‘করোনা পরীক্ষার ফি আত্মসাৎকার’ অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) মামলা দায়ের ও খুলনার শেখ বাড়ি পরিবারের সাথে সখ্যতা থাকায় ডা: সুজাত আহমেদকে খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালের উপ-পরিচালক পদে যোগদান করতে দেননি হাসপাতালের সর্বস্তরের চিকিৎসকবৃন্দরা। এ সময়ে তিনি ডাক্তারদের বাধার মুখে যোগদান করতে না পেরে ফিরে যান। রোববার সকাল সাড়ে ১১টায় খুমেক হাসপাতালে ডা: সুজাত যোগদান করতে আসলে এ ঘটনা ঘটে।
এ ব্যাপারে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারি পরিচালক ডা: মিজানুর রহমান মিজান বলেন, ‘ডা: সুজাত আহমেদ সকাল সাড়ে ১১টায় হাসপাতালে উপ-পরিচালক হিসেবে যোগদান করতে আসেন। এ সময়ে হাসপাতালের সর্বস্তরের চিকিৎসকবৃন্দরা তাকে যোগদানে বাধা প্রদান করেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘সর্বস্তরের চিকিৎসকবৃন্দদের ভাষ্য ডা: সুজাত খুলনায় সিভিল সার্জন থাকা অবস্থায় ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট খুলনা জেনারেল হাসপাতালে করোনা পরীক্ষার ২ কোটি ৬১ লাখ টাকা আত্মসাতের ঘটনায় দুদকে মামলা হওয়ায় তাকে ওএসডি করা হয়েছিলো। এছাড়া তিনি আওয়ামী লীগের আমলে তিনি শেখ বাড়ির দোসর হিসেবে চিহিৃত ছিলো। তার বিরুদ্ধে এ ধরনের দুর্নীতি অভিযোগ থাকা সত্বেও তাকে এই হাসপাতালে ডিডি হিসেবে বদলী করায় হাসপাতালের দায়িত্বরত ডাক্তারদের ভাবমূর্তিক্ষুন্ন হওয়ার আশংকা রয়েছে। এছাড়া দুর্নীতিবাজরা আরও উৎসাহ পাবে। এ সব কারণে তাকে হাসপাতালের সর্বস্তরের চিকিৎসকরা তাকে যোগদান করতে বাধা প্রদান করেন। পরে তিনি হাসপাতাল থেকে চলে যান।’
এ ব্যাপারে ডা: সুজাত আহমেদ ঘটনার বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, আমার সাথে কারো কোন সমস্যা হয়নি। আমি আগামী মঙ্গলবার খুমেক হাসপাতালে যোগদান করবো।
জানা গেছে, ডা: সুজাত খুলনায় সিভিল সার্জন থাকা অবস্থায় সরকারি এক প্রজ্ঞাপনে ২০২৩ সালে ২৭ জুলাই তাকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে ওএসডি এবং আইএইচটির অধ্যক্ষ হিসেবে পদায়নের জন্য তার চাকরি স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগে ন্যাস্ত করার আদেশ দেওয়া হয়। এরপর থেকে তিনি ওএসডিতে ছিলেন। সম্প্রতি তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে উপ-পরিচালক হিসেবে বদলী করা হয়।
এ ব্যাপারে রোববার দুপুরে সাবেক খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ-সহকারী পরিচালক খন্দকার কামরুজ্জামান বর্তমানে বরিশাল জেলায় কর্মরত উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট খুলনা জেনারেল হাসপাতালে করোনা পরীক্ষার ২ কোটি ৬১ লাখ টাকা আত্মসাতের ঘটনায় ৬ জনের নামে আদালতে চার্জসিট প্রদান করা হয়েছে। মামলাটি বর্তমানে আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।
উল্লেখ্য, ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট খুলনা জেনারেল হাসপাতালে বিদেশগামী যাত্রী ও সাধারণ কোভিড-১৯ রোগীদের নমুনা সংগ্রহ করে তা পরীক্ষার জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের ল্যাবে প্রেরণ করা হতো। তবে ল্যাবে যে পরিমাণ নমুনা পাঠানো হতো তার থেকে রোগীর সংখ্যা কম দেখিয়ে টেস্টের ফির টাকা আত্মসাৎ করা হয়। ২০২০ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুলাই পর্যন্ত মোট ফি আদায় করা হয়েছিল ৪ কোটি ২৯ লাখ ৯১ হাজার ১০০ টাকা। তবে সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়া হয়েছিল ১ কোটি ৬৮ লাখ ৪৬ হাজার ৭০০ টাকা। বাকি ২ কোটি ৬১ লাখ ৪৪ হাজার ৪০০ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। এ ঘটনায় দুদকের খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ-সহকারী পরিচালক খন্দকার কামরুজ্জামান বাদী হয়ে ২০২১ সালের ১৮ নভেম্বর মামলা দায়ের করেন। ওই মামলার তদন্ত শেষে তিনি সিভিল সার্জন ডা. সুজাত আহমেদসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। আসামিরা হলেন- মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ল্যাব) প্রকাশ কুমার দাস, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ল্যাব) মো: রওশন আলী, ক্যাশিয়ার তপতী সরকার, আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা: এস এম মুরাদ হোসেন, তৎকালীন সময়ে দায়িত্ব পালন করা খুলনার সিভিল সার্জন ডা: নিয়াজ মোহাম্মদ ও সিভিল সার্জন ডা: সুজাত আহমেদ।
চার্জশিটে বলা হয়েছে, পরস্পর যোগসাজশে সরকারি রসিদ বইয়ের বাইরে ডুপ্লিকেট রসিদ বই ব্যবহার করে তারা ওই টাকা আত্মসাৎ করেন। মোটা অংকের ঘুষের বিনিময়ে ডা: সুজাত আহমেদ ওএসডি থেকে খুমেক হাসপাতালে উপ-পরিচালক হিসেবে বদলী হয়ে আসছেন বলে জনশ্রুত রয়েছে।
ঊআ-বিএস