UsharAlo logo
বুধবার, ৭ই জুন, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ২৪শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

এবার পদ্মায় ছুটবে ট্রেন

usharalodesk
এপ্রিল ৩, ২০২৩ ১০:৪৫ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

ঊষার আলো রিপোর্ট : শেষ হতে যাচ্ছে প্রতীক্ষার পালা। পদ্মা নদীর বুকে সড়ক পথে গাড়ি চলছে অনেক দিন। এবার ছুটবে ট্রেন। পদ্মায় পড়বে রেলের ছায়া। উন্মোচিত হবে যোগাযোগের নতুন দিগন্ত। একটু একটু করে পদ্মার দুই পারে প্রস্তুত হচ্ছে রেল যোগাযোগের পথ।

৬.১৫ কিলোমিটার পদ্মা সেতুতে এখন শতভাগ রেললাইন বসে গেছে। দুই স্তরের ঢালাইয়ের কাজ শেষ। শুকিয়েছে আস্তরও। সেতুর মাওয়া প্রান্ত থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত টানা ৪২ কিলোমিটার রেলপথ এখন দৃশ্যমান। আগামীকাল মঙ্গলবার প্রথমবারের মতো এই পুরো পথে চালানো হবে গ্যাংকার।

প্রকল্প সূত্র বলেছে, রেললাইন বসে গেলেও খুঁটিনাটি অনেক কাজ বাকি। সেতুতে বসানো রেললাইনে এখনো ওয়েল্ডিংয়ের কাজ শেষ হয়নি। ফলে গ্যাংকার খুব আস্তে চালাতে হবে। তবু গ্যাংকার ঝাঁকি খাবে। যতটুকু পথে রেললাইন বসেছে তাতে ট্রেন চলতে অন্তত আরো তিন মাস লাগবে।

রেলের কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী, প্রকল্পের অধীন প্রথমে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ট্রেন চালানো হবে। এই রেলপথ চালু হলে আরো ছয়টি রেলপথের সঙ্গে যুক্ত হবে। প্রাথমিক ভাবনায় রাজবাড়ী, গোপালগঞ্জ, চুয়াডাঙ্গার দর্শনা, যশোরের বেনাপোল, খুলনা, রাজশাহীর ট্রেনও এই পথে চালানোর চিন্তা আছে। সে ক্ষেত্রে ভারতে যাওয়ার মৈত্রী ট্রেনও এ পথ ব্যবহার করবে ভবিষ্যতে।

পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ প্রকল্পের পরিচালক আফজাল হোসেন বলেন, ‘মঙ্গলবার পুরো ৪২ কিলোমিটার পথে গ্যাংকার চালানোর পরিকল্পনা আছে। অনেক জায়গায় পরীক্ষামূলকভাবে এরই মধ্যে গ্যাংকার চালানো হয়েছে।’ এদিকে ঢাকা থেকে মাওয়া পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার রেললাইন বসানো হয়েছে। মাওয়া প্রান্ত থেকে ঢাকামুখী রেললাইন বসানোর কাজ শুরু হয়। শ্রীপুর, কেরানীগঞ্জ, পাগলা ও ডেমরা এলাকায় খণ্ড খণ্ডভাবে রেললাইন বসানো হয়েছে।

বর্তমানে রেলপথে ঢাকার সঙ্গে খুলনার দূরত্ব ৪৬০ কিলোমিটার। পদ্মা সেতু দিয়ে নতুন রেলপথটি চালু হলে দূরত্ব কমবে ২১২ কিলোমিটার। এ ছাড়া অন্যান্য অঞ্চলের সঙ্গে নতুন পথে নতুন রেলযাত্রী তৈরি হবে। দূরত্ব ও ভোগান্তি কমবে।

বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক কামরুল আহসান বলেন, রেললাইন বসে গেলেও আরো কয়েক ধাপের কাজ বাকি আছে। সব কাজ শেষে পরীক্ষামূলক চলাচল শুরু হবে। সেপ্টেম্বর নাগাদ যাত্রী পরিবহনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এদিকে প্রকল্পের অগ্রগতি প্রতিবেদন বলছে, ১ এপ্রিল পর্যন্ত সার্বিক অগ্রগতি ৭৪ শতাংশ। প্রকল্পের নির্মাণকাজ তিন ভাগে বিভক্ত। এতে ঢাকা-মাওয়া অংশে ৭৩ শতাংশ, মাওয়া-ভাঙ্গা অংশে ৯১ শতাংশ, ভাঙ্গা-যশোর অংশে ৭৪ শতাংশ কাজ হয়েছে।

ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত রেলপথের গড় অগ্রগতি ৮২ শতাংশ। মাওয়া-ভাঙ্গা অংশে কাজ আগে শুরু হওয়ায় এই অংশের অগ্রগতিও বেশি। এই অংশের ১২টি বড় সেতুর সব কটির নির্মাণকাজ শেষ। শেষ হয়েছে ২৬.৯৭ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ। ৬৯টি কালভার্ট ও আন্ডারপাস, এক হাজার ৭১০টি ওয়ার্কিং পাইল, দুই হাজার ৫৮টি বক্স গার্ডার, ভায়াডাক্ট-২-এর ৬৮টি পিয়ার এবং বাঁধ নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। ৬৭টি স্প্যান স্থাপন করা হয়েছে। ভায়াডাক্ট-৩-এর ১০৮টি পিয়ার ও বাঁধ নির্মাণ এবং ১০৭টি স্প্যান স্থাপনের কাজ শেষ হয়েছে।

এই অংশের সঙ্গে যুক্ত ঢাকা-মাওয়া অংশের ২১.৫ কিলোমিটার মাটির কাজ ও ১৫টি বড় সেতু, ৩১টি কালভার্ট ও আন্ডারপাসে কিছু কাজ বাকি আছে। মূলত এই অংশে বেশি কাজ বাকি নতুন স্টেশন ভবন নির্মাণ ও বিদ্যমান স্টেশন ভবন পুনর্নির্মাণ করার জন্য। এ ছাড়া সিগনালিংয়ের কাজ প্রায় পুরোটাই বাকি। রেলের পরিকল্পনায় প্রথমে প্রকল্পের দ্বিতীয় অংশে মাওয়া থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ট্রেন চালানোর কথা ছিল।

এরপর ঢাকা-মাওয়া অংশকে যুক্ত করা হতো। সব শেষে যুক্ত হতো ভাঙ্গা-যশোর অংশ। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে না পারা এবং সময়মতো সেতু বুঝে না পাওয়ায় পরিকল্পনায় বদল আনে রেল কর্তৃপক্ষ।

বর্তমানে পুরো প্রকল্পের মেয়াদ রয়েছে আগামী বছরের জুন পর্যন্ত। এই সময়ের মধ্যে ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত রেলপথ চালু করতে চান সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তবে প্রথম ধাপে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ট্রেন চালানো হবে। এই অংশে চলতি বছরের ডিসেম্বরে ট্রেন চলার কথা ছিল। তবে এই সময় এগিয়ে আনা হয়েছে। রেলের নতুন কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী, আগামী আগস্টে এই পথে পরীক্ষামূলক ট্রেন চলবে। আর সেপ্টেম্বরে যাত্রী পরিবহন করা হবে।

রাজধানীর কমলাপুর থেকে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা, কেরানীগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর, লৌহজং, পদ্মা সেতু, শরীয়তপুরের জাজিরা, মাদারীপুরের শিবচর, ফরিদপুরের ভাঙ্গা, নড়াইল, মাগুরা হয়ে যশোর পর্যন্ত এই রেলপথে ২০টি স্টেশন থাকবে। প্রকল্পের অধীনে মূল পথ ১৬৯ কিলোমিটার। সেখানে লুপ ও সাইডিং ৪২.২২ কিলোমিটার এবং তিন কিলোমিটার ডাবল লাইনসহ মোট ২১৫.২২ কিলোমিটার রেলওয়ে ট্র্যাক নির্মাণ করা হচ্ছে।

৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মীয়মাণ পদ্মা সেতু রেলসংযোগ প্রকল্পে ১৮ হাজার ২১০ কোটি ১১ লাখ টাকা দিচ্ছে সরকার। বাকি ২১ হাজার ৩৬ কোটি ৬৯ লাখ টাকা ঋণ দিয়েছে চায়না এক্সিম ব্যাংক। প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয় ২০১৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। ২০১৬ সালের ২৭ এপ্রিল প্রকল্পটি সরকারের ফার্স্ট ট্র্যাক প্রকল্পের তালিকাভুক্ত করা হয়।

ঊষার আলো-এসএ