আমাদের মানব জীবনে কলা গাছের একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। আমরা বিভিন্নভাবে কলা গাছের থেকে উপকার পেয়ে এসেছি যেরকম, কাঁচা কলা কে আমরা সবজি হিসেবে খেয়ে থাকি আবার পাকা কলা কে আমরা ফল হিসেবে খাই বা গ্রহণ করি।
এছাড়া কলা গাছের ভেতরের অংশ যেমন থোর বা কলা গাছের ফুল যেরকম মোচা আমরা সবই খেয়ে থাকি আর কলাপাতা বহু পৌরাণিক যুগ ধরে আমাদের খাবারের পাত্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
দক্ষিণপূর্ব এশিয়াতে সবথেকে বেশি কলা গাছ পাওয়া যায়। তবে এখন সারা বিশ্বে এই কলার প্রচুর চাহিদা হয়েছে এবং আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কলা একটি প্রয়োজনীয় খাদ্য, তাই আজ আমরা কলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে আলোচনা করব।
আসুন আমরা জেনে নিই ১০০ গ্রাম কলার পুষ্টিগত গুণাগুণ বা নিউট্রিশনাল ফ্যাক্ট,
- ক্যালোরি ৮৯%
- কার্বোহাইড্রেট ২২.৮ গ্রাম (ডায়েটারি ফাইবার ২.৬ গ্রাম)
- টোটাল ফ্যাট ০.৩৩ গ্রাম (স্যাচুরেটেড ফ্যাট ০.১ গ্রাম)
- প্রোটিন ১.০৯ গ্রাম
- সুগার ১২.২ গ্রাম
এছাড়াও আছে বিভিন্ন রকমের ভিটামিন এবং মিনারেল যেরকম,
- ভিটামিন A
- ভিটামিন C
- ভিটামিন B৬
- ভিটামিন E
- ভিটামিন K
- ক্যালসিয়াম
- আয়রন
- ম্যাগনেসিয়াম
- ফসফরাস
- পটাশিয়াম
- জিংক
- সোডিয়াম
- কপার
- সিলেনিয়াম ইত্যাদি।
কলা খাওয়ার উপকারিতা কি কি?
- কলা এমন একটি ফল যা খেলে খুব কম সময়ের মধ্যে আপনার শরীর ডাইজিস্ট বা হজম করতে পারে এবং যেহেতু কলাতে প্রচুর পরিমাণ ক্যালোরি থাকে তাই খুব সহজেই আপনার এনার্জিকে বা শক্তিকে বাড়িয়ে তোলে ফলে আপনার যে কোনো কর্ম ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় তাই সকালে কলা খাওয়ার উপকারিতা অনেক বেশি।
- পাকা কলা খাওয়ার উপকারিতা অনেক যেরকম, কলাতে ডায়েটারি ফাইবার থাকে যা আমাদের শরীরকে নানান ভাবে উপকার করে যেরকম ফাইবার আমাদের হজম ক্ষমতাকে বা ডাইজেস্টিভ সিস্টেমকে উন্নত করে ফলে আমাদের কোষ্ঠকাঠিন্য বা কনস্টিপেশনের প্রবলেম হয় না।
- কলাতে প্রচুর পরিমাণ পটাশিয়াম থাকে এবং এই পটাশিয়াম আমাদের শরীরে ব্লাড প্রেসার বা রক্ত সঞ্চালন কে নিয়ন্ত্রণে রাখে তার ফলে আমাদের হৃদয় ঘটিত রোগ কম হয়।
- কলাতে বিভিন্ন রকমের মিনারেল থাকে যেরকম ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, এবং আয়রন যা আমাদের শরীরের হাড় কে দৃঢ় ও শক্ত করতে সাহায্য করে।
- নিয়মিত কলা খাওয়ার উপকারিতা রয়েছে, দ্য আমেরিকান ডায়াবেটিস এসোসিয়েশন বলে, কলা নিয়মিত খেতে তার কারণ কলাতে থাকে ফাইবার। আমাদের রক্তে সুগারের পরিমাণ কম থাকলে বা খুব বেশি থাকলে ফাইবার সেই সুগারকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
- নিয়মিত কলা খেল আমাদের ইমিউনিটি সিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় কারণ কলাতে থাকে কিছু অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান যেগুলো আমাদের রোগের সাথে লড়তে সাহায্য করে এবং বিভিন্ন রোগের থেকে আমাদেরকে দূরে রাখে। তাই বাচ্চাদের কলা খাওয়ার উপকারিতা অনেক বেশি।
- পটাশিয়াম আমাদের কিডনির জন্য খুবই প্রয়োজনীয় এবং উপকারী এক উপাদান। আমাদের কিডনিকে সক্রিয় এবং ভালো রাখতে নিয়মিত কলা খাওয়া উচিত তার কারণ কলাতে মিনারেল হিসাবে প্রচুর পরিমাণ পটাশিয়াম থাকে।
- যারা নিয়মিত ব্যায়াম করেন এবং ক্রীড়াবিদ বা খেলাধুলার সাথে যুক্ত তাদের জন্য কলা একটি বিশেষ প্রয়োজনীয় ফল তার কারণ আমরা যখনই ওই ধরনের কার্য করে থাকি তখন আমাদের শরীরে প্রচুর পরিমাণ ক্যালোরির বা শক্তির প্রয়োজন হয় যা আমরা কলা থেকে পেয়ে থাকি।
কলা খাওয়ার নিয়ম বা কলা খাওয়ার সঠিক সময়?
- সবথেকে ভালো ও সঠিক সময় হল সকালে ব্রেকফাস্ট এর পরে খেতে পারেন।
- কলা দুপুরের খাবারের পরে বা লাঞ্চের পরেও খেতে পারেন।
- তবে কলা খালি পেটে বা রাতের বেলা না খাওয়াই ভালো।
কলা খাওয়ার অপকারিতা?
- রাতের বেলা বেশি পরিমাণ কলা খেলে আমাদের অনিদ্রার সমস্যা হতে পারে তার কারণ কলা আমাদের শরীরে এনার্জি বা শক্তিকে বাড়িয়ে দেয়।
- আমাদের যদি ঠান্ডা লেগে থাকে তবে কলা না খাওয়াই ভালো তার কারণ বেশি পরিমাণ কলা খেলে আমাদের ঠান্ডা লাগার প্রবণতা আরো বেড়ে যায়।
- ফাইবার আমাদের জন্য খুবই প্রয়োজনীয় একটি উপাদান যা আমরা কলাতে পেয়ে থাকি তবে খুব বেশি কলা খেলে আমাদের শরীরের ওজন বাড়তে পারে।
- কলাতে সুগার এবং কার্বোহাইড্রেট এর পরিমাণ অনেক বেশি থাকে তাই খুব বেশি কলা গ্রহণ করলে বা খেলে আমাদের দাঁতের সমস্যা হতে পারে তার কারণ খুব বেশি সুগার এবং কার্বোহাইড্রেট আমাদের দাঁতের জন্য ভালো না।
- বিভিন্ন মানুষের বিভিন্ন ফলে বা সবজিতে অ্যালার্জি থাকতে পারে তাই যদি কলা খেয়ে আপনাদের অ্যালার্জি বাড়তে থাকে তবে অবশ্যই কলা খাওয়া বন্ধ করতে হবে।
কলা বাড়িতে রাখার সঠিক পদ্ধতি?
বাজার বা মার্কেট থেকে কলা কিনে এনে পরিষ্কার কাপড়ে মুছে আমরা ফ্রিজে রাখতে পারি তার কারণ কলাতে খুব তাড়াতাড়ি পচন ধরে তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমাদের কিনে আনা কলা খেয়ে নেওয়া উচিত।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: কলা খাওয়ার পূর্বে আপনার ডাক্তারের সাথে একবার অবশ্যই কথা বলে নেবেন।