অধ্যক্ষের দূর্নীতি-অনিয়মের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ায় বিভিন্নভাবে হয়রানির অভিযোগ
খুলনা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ইন্সটেক্টর মোঃ মারুফ আহমেদ সন্ত্রাসীদের হামলা গুরুতর আহত হয়ে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ১৯ ফেব্রুয়ারী সন্ধ্যায় তিনি তেলিগাতী বাইপাসে হাটতে বের হলে মোটরসাইকেল যোগে দুই যুবক অতর্কিতভাবে তার উপর হামলা চালায়।
এ সময় তিনি জীবন বাঁচাতে চিৎকার দিলে পার্শবর্তিরা এগিয়ে আসল সন্ত্রসীরা মোটরসাইকেল নিয়ে পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে তার সহকর্মীরা হসপাতালে ছুটে যান। এ সময় তারা এ ঘটনার জন্য অধ্যক্ষ কাজী বরকতুল ইসলামকে দায়ী করেন।
তাদের অভিযোগ অধ্যক্ষের বিভিন্ন দূর্ণীতি অনিয়মের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট লিখিত অভিযোগ দেওয়ায় প্রতিষ্ঠানের ঐ সকল শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের হয়রানিমূলক হুমকি ধামকির অংশহিসাবে অধ্যক্ষ বহিরাগত সন্ত্রাসী দিয়ে এ হামলা চালিয়েছে। তাদের অভিযোগ সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নিরবতায় এই অঞ্চলের সুনামধন্য ঐহিত্যবাহী প্রতিষ্ঠানটি এবং প্রতিষ্ঠানের কর্মরতরা আজ হুমকির মুখে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। এদিকে শিক্ষকের উপর হামলার ঘটনায়্ এবং প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ সামগ্রী প্রদান না করায় গতকাল ২০ ফেব্রæয়ারী সকালে তারা অধ্যক্ষ কাজী বরকতুল ইসলামকে তার কক্ষে অবরুদ্ধ করে রাখে। দিনভর প্রতিষ্ঠানে উত্তেজনা বিরাজ করতে দেখাগেছে।
জানাগেছে, খুলনা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের আর.এ.সি বিভাগের ইন্সটেক্টর মারুফ আহমেদ প্রতিদিনের ন্যায় ১৯ ফেব্রæয়ারী সন্ধ্যায় তেলিগাতী বাইপাসে হাটতে বের হয়। তিনি সড়কের কিছুদূর যাওয়ার পর ফাঁকা স্থানে পৌছালে একটি মোটরসাইকেল দুই যুবক তার পথরোধ করে তাকে হামলা চালায়। জীবন বাঁচাতে তিনি চিৎকার করলে পার্শবর্তিরা এগিয়ে আসলে সন্ত্রসীরা মোটরসাইকেল যোগে পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। চিকিৎসক জানিয়েছে তার বামপায়ে ফেকচার হয়েছে অপরেশন করতে হতে পারে তবে তিনি শংকামুক্ত। খবর পেয়ে আহত মারুফ আহমেদের সহকর্মীরা হাসপাতালে তাকে দেখতে ছুটে যান। এ সময় তারা বলেন অধ্যক্ষ কাজী বরকতুল ইসলামের বিভিন্ন দুর্নীতি-অনিয়মের প্রতিবাদ করায় এবং তার বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট লিখিত অভিযোগ দেওয়ায় অধ্যক্ষ ক্ষিপ্ত হয়ে অধ্যক্ষ প্রতিষ্ঠানের কর্মরতদের বিভিন্ন ভাবে হয়রানি করতে একের পর এক শোকজ, হুমকি-ধামকি প্রদান করে আসছিলেন।
তারা জানায়, এর আগে অধ্যক্ষ তার অধিনস্তদেরকে মারধর করেছে। একজনকে বহিরাগত সন্ত্রাসী দিয়ে অপহরণ করার চেষ্টা করেছে। সর্বশেষ প্রতিষ্ঠানের ইন্সটেক্টর মারুফ আহমেদকে তিনি বহিরাগত সন্ত্রাসী দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা করায়। সহকর্মীরা জানায় অধ্যক্ষ কাজী বরকতুল ইসলামের কাছে প্রতিষ্ঠান এবং এখানের কর্মরতরা কোন প্রকার নিরাপদ নয়। আমরা সকলে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি প্রতিষ্ঠান এবং কর্মরতদের রক্ষায় অবিলম্বে তাকে প্রত্যাহার করা জরুরী হয়ে পড়েছে।
এদিকে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকের উপর হামলার খবর ছড়িয়ে পড়লে প্রতিষ্ঠানে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। শিক্ষকের উপর হামলা এবং শিক্ষার্থীদেরকে প্রশিক্ষণের উপকরণ সামগ্রী প্রদান না করায় গতকাল মঙ্গলবার সকালে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অধ্যক্ষ কাজী বরকতুল ইসলামকে তার কক্ষে অবরুদ্ধ করে রাখে। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে পড়লে শিক্ষকদের হস্থক্ষেপে শিক্ষার্থীদেরকে শান্ত করে অধ্যক্ষের কক্ষের বাহিরে নিয়ে যায়। পরে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হলে অধ্যক্ষের পক্ষে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বৈঠকে বসেন।
এ সময় আন্দোলনকারীরা জানায়, প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ ২০০৭ সালে চাকুরীতে যোগদানের পর তার বিরুদ্ধে নারী কেলেঙ্গারী, দুর্ণীতিসহ নানা অভিযোগে কর্মকালীন ১৬ বছরে ৭/৮ বার বদলী হয়েছে। বদলী গুলো তার স্বাভাবিক ছিল না, এই প্রতিষ্ঠানে আসার পর থেকে একই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে অধ্যক্ষ কাজী বরকতুল ইসলামের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানের ৪০ জন শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীর লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটি গত ২ জানুয়ারী প্রতিষ্ঠানে এসে তাদের তদন্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে।