UsharAlo logo
বৃহস্পতিবার, ৩রা জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৯শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ঐতিহ্যবাহী পাদুকাশিল্পের গৌরব হারানোর পথে

ঊষার আলো
এপ্রিল ৮, ২০২৩ ১:০০ অপরাহ্ণ
Link Copied!

ঊষার আলো রিপোর্ট: বড়াল নদের কোল ঘেঁষে গড়ে ওঠা কালুহাটি গ্রাম। গ্রামে ছোট্ট ছোট্ট ঘর, তার মধ্যে বসে নানা বয়সি মানুষ তৈরি করছে বাহারি রঙের স্যান্ডেল ও জুতা। নারী-পুরুষের বাহারি জুতা তৈরি করা এ গ্রামটি আশপাশের সবার কাছে ‘পাদুকা পল্লী’ নামেই পরিচিত। এখানকার তৈরি বাহারি জুতা স্যান্ডেল যায় গোটা উত্তরবঙ্গসহ রাজধানীতেও। গত কয়েক বছরে অভাবী গ্রামের চেহারা পাল্টে কালুহাটি এখন ঝকঝকে কর্মচাঞ্চল্যের সাফল্যমতি একটি গ্রাম।

সরেজমিন রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার নিমপাড়া ইউনিয়নের কালুহাটি গ্রামে প্রবেশ করলেই চোখে পড়ে জুতা-স্যান্ডেল তৈরির বিভিন্ন কারখানার সাইন বোর্ড। একেকটি ঘরই যেন একেক কারখানা! আর কারখানা ঘিরেই তাদের জীবন-জীবিকা আর স্বপ্ন। সারা বছরই কর্মচাঞ্চল্য থাকা গ্রামটিতে রোজা এবং ঈদ কেন্দ্র করে ব্যস্ততা বেড়ে যায় কয়েক গুণ বেশি। তবে এ বছর ব্যস্ততার ছন্দপতন ঘটেছে।

বৈশ্বিক মহামারি করোনা ও আধুনিকতার বাজারে এ শিল্পে ভাটা পড়েছে। কর্মচঞ্চল এ গ্রামে এখন অলস সময় পার করতে হচ্ছে পাদুকা শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা। একদিকে জুতা সেন্ডেল তৈরির কাঁচামালের দাম ঊর্ধ্বমুখী, আধুনিক যন্ত্রপাতির অভাব ও করোনার কারণে চাহিদা কমে গেছে। ফলে চরম দুর্বিষহভাবে চলছে জীবনমান।

পাদুকাশিল্পের সঙ্গে জড়িতদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সারা বছর কাজ কম থাকলেও রোজার ঈদ ঘিরে পাদুকাশিল্পের সঙ্গে জড়িতদের থাকে অনেক আশা-ভরসা। তবে গত দুই বছর ধরে বৈশ্বিক মহামারি করোনার কারণে এ শিল্পের দুর্দিন শুরু হয়েছে। কর্মহীন হতে হচ্ছে এর সঙ্গে জড়িতদের। ফলে অনেক কারখানাকে গুনতে হচ্ছে ব্যাপক লোকসান। আর এ লোকসান ওঠাতে না পারলে অনেককে পথে বসতে হবে।

পাদুকাশিল্পের সাধারণ সম্পাদক সোহেল রানা বলেন, আমরা সারা বছর অনেক কষ্টে কারখানাগুলো খুলে রাখি বছরের দুটি ঈদ ঘিরে। তবে গত কয়েক বছর ধরে বৈশ্বিক করোনার কারণে এ শিল্পে ব্যাপক ক্ষতির প্রভাব পড়েছে।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে জুতা সেন্ডেল তৈরির প্রতিটি উপকরণের দাম বেড়েছে কয়েক গুণ। অন্যদিকে ভারতীয় কিছু জুতা সেন্ডেল বাজারে এসে দাম কমিয়েছে। এতে বাজারে টিকিয়ে থাকা বড়ই কঠিন। তা ছাড়া মার্কেটে বাকিতে পণ্য বিক্রি করা সেই টাকা না পাওয়ায় অনেক কারখানা আজ বন্ধের পথে। এক রমজানেই ৩০ কোটি টাকার ব্যবসা নেমে এসেছে অর্ধেকে।

সোহেল বলেন, আমরা বিভিন্ন জটিলতা আর অপরিকল্পিতভাবে কারখানাগুলোর ব্যবসা করে এলেও ২০১০ সালে চারঘাট-বাঘার সাংসদ পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আমাদের সার্বিকভাবে দিকনিদের্শনা দিয়ে এসএমই ফাউন্ডেশনের মাধমে এ শিল্পের বিকাশ ঘটেছেন।

তিনি বলেন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সবসময় আমাদের খোঁজখবর নেন। তার পরও বৈশ্বিক করোনায় গোটা বিশ্ব যখন টালমাটাল তখন আমাদের দেশের জুতা শিল্পের অবস্থাও করুন। অনেক জুতা-সেন্ডেলের দোকানপাট এখনো ব্যবসা সফল করতে পারছে না। ফলে এ বছর আমাদের লোকসান অনেক।

জানা গেছে, পাদুকার উন্নয়নে ২০১০ সালে চারঘাট-বাঘা আসনের সাংসদ পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আলহাজ শাহরিয়ার আলম ও এসএমই ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে অনেকেই ট্রেনিং পেয়েছেন। একই সময় ব্যবসায়ীদের এক ছাতার নিচে আনতে কালুহাটি পাদুকাশিল্প মালিক সমবায় সমিতি লিমিটেড গঠন করা হয়। যার সদস্য বর্তমানে ১১৭।

বিশ্ববিখ্যাত ব্র্যান্ড হুগো বসের জুতায় ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ দেখে নিজের ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে এ কালুহাটির পাদুকা পল্লীর সফলতাকে আরও বড় কিছু করার স্বপ্নের কথা লেখেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও স্থানীয় সাংসদ শাহরিয়ার আলম। তার স্বপ্নের সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় ব্যবসায়ীরাও আশায় বুক বেঁধেছেন একদিন দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন বাজারে যাবে কালুহাটির তৈরি জুতা।

ঊষার আলো-এসএ