বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা: জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে উপকূলীয় এলাকায় নিরাপদ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে ৯৬১ কোটি ৭৫ লাখ ৫২ হাজার টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন করা হয়েছে। ‘উপকূলীয় জেলাসমূহের বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে পানি সরবরাহ’ শীর্ষক প্রকল্পটি অনুমোদন করায় সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলনসহ নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বধীন সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২২মার্চ) একনেক চেয়ারপারসন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একনেক বৈঠকে এই প্রকল্পটিসহ ১২টি প্রকল্প অনুমোদন করা হয়। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী। পরে পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান প্রকল্প অনুমোদনের বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেন।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, উপকূলীয় জেলা খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, গোপালগঞ্জ, বরগুনা, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, পটুয়াখালী ও কক্সবাজারের ২২২টি ইউনিয়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। প্রকল্পের মূল কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে দুই লাখ ছয় হাজার ৮৭২টি রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং ইউনিট নির্মাণ। এছাড়া প্রকল্পভুক্ত এলাকায় সেফলি ম্যানেজড পানি সরবরাহের আওতা ২০৩০ সাল নাগাদ ৬০.১ শতাংশে উন্নীত করা হবে। ২০২৪ সালের জুন মাসের মধ্যে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন কাজ শেষ হবে। এই প্রকল্পের আওতায় বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করে মানুষকে লবণাক্ততা ও আর্সেনিকমুক্ত বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা সম্ভব হবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন। প্রকল্পটি অনুমোদন হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলনের উপদেষ্টা মীর মোস্তাক আহমেদ রবি এমপি ও সমন্বয়ক নিখিল চন্দ্র ভদ্র।
এক যৌথ বিবৃতিতে তারা বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তন ও ঝড়-জলোচ্ছ্বাসসহ নানা কারণে উপকূলীয় এলাকায় সুপেয় পানির সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। নোনা পানির আগ্রাসনে নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে জনগণ। বিষয়টি নিয়ে আমরা দীর্ঘ দিন কথা বলছি, দেন-দরবার করছি। জনগণের আকাঙ্খাকে গুরুত্ব দিয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার এই প্রকল্পটি গ্রহণ সমগ্র উপকূলবাসী কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছে। পর্যায়ক্রমে পুরো উপকূলীয় এলাকায় নিরাপদ পানি সরবরাহ করা সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তারা। প্রকল্প প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের মূল শিকার দেশের উপকূলীয় এলাকাগুলো। এর প্রভাবে সমুদ্রের পানিস্তরের উচ্চতা বৃদ্ধি, ঝড়-জলোচ্ছ্বাসসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে শুধু ভূ-উপরিস্থিত নয়, বরং ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তরেও লবণাক্ততা ছড়িয়ে পড়ে। কোনো কোনো এলাকা এমন রয়েছে, যেখানে কোনো পানযোগ্য পানির উৎস আর পাওয়া যায়নি; এমনকি নদী-খাল-বিল-পুকুরের পানি লবণাক্ত হয়ে পড়েছে, যা শুষ্ক মৌসুমে আরো প্রকট আকার ধারণ করে। এসব উৎসর পানি পান করা ও গৃহস্থালি কাজে ব্যবহার করা যায় না। এই লবণাক্ত পানি পান করে উচ্চ রক্তচাপ, নারীদের গর্ভকালীন বিভিন্ন জটিলতা, কিডনি রোগ ও চর্মরোগের মতো নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে উপকূলীয় এলাকার মানুষ।
একাধিক গবেষণা তথ্যানুযায়ী, উপকূলীয় এলাকায় নোনা পানির আগ্রাসনে জনজীবন বিপর্যস্থ হয়ে পড়েছে। এতে বেশী আক্রান্ত হচ্ছেন নারীরা। লবণাক্ত পানি ব্যবহারের ফলে উপকূলীয় এলাকায় নারীদের জরায়ুতে বিভিন্ন ধরণের রোগ, উচ্চ রক্তচাপ, অনিয়মিত ঋতুস্রাব, গর্ভকালীন খিঁচুনি, গর্ভপাত, এমনকি অপরিণত শিশু জন্ম দেওয়ার হার বেড়েছে। এছাড়া দৈনন্দিন গৃহস্থালি কাজ, গোসল, কৃষি কাজ, গবাদিপশু পালন, চিংড়ির পোনা ধরাসহ অন্যান্য অর্থনৈতিক কাজে লবণাক্ত পানি ব্যবহারের কারণে নারীরা লিউকোরিয়াসহ সাধারণ পানিবাহিত বিভিন্ন রোগ এবং চর্মরোগে বেশি আক্রান্ত হয়। ক্যান্সারের মতো জটিল রোগ থেকে বাঁচতে অনেক নারীকে জরায়ু কেটে ফেলতে হচ্ছে। শারীরিক নানান জটিল অসুস্থতার কারণে বাড়ছে বিবাহ বিচ্ছেদ। আবার কম বয়সে মুখে কালো ছোপ দেখা দেওয়া এবং শরীরের রং কালো হয়ে যাওয়ায় বাল্য বিয়ে বেড়েছে।