ঊষার আলো রিপোর্ট : কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলায় লবণ শ্রমিক দানু মিয়াকে অপহরণ করে পেকুয়ায় নিয়ে হত্যা এখন জেলাজুড়ে আলোচনায়। তার পরিবার যখন শোকাহত, তখন তাদের দুঃখ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে পুলিশের ভূমিকা। তাদের অভিযোগ, পরিবারের সদস্যদের মামলা না নিয়ে খুনিদের বাঁচাতে দানু মিয়ার ডিভোর্সি স্ত্রী রুজিনা বেগমকে বাদী সাজিয়ে মামলা করেছেন ওসি। অথচ পাঁচ বছর আগে দানু মিয়াকে তালাক দেওয়া রুজিনা বর্তমানে অন্যত্র সংসার করছেন।
দানু মিয়া মহেশখালীর বড় মহেশখালী ইউনিয়নের মাহারাপাড়া এলাকার বাসিন্দা। পেকুয়ার কলেজছাত্র জিহাদ হত্যা মামলায় উচ্চ আদালতের নির্দেশে স্থায়ী জামিনের জন্য ১০ ডিসেম্বর তিনি চট্টগ্রাম যাচ্ছিলেন। পথে তার গাড়ি আটকে দুর্বৃত্তরা দানু মিয়া ও তার সঙ্গী মুবিনকে অপহরণ করে। তাদের পেকুয়া সদরের একটি অজ্ঞাতস্থানে রাখা হয়। দিনভর চালানো হয় অমানবিক নির্যাতন। গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে পেকুয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে তাদের ফেলে যায় দুর্বৃত্তরা।
পুলিশ খবর পেয়ে দানু মিয়া ও মুবিনকে উদ্ধার করে পেকুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় সেখান থেকে দানু মিয়াকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছিল। পথে পটিয়ার ইন্দ্রপুল এলাকায় গাড়িতেই তার মৃত্যু হয়।
পারিবারিকভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, দানু মিয়ার বোন জোসনা আক্তার মামলার বাদী হবেন। জোসনা নিজেই চকরিয়া থানায় ১৪ জনকে আসামি করে এজাহার জমা দেন। তার দাবি, থানার ওসি মঞ্জুর কাদের ভূঁইয়া তাকে চারজন আসামির নাম বাদ দেওয়ার নির্দেশ দেন। এই চারজন হত্যায় সরাসরি জড়িত ছিলেন। ওসির নির্দেশ মানতে অস্বীকৃতি জানালে কৌশলে তাকে বাদ দিয়ে রুজিনা বেগমকে বাদী করা হয়।
জোসনা আক্তার অভিযোগ করেন, ‘রুজিনা আমার ভাইকে পাঁচ বছর আগে ডিভোর্স করেছেন। এখন তিনি কেনাখালী চরপাড়ার বাসিন্দা আবদুস সালামের ছেলে মাহমুদুল করিমের সঙ্গে সংসার করছেন। এই অবস্থায় তিনি কীভাবে মামলা করতে পারেন? এটা আসামিদের বাঁচানোর ষড়যন্ত্র। রুজিনা আসামিদের সঙ্গে যোগসাজশে মামলাটি বিক্রি করেছেন।’ জোসনা আরও বলেন, ‘আমি যে এজাহার জমা দিয়েছি, তাতে প্রধান অভিযুক্তরা ছিল। অথচ রুজিনা বেগমের করা মামলার এজাহার থেকে তাদের বাদ দেওয়া হয়েছে। প্রকৃত খুনিদের বাঁচাতে ওসি এই কাজ করেছে। আমার ভাইয়ের হত্যার বিচার পাব কিনা, তা নিয়ে আমরা শঙ্কিত।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে, চকরিয়া থানার ওসি মঞ্জুর কাদের ভূঁইয়া বলেন, জোসনা আক্তার অনেক নিরীহ ব্যক্তিকে আসামি করার চেষ্টা করেছেন। এসব নিরীহ ব্যক্তিদের নাম বাদ দিতে বলেছিলাম। কিন্তু তিনি শুনেননি। তাই ঊর্ধ্বতনদের নির্দেশে তার এজাহার গ্রহণ করা হয়নি। পরে দানু মিয়ার স্ত্রী রুজিনা বেগম বাদী হয়ে ১১ জনকে আসামি করে মামলা করেছেন।
দানু মিয়াকে ডিভোর্স দেওয়া রুজিনা কি করে বাদী হন জানতে চাইলে তিনি বলেন, তার ডিভোর্স হয়নি। আর মামলার বাদী আমি নই, ঊর্ধ্বতনদের নির্দেশে নির্ধারণ করা হয়েছে।
ঊষার আলো-এসএ