UsharAlo logo
বুধবার, ১১ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৭শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

জবির ‘আয়নাঘরের’ হোতা মনিরের যত অপকর্ম

usharalodesk
আগস্ট ১৪, ২০২৪ ৫:০৫ অপরাহ্ণ
Link Copied!

ঊষার আলো রিপোর্ট : শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে হামলা, হুমকির অভিযোগে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা কমিটির সভাপতি আব্দুল কাদের ওরফে কাজী মনিরকে বরখাস্তের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। হামলা, হুমকি-ধমকি, লুটপাট ও চাঁদাবাজির সুষ্ঠু তদন্ত করে তার বিচারের দাবিও জানিয়েছে তারা।

মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সভাকক্ষে কোষাধ্যক্ষ, বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভাগের চেয়ারম্যানদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের এক বৈঠকে এ দাবি জানান তারা।

আব্দুল কাদের ওরফে কাজী মনির বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা সমিতির সভাপতি।  জবি শাখা ছাত্রলীগের রিপন-সাঈদ কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন তিনি।

জানা যায়, দলীয় প্রভাব খাটিয়ে ও তার সঙ্গে তোলা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি দেখিয়ে ক্যাম্পাসের আশপাশের বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে চাঁদাবাজির অভিযোগও রয়েছে কাজী মনিরের বিরুদ্ধে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে তার নেতৃত্বে অসংখ্য কর্মকর্তা সরাসরি ভূমিকা রাখেন। এছাড়া কোটা আন্দোলনকারী জবি শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাস ছাড়া করার হুমকি দেন তিনি।

২০১৬ সালে হলে আন্দোলনকারীদের প্রক্টর অফিসে টর্চার করা অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ওই সময় তিনি প্রক্টর অফিসকে অঘোষিত আয়নাঘর বানিয়ে রেখেছিলেন বলে অভিযোগ করেন শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তারা। তার দুর্নীতি, অপকর্ম নিয়ে বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হলেও প্রতিবারই নিষ্ক্রিয় থেকেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন প্রভাবশালী কর্মকর্তা ও শিক্ষকের আনুকূল্য কাজী মনির এসব অপকর্ম করে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ রযেছে।

এদিকে কাজী মনিরসহ তার দলবল বর্তমানে আত্মগোপনে আছেন বলে জানা যায়। অভিযোগের বিষয়ে জানতে তাকে একাধিকবার মোবাইলফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেন নি। শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির পর ক্যাম্পাসে আর দেখা যায়নি তাকে।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সক্রিয় বিরোধিতা

কোটাবিরোধী আন্দোলনে থাকা শিক্ষার্থীদের সরাসরি ও অনলাইনে হুমকি-ধমকি দেন তিনি। তার নেতৃত্বে বিশ্বিবদ্যালয়ের আরও অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে কোটা আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে মাঠে ভূমিকা পালন করেন কাজী মনির। সর্বশেষ শেখ হাসিনার পতনের আগের দিন ৪ আগস্ট ক্যাম্পাসে আয়োজিত মানববন্ধনে কোটা আন্দোলনকারীদের জামাত শিবিরের এজেন্ট বলে সম্বোধন করেন। নিজের শেষ রক্ত বিন্দু পর্যন্ত কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের প্রতিরোধ করার হুশিয়ারীও দেন তিনি।

চাঁদাবাজির একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ

ক্যাম্পাসের সামনে থাকা সদরঘাটগামী বাস ব্যবসার সঙ্গেও তার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। তাই শিক্ষার্থীদের বিরোধীতা সত্ত্বেও ক্যাম্পাসের সামনে থেকে বাস স্ট্যান্ড সরানো যাচ্ছে না বলেও অভিযোগ রয়েছে। দলীয় প্রভাব খাটিয়ে বিশ্বিবদ্যালয়ের সামনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, সদরঘাট, ইসলামপুরের কাপড়ের দোকান থেকে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ কাজী মনিরের বিরুদ্ধে।

দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজে লুটপাট

বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পত্তি কর্মকর্তা কামাল হোসেন সরকারের সঙ্গে যোগসাজশে নতুন ক্যাম্পাস প্রকল্পের জমি বেহাত করে আর্থিক কেলেঙ্কারির অভিযোগ রয়েছে কাজী মনিরের বিরুদ্ধে। তাদের সঙ্গে কয়েকজন স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিও জড়িত।

অভিযোগ রয়েছে, প্রভাবশালী এই চক্রের প্রশ্রয়দাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ট্রেজারার অধ্যাপক ড. কামালউদ্দীন আহমদ। দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের নলকূপ স্থাপনের অর্থ আত্মসাত করেন তিনি। দ্বিতীয় ক্যাম্পাসে জমিতে মাছ চাষ, মাটি বিক্রি করে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ কাজী মনিরের বিরুদ্ধে।

শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তাদের হেনস্তা 

২০১৬ সালে হল আন্দোলনের সময় প্রক্টর অফিসের সেকশন অফিসারের দায়িত্বে ছিলেন কাজী মনির। তার বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের প্রক্টর অফিসে ধরে নিয়ে শিবির ট্যাগ দিয়ে টর্চার করা ও পুলিশে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তা সমিতির সভাপতি ও ক্ষমতাসীন দলের প্রভাব খাটিয়ে অসংখ্য কর্মকর্তা-কর্মচারীকে শারীরিক মানসিকভাবে হেনস্তা করেছেন তিনি। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ অধ্যাপককেও হেনস্তার অভিযোগ রয়েছে কাজী মনিরের বিরুদ্ধে।

এ বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের উপদেষ্টা সাজ্জাদ হোসেন মুন্না বলেন, শুধু এখন না ২০১৬ সালে আমরা যখন হল আন্দোলন  করেছিলাম তখন এই কাজী মনিরের নেতৃত্বে আমি আমাদের পাঁচজনকে গেটের সামনে বসে গলা চেপে ধরেছিলো কেনো আমরা হল আন্দোলনের জন্য ক্যম্পাসের সামনে অবস্থান নিয়েছি। আমি বলবো জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করে তাহলে যেন সর্বপ্রথম এই কাজী মনিরের নামটা থাকে।

ঊষার আলো-এসএ