ঊষার আলো প্রতিবেদক : কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল করেছ দান/আমি দিতে এসেছি শ্রাবণের গান; কিংবা মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের সেই ধ্রুপদী পঙিক্ত ‘গভীর গর্জন করে সদা জলধর/উথলিল নদ-নদী ধরনীর উপর’ মনে করিয়ে দিল আবারও সবুজ সমারোহে হাজির হয়েছে বর্ষাকাল। মঙ্গলবার (১৫ জুন) আষাঢ়ের প্রথম দিন।
বর্ষার এ সময়ে পুষ্প-বৃক্ষে, পত্র-পল্লবে, নতুন প্রাণের সঞ্চার করে সবকিছুর মধ্যে। কদম ফুলের স্নিগ্ধ ঘ্রাণ গ্রাম কিংবা নগরবাসী সবাইকে মুগ্ধ করে এ সময়ে।
বর্ষার বন্দনায় কবি নির্মলেন্দু গুণ লিখেছেন, গ্রীষ্ম চলিল, বর্ষা আসিল, আষাঢ়ে নামিল ঢল/বুনো পাখি সব ডাকে অবিরল : বাওয়া ক্ষেত কর তল।/ এই তো কখন নেমেছে বৃষ্টি, অবিরাম তবু ঝরছে/ না পেয়ে উপায় রাখালের দল ভিজে ভিজে বাড়ি ফিরছে।
আষাঢ় ও শ্রাবণ-দুই মাস বর্ষাকাল। আর বর্ষাকাল মানেই মেঘ, বৃষ্টি, প্রেম, নতুন প্রাণ, জেগে ওঠার গান। রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশ তাই তো বলেছেন, এই জল ভালো লাগে;- বৃষ্টির রুপালি জল কত দিন এসে/ ধুয়েছে আমার দেহ- বুলায়ে দিয়েছে চুল- চোখের উপরে/ তার শান্ত স্নিগ্ধ হাত রেখে কত খেলিয়াছে,- আবেগের ভরে। বর্ষা আমাদের মনকে স্নিগ্ধ করে তোলে। পুরোনো জঞ্জাল ধুয়েমুছে আমরাও জেগে উঠি প্রাণচাঞ্চল্যে।
বর্ষা আমাদের জন্য অপরিহার্য এক ঋতু। বৃষ্টি না হলে শস্যাদি জন্মাবে না, বেড়ে উঠবে না প্রাণ। বৃষ্টির অভাবে মাটি যখন অনুর্বর হয়ে যায়, তখন বর্ষা এসে তা উর্বর করে। আমাদের নদী, মাঠ, ঘাটের দেশ বর্ষায় ভরে ওঠে সবুজে শ্যামলে।
বর্ষার পানিতে নদীনালা, খালবিল ভরে ওঠে। সেখানে নতুন প্রাণের সঞ্চার হয়। তাই বর্ষা আমাদের জন্য আশীর্বাদ। এক পশলা বৃষ্টি যে নতুন মাত্রা নিয়ে আসে জীবনে, তা অন্যকিছুতেই পাওয়া যায় না।
বর্ষায় বাংলার নদনদী পূর্ণযৌবনা হয়ে ওঠে। নদীর ফেঁপে ওঠা জোয়ারের পানি প্রচুর পলি জমায় মাটিতে, যা নিয়ে আসে শস্যের প্রাচুর্যের খবর। এ সময় বিলে-ঝিলে ফোটে শাপলা-শালুক। হিজল আর কেয়াফুলের অরূপ দৃশ্য মোহিত করে মনকে।
বর্ষাকাল গ্রামের মানুষকে অনেক বেশি ঘরমুখো করে তোলে। রমণীরা ঘরে বসে নকশিকাঁথায় ফুল তোলে। অনেকটা আলস্যে কেটে যায় দিন। বৃষ্টি বেশি হলে গরিব মানুষের হাতে কোনো কাজ থাকে না।
বর্ষায় ফোটে কদম ফুল, যা বর্ষার রূপকে বাড়িয়ে দেয়। আরও ফোটে কেতকী। শহরের একঘেয়ে যান্ত্রিক জীবনে বর্ষা কিছুটা হলেও প্রভাব ফেলে। বৃষ্টি শহরের ধুলোবালিকে বশ করে। তবে বর্ষায় শহরের রাস্তাঘাট অল্প বৃষ্টিতেই তলিয়ে যায়, যা মানুষের ভোগান্তি বাড়ায়। অতি বর্ষণে দেখা দেয় নদীভাঙন ও বন্যা।
বাংলার কৃষি ও অর্থনীতি বৃষ্টিনির্ভর। যথাযথ বৃষ্টিপাত ফসল ফলাতে সহায়তা করে। অন্যদিকে অনাবৃষ্টি ও খরায় কৃষি ভেঙে পড়ে। তাই বর্ষাকাল আমাদের জীবনে সামগ্রিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
(ঊষার আলো-এমএনএস)