীয় দিন রোববার দিনভর নানা বৈঠকে বাংলাদেশের জন্য নতুন প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে।

এদিন প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশের পুনর্গঠন, মৌলিক সংস্কার ও পাচার হওয়া টাকা ফেরাতে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা চেয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এ সময় তারা সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপে সমর্থন জানিয়ে তা অব্যাহত রাখার আশ্বাস দিয়েছেন। তবে আগামী নির্বাচনের রূপরেখা নিয়ে বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র কিছু জানতে চায়নি বলে জানান পররাষ্ট্র সচিব মো. জসীম উদ্দিন। তিনি আরও জানান, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের টানাপোড়েনের বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে আলোচনা হয়নি। প্রতিনিধিদল এদিন বৈঠক করে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে।

দেশ পুনর্গঠনে মার্কিন সহায়তা চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা : অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশ পুনর্গঠন, গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়ন এবং পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনতে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা চেয়েছেন। রোববার ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় সফররত উচ্চপর্যায়ের মার্কিন প্রতিনিধিদলের সঙ্গে এক বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা এ সহায়তা চান।

মার্কিন ট্রেজারি বিভাগের আন্তর্জাতিক অর্থবিষয়ক সহকারি সচিব ব্রেন্ট নেইম্যানের নেতৃত্বে মার্কিন প্রতিনিধিদলে আরও ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু, যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী বাণিজ্য প্রতিনিধি ব্রেন্ডন লিঞ্চ এবং মার্কিন ট্রেজারি ডিপার্টমেন্টের পরিচালক জেরড ম্যাসন। বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়সংক্রান্ত বিশেষ দূত ড. লুৎফে সিদ্দিকী, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এসডিজিবিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক (সিনিয়র সচিব) লামিয়া মোরশেদ, পররাষ্ট্র সচিব মো. জসিম উদ্দিন এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব মো. শাহরিয়ার কাদের সিদ্দিকী উপস্থিত ছিলেন।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে বলেন, সরকার দ্রুততার সঙ্গে অর্থনীতি পুনর্গঠন, সংস্কার ও পুনরায় সচল করার পাশাপাশি আর্থিক খাতে সংস্কার এবং বিচার বিভাগ ও পুলিশের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো কার্যকর করার উদ্যোগ নিয়েছে। বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা উল্লেখ করেন, বর্তমান সময়টি আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং আমাদের ইতিহাসের এক তাৎপর্যপূর্ণ মুহূর্ত।

তিনি ছাত্রদের নেতৃত্বে সংঘটিত বিপ্লব সম্পর্কে বলেন, এ বিপ্লব বাংলাদেশে নতুন আশাজাগানিয়া যুগের সূচনা করেছে। প্রধান উপদেষ্টা মার্কিন প্রতিনিধিদলের কাছে অন্তর্বর্তী সরকারের গৃহীত সংস্কারের রূপরেখা তুলে ধরে বলেন, সরকার দায়িত্ব গ্রহণের মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ভোট কারচুপি প্রতিরোধে নির্বাচন কমিশন সংস্কার এবং বিচার বিভাগ, পুলিশ, জনপ্রশাসন, দুর্নীতি দমন কমিশন ও সংবিধান সংশোধনের লক্ষ্যে ছয়টি কমিশন গঠন করেছে।

স্বৈরাচার সরকারের ঘনিষ্ঠ দুর্নীতিবাজ ব্যক্তিদের দ্বারা আত্মসাৎকৃত ও পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ বলে তিনি উল্লেখ করেন। অন্তর্বর্তী সরকারকে দুর্নীতির মতো বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে উল্লেখ করে বিশ্ববরেণ্য অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. ইউনূস বলেন, ‘আমরা দুর্নীতির এক গভীর সমুদ্রে নিমজ্জিত ছিলাম।’

যুক্তরাষ্ট্রের রাজস্ব ও অর্থ দপ্তরের আন্তর্জাতিক অর্থায়নবিষয়ক সহকারী আন্ডার সেক্রেটারি ব্রেন্ট নেইম্যানের নেতৃত্বাধীন মার্কিন প্রতিনিধিদল অধ্যাপক ড. ইউনূসের নেতৃত্বের প্রশংসা করে বলেন, ওয়াশিংটন অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়নে সহায়তা করতে পারলে আনন্দিত হবে। বৈঠকে মার্কিন কর্মকর্তারা জানান, ড. ইউনূস সরকারের বাস্তবায়নাধীন সংস্কার কর্মসূচিতে তারা প্রযুক্তি ও আর্থিক সহায়তা দিতে আগ্রহী।

ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে আর্থিক খাতের সংস্কার, বিনিয়োগ, শ্রম পরিস্থিতি, রোহিঙ্গা সংকট এবং জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগদান উপলক্ষ্যে প্রধান উপদেষ্টার আসন্ন নিউইয়র্ক সফর নিয়ে আলোচনা হয়।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনুস সফররত মার্কিন প্রতিনিধিদলকে জুলাই-আগস্টে বাংলাদেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় রাজধানী ঢাকার দেওয়ালে ছাত্রদের আঁকা বর্ণিল ও বৈচিত্র্যময় গ্রাফিতির ছবি সংবলিত একটি আর্টবুক উপহার দেন এ সময়।

সংস্কার প্রক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র সহযোগিতা করতে আগ্রহী : মার্কিন প্রতিনিধিদলের প্রথম বৈঠকটি হয় পররাষ্ট্র উপেদষ্টা তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে। রোববার সকাল ৯টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পৌঁছে প্রতিনিধিদলটি। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে ছিলেন মার্কিন ট্রেজারি বিভাগের আন্তর্জাতিক অর্থবিষয়ক সহকারী সচিব ব্রেন্ট নেইম্যানের। উপস্থিত ছিলেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক ব্যুরোর সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু। পররাষ্ট্র সচিব মো. জসীম উদ্দিনসহ দুই দেশের নীতিনির্ধারকরা উপস্থিত ছিলেন। ঘণ্টাখানেক স্থায়ী এ বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের নানান দিক নিয়ে আলোচনা হয়। বিশেষ করে অন্তর্বর্তী সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা।

রোববার দুপুরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজ সভার পর পররাষ্ট্র সচিব মো. জসীম উদ্দিন সাংবাদিকদের জানান, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দ্রুততম সময়ের মধ্যে অর্থনৈতিক সংস্কারের বিষয়টি বিশেষ অগ্রাধিকারে রয়েছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সংস্কার নিয়ে সরকারের ধারণা ও যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে এতে যুক্ত হতে পারে, তা নিয়ে ঢাকা সফররত উচ্চপর্যায়ের মার্কিন প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাধারণ আলোচনা হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার প্রক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র সহযোগিতা করতে আগ্রহী।

পররাষ্ট্র সচিব জানান, অন্তর্বর্তী সরকার ইতোমধ্যে যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, সেগুলোর বিষয়ে প্রতিনিধিদলকে জানানো হয়েছে। সরকারের সংস্কার পরিকল্পনা সম্পর্কে তারা জানতে চেয়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে অর্থনৈতিক সংস্কারের বিষয়টি এ সরকারের বিশেষ অগ্রাধিকার বলে তাদের জানানো হয়েছে। আর্থিক ও রাজস্ব খাতের সংস্কারের কথা বলা হয়েছে। এসব বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য সহযোগিতার ক্ষেত্র, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি, শ্রম পরিবেশ, মানবাধিকার সুরক্ষা, রোহিঙ্গা সংকটসহ নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

কোন কোন খাতে সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হয়েছে, জানতে চাইলে জসীম উদ্দীন বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করেছে এক মাসের কিছুটা বেশি। আজ বৈঠকে পরিবর্তিত যে পরিস্থিতি ও সরকারের সংস্কার বিষয়ে যে ধ্যানধারণা এবং তাতে যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে অংশগ্রহণ করতে পারে, তা নিয়ে সাধারণ আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা আশা করি, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যথাযথ যোগাযোগ বাড়ানোর জন্য এ সফর একটি ভিত্তি। সামনে আমরা এ আলোচনাকে বিভিন্ন পর্যায়ে এগিয়ে নিয়ে যাব।

পাচার হওয়া টাকা ফেরত নিয়ে আলোচনা হয়েছে কিনা, জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, আমরা বড় আকারে আর্থিক খাতে সংস্কার নিয়ে আলোচনা করেছি এবং পাচার হওয়া অর্থসহ অন্যান্য বিষয় নিয়ে প্রাথমিক কথাবার্তা হয়েছে। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের যে বিশেষায়িত জ্ঞান রয়েছে, সেটি হয়তো আমরা ব্যবহার করব, কিন্তু আলাপ-আলোচনা সবে শুরু হয়েছে। এর চূড়ান্ত রূপ পেতে কিছুটা সময় লাগবে।

পররাষ্ট্র সচিব জসীম উদ্দিন বলেন, প্রতিনিধিদলের এই সফরে প্রথম যে আশ্বাস, সেটি হচ্ছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র কাজ করতে চায়। সেটারই প্রতিফলন হিসাবে সরকার গঠনের দ্বিতীয় মাসেই যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধিদল পাঠিয়েছে। দ্বিতীয়ত, আর্থিক সংস্কারের যেসব খাত চিহ্নিত করা হয়েছে, তার সবকটিতে তারা সার্বিকভাবে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন। শ্রম আইন নিয়ে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, সেগুলো তাদের জানানো হয়েছে এবং এই আলোচনা অব্যাহত থাকবে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলের অন্যতম সদস্য এবং দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু ঢাকায় আসার আগে দিল্লি সফর করেছেন। এই সফরে ভারত থেকে কোনো বার্তা নিয়ে এসেছেন কিনা-জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, এ বিষয়ে আজ কোনো আলোচনা হয়নি। বাংলাদেশে ভারতের হাইকমিশন আছে এবং ভারতে বাংলাদেশের হাইকমিশন আছে। আমরা যদি দুদেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে চাই, এগুলো আমাদের জন্য প্ল্যাটফর্ম।

এদিকে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন এবং সফররত প্রতিনিধিদলের মধ্যে বৈঠক শেষে রোববার মার্কিন দূতাবাস তাদের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে জানায়, আমরা আমাদের অংশীদার বাংলাদেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধা সম্প্রসারণ, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা গড়ে তোলা, মানবাধিকার সমুন্নত রাখা এবং জলবায়ু ঝুঁকি কমিয়ে আনতে সহায়তা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

বাংলাদেশের উন্নয়নে ২০০ মিলিয়ন ডলার অনুদান দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র : বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নে পাশে থাকবে যুক্তরাষ্ট্র। এজন্য বিভিন্ন বিষয়ে সহায়তা অব্যাহত থাকবে। এর অংশ হিসাবে প্রাথমিকভাবে ২০০ মিলিয়ন ডলারের অনুদান দিচ্ছে দেশটি। রোববার রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক এবং অনুদান চুক্তি শেষে এসব তথ্য জানান ইউএসএআইডির কর্মকর্তা অঞ্জলি কাউড। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে বৈঠক শেষে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

অঞ্জলি কাউড বলেন, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে সহায়তা দিতে বাড়তি ২০০ মিলিয়ন ডলার দেওয়া হচ্ছে। এজন্য চুক্তিটি নতুনভাবে করা হয়েছে। বাংলাদেশের সুশাসন, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাসহ বিভিন্ন খাতে সহায়তা অব্যাহত থাকবে।

আলোচনা শেষে অনুষ্ঠিত অনুদান চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সাহাবউদ্দিন এবং ইউএসএআইডির মিশন ডিরেক্টর রিড জে. অ্যাসচলিম্যান।

অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আগে যে অর্থায়ন ছিল তার অতিরিক্ত হিসাবে ২০০ মিলিয়ন ডলার দেবে ইউএসএআইডি। পাচার হওয়া টাকা ফেরানোর বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তাদের সঙ্গে অনেক বিষয়েই আলাপ হয়েছে। পরে বিস্তারিত আরও আলাপ হবে। মার্কিন প্রতিনিধিদলের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে মূলত রাজস্ব ও আর্থিক খাত নিয়ে। আর্থিক খাতের সংস্কার ও সহযোগিতা নিয়ে কথা হয়েছে। বাণিজ্য নিয়েও কথা হয়েছে। রপ্তানি বহুমুখীকরণসহ অন্যান্য কারিগরি সহায়তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বাজার অনুসন্ধানও আলোচনায় এসেছে। বাংলাদেশ সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা প্রণয়ন করলে তারা সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে।

ইআরডি থেকে জানানো হয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১৯৭২ সাল থেকে বাংলাদেশের একটি বিশ্বস্ত উন্নয়ন অংশীদার। ১৯৭৪ সালে স্বাক্ষরিত প্রযুক্তিগত এবং অর্থনৈতিক সম্পর্কিত সহায়তা শীর্ষক একটি আমব্রেলা চুক্তির অধীনে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্র এবং শাসনের মতো বিভিন্ন খাতে এখন পর্যন্ত ৮ বিলিয়ন ডলারের বেশি অবদান রেখেছে। খাদ্য নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন খাতে ইউএসএ তার বেশির ভাগ উন্নয়ন সহায়তা প্রদান করে ইউনাইটেড স্টেটস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ইউএসএআইডি) এবং ইউনাইটেড স্টেটস ডিপার্টমেন্ট অব অ্যাগ্রিকালচার (ইউএসডিএ) এবং কিছু অন্যান্য সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে।

ইআরডি আরও জানায়, ২০২১ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২১-২৭ সালের জন্য সরকার ও ইউএসএইডের একটি নতুন সমঝোতা স্বাক্ষরিত হয়েছিল। এটি বাস্তবায়নের জন্য মোট ৯৫৪ মিলিয়ন ডলার দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

পাচার হওয়া টাকা ফেরাতে বাংলাদেশকে সাহায্য করবে যুক্তরাষ্ট্র-যমুনা টিভিকে ব্রেন্ট নেইম্যান : বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করবে যুক্তরাষ্ট্র। এজন্য মেনে চলতে হবে আইএমএফের দেওয়া শর্ত। যমুনা টিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা জানিয়েছেন সফররত মার্কিন প্রতিনিধি দলের প্রধান ও মার্কিন ট্রেজারি বিভাগের আন্তর্জাতিক অর্থবিষয়ক এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ব্রেন্ট নেইম্যান। তার সফরসঙ্গী ইউএসএআইডির ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাডমিনিস্ট্রেটর অঞ্জলি কৌর বলেছেন, এদেশের অন্তর্বর্তী সরকার দুর্নীতি প্রতিরোধে সক্রিয়। এ কাজে ঢাকার সঙ্গে নিবিড়ভাবে থাকবে ওয়াশিংটন।

রাজধানীর এইএমকে সেন্টারে যমুনা টিভির নেওয়া ওই সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূসের সরকারের বিভিন্ন সংস্কারকে কিভাবে দেখছে এমন প্রশ্নের উত্তরে অঞ্জলি কৌর বলেন, আমরা এ সরকারের বিষয়ে একটি বিষয়ে পরিষ্কারভাবে জানতে পেরেছি যে, এই সরকার দুর্নীতিবিরোধী সরকার হিসেবে পরিচিত হতে চায়।

আর তাই অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে এটি আমাদের জন্য একটি ‘বিরাট সিগন্যাল’। যে কারণে আমরা এই সরকারকে সেরা সমর্থন দিয়ে যাব। আমরা স্বচ্ছতা আনতে সহায়তা দেব। প্রচেষ্টাগুলোকে কিভাবে আরও ডিজিটাইজ করা যায় তা নিয়ে কাজ করব। যেন সারাদেশের মানুষ জানতে পারে আসলে কী ঘটছে।

শেখ হাসিনার সরকারের সময়ে দেশ থেকে পাচার হওয়া টাকা ফিরিয়ে আনতেও সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়ে ব্রেন্ট নেইম্যান বলেন, আজকের আলোচনার নানা সময়ে আমি বাংলাদেশের আইএমএফ প্রোগ্রামে ‘গভর্মেন্ট ডায়াগনস্টিক’ তৈরির বিষয়ে বলেছি। এটি আইএমএফের একটি টুল যেটি মাইক্রো ইকোনমিতে প্রাসঙ্গিক। বাংলাদেশ যদি এই টুল তাদের আইএমএফ প্রোগ্রামে সংযুক্ত করতে রাজি হয়, তাহলে আশা করা যায় দুর্নীতির বিরুদ্ধে, মানি লন্ডারিংয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থার উন্নতি ঘটাতে এটি একটি পন্থা হবে।

প্রতিনিধি দলের সদস্যরা বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতা বাড়াতে আগের চেয়ে গভীর সম্পর্ক রাখবে ওয়াশিংটন। এছাড়া রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন ও মানবিক সহায়তা বৃদ্ধি এবং জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়েও সহায়তা বাড়াতে কাজ করবে যুক্তরাষ্ট্র।

অঞ্জলি কৌর বলেন, আমরা বাংলাদেশের মানুষের উন্নতির দিকে মনোনিবেশ করেছি। বাংলাদেশের সরকার ও জনগণের সঙ্গে আমরা অংশীদারত্বের ভিত্তিতে কাজ করব। আমরা অর্থনীতিক প্রবৃদ্ধি, স্থিতিশীলতা নিয়ে কাজ করব। পরিবেশ সংরক্ষণ, ক্লিন এনার্জি, শিক্ষার অগ্রগতি, স্বাস্থ্যসেবা বাড়ানোর মতো বিষয়গুলোতে আমরা গুরুত্ব দিয়েছি। দুর্যোগকালে মানবিক সহায়তা দেওয়ার মতো বিষয়গুলোতেও আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি।

ব্রেন্ট নেইম্যান বলেন, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে কিভাবে আমরা আরও একে অপরকে সহযোগিতা করতে পারি, বন্ধন দৃঢ় করতে পারি, সেই পরিবেশ তৈরির বিষয়েও আমরা কাজ করতে চাই। এ সময় তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের কাছ থেকে বাংলাদেশের জন্য নানা সুফল বয়ে আনার বিষয়েও ইঙ্গিত দেন।

ঊষার আলো-এসএ