UsharAlo logo
রবিবার, ২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গবেষণায় বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ায় র‌্যাংকিংয়ে উন্নতি হয়েছে

usharalodesk
জুন ৮, ২০২৪ ৫:৩১ অপরাহ্ণ
Link Copied!

ঊষার আলো রিপোর্ট : সম্প্রতি যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা ও গবেষণা সংস্থা কোয়াককোয়ারেলি সায়মন্ডসের (কিউএস) শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় চমক দেখিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি)। এবার বিশ্ববিদ্যালয়টির অবস্থান ৫৫৪তম।

গতবার সেরা এক হাজার বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ঢাবির অবস্থান ছিল ৬৯১ থেকে ৭০০ রেঞ্জের মধ্যে। এবারই প্রথম তা ডিঙিয়ে ওপরের স্থান অধিকার করেছে প্রতিষ্ঠানটি। র্যাংকিংয়ে বড় পরিবর্তনের কারণ নিয়ে সঙ্গে কথা বলেছেন ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল।

তার মতে, গবেষণায় বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের র‌্যাংকিংয়ের উন্নতি হয়েছে। আর এ জন্য বিশ্ববিদ্যালয়টি করেছে গবেষণা নীতিমালা, সংস্কার করেছে গবেষণায় বরাদ্দ দেওয়ার নীতিমালাও। একই সঙ্গে শিক্ষকদের পদোন্নতির নীতিমালায়ও জুড়ে দেওয়া হয়েছে বিশেষ শর্ত।

তিনি কথা বলেছেন, শতবর্ষের পুরোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা চ্যালেঞ্জ নিয়ে। আজকে সাক্ষাৎকারটির চুম্বকাংশ তুলে ধরা হলো। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মাহাদী হাসান।

বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাংকিংয়ে উন্নতি করার জন্য উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) থাকা অবস্থায়েই কাজ শুরু করেছেন উল্লেখ করে বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল বলেন, আমি উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) থাকাকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো একটি গবেষণা নীতিমালা তৈরি করেছিলাম। এতে শিক্ষকরা কীভাবে গবেষণা প্রপোজাল তৈরি করবেন, সে বিষয়ে একটি কাঠামো তৈরি করে দেওয়া হয়েছিল। কী কী শর্ত পূরণ করলে তারা গবেষণার বরাদ্দ পাবেন এবং কীভাবে সেটি ব্যয় করবেন তার দিকনির্দেশনা ছিল।

এ ছাড়া যে গবেষণার জন্য অর্থ বরাদ্দ পাবেন, গবেষণা শেষে সেটি প্রকাশনা করা বাধ্যতামূলক করে দেওয়া হয়েছিল। এর ফলে আন্তর্জাতিক জার্নালে আমাদের গবেষণার পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। গত এক বছরে আমাদের প্রতিটি শিক্ষকের মাথাপিছু সাইটেশন দুইয়ের বেশি হয়েছে। যেটা আমাদের আন্তর্জাতিক ফোকাস বাড়াতে সাহায্য করেছে।

গবেষণায় অর্থে অপচয় হ্রাস করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের আগে গবেষণায় অনেক অর্থের অপচয় হতো। এখন আমরা এ জায়গায় একটা শৃঙ্খলা নিয়ে আসার চেষ্টা করছি। এর ফলে সরকার যে পরিমাণ অর্থ গবেষণার জন্য বরাদ্দ দেন, তা দিয়েও অনেক ভালো গবেষণা করা সম্ভব। আমরা এখন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেটকেও সুশৃঙ্খল করার জন্য নীতিমালা করেছি।

এর আগে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা সেন্টারগুলো গবেষণার জন্য যে বরাদ্দ পেত তা ব্যয় করতে পারত না। ফলে আমরা এখন নিয়ম করে দিয়েছি যে, তারা আগে গবেষণার জন্য প্রোপজাল তৈরি করে বিশ্ববিদ্যালয়ে জমা দেবেন। এরপর এটি যদি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক গৃহীত হয় তাহলে তারা এর জন্য অর্থ বরাদ্দ পাবে, এর আগে নয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্যাটেন্ট বিক্রি করতে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা আগামী বছর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে আরও নতুন ইনোভেশন নিয়ে আসছি। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়-ইন্ডাস্ট্রি কোলাবরেশন করে স্টার্টআপ কোম্পানি করব। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচিতি আরও বেড়ে যাবে। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের আটলুকের ওপর র্যাংকিংয়ে ৩০ নাম্বার রয়েছে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবরেটরিগুলো উন্নত করার জন্য আমরা সরকারের কাছে এক হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছি। এর মাধ্যমে আমরা আধুনিক গবেষণা করে প্যাটেন্ট ডেভেলপমেন্ট করতে পারব। আমরা পরিকল্পনা করছি প্যাটেন্ট বিক্রি করার। আসলে যে দেশগুলো অথনৈতিকভাবে উন্নত হয়েছে, তারা শিক্ষা ও গবেষণার মাধ্যমেই উন্নতি করেছে। উদাহরণস্বরূপ— জাপান, কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র।

বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণার জার্নালগুলো ঢেলে সাজানো হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক জার্নাল রয়েছে। এগুলোকে আমরা বিখ্যাত জার্নালের আদলে ঢেলে সাজাচ্ছি। আগে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে গবেষণা প্রকাশনার কাজগুলো করা হতো। এখন আমরা পুরো প্রক্রিয়াটিকে অনলাইন নির্ভর করছি অর্থাৎ অনলাইলে সাবমিশন করবে এবং ইভ্যালুয়েশনও হবে অনলাইনে। এর ফলে নিম্নমানের গবেষণা প্রকাশ এবং চৌর্যবৃত্তি করে গবেষণা প্রকাশ করার আর সুযোগ থাকবে না। এ ছাড়া আমাদের শিক্ষকরা যখন প্রমোশনের জন্য আমাদের কাছে আসছে, তখন তাদের ইমপ্যাক্ট জার্নালে গবেষণা থাকার শর্ত পূরণ করতে হচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্জন ওয়েবসাইটে প্রকাশিত করার বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা গবেণা মেলা করেছি এবং ইনোভেশন মেলা করেছি। এসব কর্মকাণ্ডের সব কিছু আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে আপলোড করা হয়েছে।

এ ছাড়া আমরা নিয়ম করে দিয়েছি কেউ যদি কোনো সেমিনার, গবেষণা সংক্রান্ত কনফারেন্স করে, সে সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে আপলোড করতে হবে। অন্যথায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ওই প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করবেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পাশাপাশি শিক্ষার্থীরাও যেন গবেষণার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে পারে, সে জন্য মাস্টার্স পর্যায়ে ৩০ শতাংশ শিক্ষার্থী যাতে থিসিস করে সেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এতে করে একজন সুপারভাইজারের আন্ডারে থেকে শিক্ষার্থী যেন হাতে-কলমে গবেষণার কাজ শিখতে পারে।

র‌্যাংকিংয়ে  আরও উন্নতি করতে যেসব চ্যালেঞ্জ রয়েছে, সে বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ হচ্ছে শিক্ষার্থীদের একটি শৃঙ্খলার মধ্যে নিয়ে আসা। আমাদের শিক্ষার্থীদের সব কর্মকাণ্ড হলকেন্দ্রিক, কিন্তু হলগুলোতে পড়ার পরিবেশ নেই। এখন তারা যদি হলেই পড়াশোনা না করতে পারে, তাহলে কোথায় করবে। আমরা এখানে গ্র্যাজুয়ালি একটা পরিবর্তন নিয়ে আসতে চাচ্ছি। আমি একজন উপাচার্য হিসেবে মনে করি এটা আমার এবং আমার সহকর্মীদের একটা নৈতিক দায়িত্ব।

পাশাপাশি শিক্ষার্থীদেরও আমাদের সাহায্যে এগিয়ে আসতে হবে। এ ছাড়া আমাদের শিক্ষার্থীদের প্রায় ৮০ শতাংশ মফস্বলের। তাদের অনেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার জন্যই প্রথমে ঢাকায় আসেন। সেখানে তাদের জন্য আধুনিক জ্ঞানার্জনের সুযোগ করে দিতে হবে। তাদের জন্য শিক্ষকদের এগিয়ে আসতে হবে। এ জায়গায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সম্পর্কও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটি আরও উন্নয়নের জন্য আমাদের শিক্ষকদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।

এ ছাড়া শিক্ষকদের শুধু প্রেশার দিয়ে সব কিছু করা যায় না। প্রেশারের সঙ্গে তাদের ইনসেনটিভের ব্যবস্থাও করতে হবে। আমাদের একটি লাইব্রেরি রয়েছে কিন্তু টাকার অভাবে আমরা সেখানে আধুনিক জ্ঞান আহরণের সুযোগ করে দিতে পারছি না। পাশাপাশি আমরা নতুন নীতিমালা করছি। এতেও শিক্ষকদের মানিয়ে নেওয়া একটা চ্যালেঞ্জ। কারণ তারা দীর্ঘ দিন গতানুগতিক একটা পদ্ধতির মধ্যে কাজ করেছ। তারপরও আমরা আশা করি অল্প কিছু সময়ের মধ্যেই আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তার চ্যালেঞ্জগুলো অতিক্রম করে আরও ভালো কিছু অর্জন করবে।

ঊষার আলো-এসএ