UsharAlo logo
বুধবার, ১৫ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১লা মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঘাতকদের পা ধরেও বাঁচানো যায়নি ফেনীর মাসুদকে

usharalodesk
আগস্ট ১১, ২০২৪ ১০:৫১ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

ঊষার আলো রিপোর্ট : কোটাবিরোধী আন্দোলন চলাকালে ফেনীর মহিপালে ৪ আগস্ট সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের চালানো গুলিতে নিহত হন দাগনভূঞা উপজেলার উত্তর জায়লস্কর গ্রামের মীর বাড়ির মো. সরোয়ার জাহান মাসুদ (২২)।

তিনি প্রবাসী মো. শাহাজাহান টিপুর বড় ছেলে এবং ফেনী সরকারি কলেজের ডিগ্রি ১ম বর্ষের ছাত্র ছিলেন। মাসুদকে গুরুতর আহত অবস্থায় দাগনভূঞা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পথে বেকেরবাজার নামক স্থানে ব্যারিকেড দিয়ে তাকে আবার বেদম পিটুনি দিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে ঘাতকরা। তাকে হাসপাতালে নেওয়ার জন্য ঘাতকদের পা ধরেও রক্ষা হয়নি।

নিহত মাসুদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তার মৃত্যুতে তার বাবা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে শুধু বুক চাপড়াচ্ছেন।

যুগান্তরকে তিনি বলেন, দেশ কি মগের মুল্লুক হয়ে গেছে! একটি স্বাধীন জাতির নিরাপত্তাহীন জীবন কাম্য নয়। আমার মাসুদকে আল্লাহ শহিদি মর্যাদা দিয়ে জান্নাত দিন। ছেলে তো পাব না। আমার ছেলেসহ হাজার হাজার ছেলের রক্তের বিনিময়ে যেন শান্তি আসে এই আশা করছি।

মা বিবি কুলসুমের কান্না থামছেই না। বুক চাপড়ে শুধু বলছেন-‘আমার কইলজা মাসুদ তুই কই’। মায়ের আহাজারিতে স্বজনসহ পাড়া-পড়শিরা চোখের জল ফেলছেন। তিনি বলছিলেন-‘কেন আঁর মাসুদের হত্যা কইরলো। দেশকি ফেরাউনের দেশ ছিল?’ বড় ছেলের ছবি মোবাইলে দেখে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন তিনি।

নিহত মাসুদের মেজো ভাই দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আল সামির বলেন, ঘটনার দিন আমিও মিছিলে ছিলাম। আমার ভাই ঢাকা থেকে বাড়িতে এসেই দেশরক্ষার মিছিলে শামিল হয়। আমরা কাছাকাছি থাকলেও হামলার সময় আলাদা হয়ে যাই।

এর কিছুক্ষণ পর আমাকে কল দিয়ে জানায় আমার ভাই গুলিবিদ্ধ অবস্থায় মহিপাল কলেজের সামনে পড়ে আছে। পরে আমরা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পথে বেকেরবাজারে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মামুনের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ দলীয় ক্যাডাররা আমাদের আটকে আবার পিটুনি দেয়। আমাকে লাথি কিলঘুসি দিলে আমি তাদের পা ধরে কান্নাকাটি করেছি। এমন নিষ্ঠুরতা, পাশবিকতা, বর্বরতা ও নির্মমতা মানুষ করতে পারে-ভাবলে এখনও গা শিউরে উঠে।

মাসুদের সহপাঠী সায়েদ হোসেন বলেন, মাসুদকে আমরা হাসপাতালে আনার সময় দাগনভূঞার বেকেরবাজারে পথরোধ করে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। সেখানে ৩০-৫০ জন ছাত্রলীগ-যুবলীগের ক্যাডার আমাদের সিএনজিকে যেতে দিচ্ছিল না। আমাকেসহ অন্যদের এলোপাতাড়ি মারধর করে তারা। পরে কোনোরকমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে ডাক্তার মাসুদকে মৃত ঘোষণা করেন।

লাশ বাড়িতে নিয়ে এলে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। এই নির্মম অবস্থায়ও মাসুদের লাশ রাতেই দাফন করার জন্য অনবরত ফোন করে ঘাতকরা বাড়ি জ্বালিয়ে দেবে বলে হুমকি দেয়।

মাসুদের প্রবাসী বাবা মো. শাহাজাহান বলেন, দেশরক্ষা করতে গিয়ে আমার নিরস্ত্র ছেলেকে ঘাতকরা নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করেছে। ফেনীর জনপদে ছাত্রদের ওপর গুলি করা হয়েছে। আমি চাই আমাদের দেশে এমন পরিস্থিতি যেন আর না আসে।

ঊষার আলো-এসএ