ঊষার আলো রিপোর্ট : হল প্রভোস্টের কাছে ‘জার্সি দাবি করে’ না পাওয়ায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব আব্দুল লতিফ হলে ভাঙচুর চালিয়েছে হল শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এসময় তারা প্রভোস্ট কক্ষের নামফলক তুলে ফেলে এবং হলের ডাইনিং কক্ষ, সিসিটিভি ক্যামেরা, ডিজিটাল ঘড়ি ও অতিথিকক্ষ ভাঙচুর করে। সোমবার দুপুর ১টা থেকে বিকাল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত হল গেটে তালা লাগিয়ে এ কাণ্ড করে তারা।
হল সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার সূত্রপাত হলের ডাইনিংয়ে খাবারের মধ্যে সিগারেটের খোসা পাওয়াকে কেন্দ্র করে। সোমবার দুপুরের খাবারে সিগারেটের খোসা পান ছাত্রলীগ কর্মী মনির হোসেন। ঘটনাটি জানাজানি হলে বিক্ষোভ শুরু করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তবে মুহূর্তেই সেই আন্দোলনের নেতৃত্ব চলে যায় ছাত্রলীগের হাতে। সাধারণ শিক্ষার্থীসহ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হলের প্রধান ফটকে তালা দিয়ে ভেতরে অবস্থান নেয়। এসময় তারা হল প্রভোস্টের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দেয়। পরে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হলের প্রভোস্ট কক্ষের নামফলক তুলে ফেলেন এবং তালা ভেঙে নতুন তালা ঝুলিয়ে দেয়য়। এ সময় তারা হলের ডাইনিং কক্ষ, সিসিটিভি ক্যামেরা ও অতিথিকক্ষ ভাঙচুর করে। ঘটনার এক পর্যায়ে হল প্রভোস্ট সেখানে উপস্থিত হলে ছাত্রলীগ নেতারা তাকে হেনস্তা করে বলে অভিযোগ করেছেন প্রভোস্ট অধ্যাপক এএইচএম মাহবুবুর রহমান।
এ ঘটনায় নেতৃত্ব দেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ইমরান হোসেন, হল শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি তৌহিদুল ইসলাম ও সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুদুর রহমান। তাদের মধ্যে ইমরান ও মাসুদুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিবের অনুসারী। অন্যদিকে তৌহিদুল ইসলাম সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবুর অনুসারী।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আগামীকাল ২৮ মে থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তঃহল অ্যাথলেটিক্স শুরু হবে। সেই প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার সুযোগ দিতে গত দুদিন আগে হল ছাত্রলীগের কয়েকজন প্রাধ্যক্ষের কাছে খেলোয়াড়দের একটা তালিকা পাঠায়। তবে তা গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানান হল প্রভোস্ট। এরপর গতকাল রোববার আবার শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি তৌহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে কয়েকজন এসে ছাত্রলীগের দুপক্ষের জন্য ১০টি করে মোট ২০টি জার্সি দাবি করেন। তবে হল প্রভোস্ট সেই দাবিও মেনে নেননি। ছাত্রলীগের সেই দাবি মেনে না নেওয়ায় তারা হলে এই তুলকালাম কাণ্ড চালান।
খাবারে সিগারেটের খোসার বিষয়ে ডাইনিং পরিচালক শফিকুল ইসলাম দুলাল বলেন, তরকারিতে সিগারেটের খোসাটি কোনো শিক্ষার্থীই উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ফেলেছে। রান্নার স্থানটি আমরা যথেষ্ট পরিচ্ছন্ন রাখি। রান্না শেষে আমি নিজেই সেই খাবার যাচাই করি। তাই এমন ভুল হওয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না।
অভিযোগের বিষয়ে ছাত্রলীগ নেতা তৌহিদুল ইসলাম বলেন, অ্যাথলেটিক্স খেলার সাথে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। এ ব্যাপারে হল প্রভোস্টের সাথে আমাদের কোনো কথা হয়নি। তিনি দায়িত্বশীল জায়গায় থেকে স্বনামধন্য একটি ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে বিতর্কিত করার উদ্দেশ্যে এরকম কুরুচিপূর্ণ মিথ্যাচার করেছেন।
এ বিষয়ে ছাত্রলীগ নেতা ইমরান হোসেন বলেন, হলে কে বা কারা ভাঙচুর চালিয়েছে সেটি আমার জানা নেই। তবে শিক্ষার্থীদের দাবির সঙ্গে একাত্মতা জানিয়ে আমি সেই আন্দোলনের সঙ্গে ছিলাম।
ছাত্রলীগ নেতা মাসুদুর রহমান বলেন, আজকের হলের আন্দোলনটি ছিল মূলত সাধারণ শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলন। এ ব্যাপারে ছাত্রলীগের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। ভাঙচুরের অভিযোগটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু বলেন, আজকের আন্দোলনটি সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ছিল। এর সঙ্গে ছাত্রলীগের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। আর হল প্রভোস্টের কাছে ছাত্রলীগের দাবির বিষয়টি আমি অবগত না।
এ বিষয়ে হল প্রভোস্ট অধ্যাপক এএইচএম মাহবুবুর রহমান বলেন, এসব ঘটনা সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের চলতি বছরের আন্তঃহল ক্রীড়া প্রতিযোগিতা শুরু হবে আগামীকাল (মঙ্গলবার)। সেজন্য গত দুদিন আগে ছাত্রলীগের কয়েকজন আমার কাছে একটা খেলোয়াড়ের তালিকা পাঠায় এবং সে তালিকা অনুযায়ী খেলোয়াড় নিতে বলেন। কিন্তু আমি তা গ্রহণে অপারগতা প্রকাশ করি। এরপর গতকাল আবার তারা ছাত্রলীগের দুপক্ষের জন্য ২০ টি জার্সি দাবি করেন। কিন্তু এই বিষয়ে উপাচার্যের নিষেধ থাকায় আমার পক্ষে এটা সম্ভব না। তাদের এসব দাবি মেনে না নেওয়ায় তারা নেতাকর্মীদের নিয়ে আজকে এমন আন্দোলন করেছে।
তিনি আরও বলেন, আন্দোলনের সময় উপস্থিত হলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আমার সাথে যে অসদাচরণ করেছেন এটা একজন পিতা সমতুল্য মানুষের সঙ্গে করা একজন শিক্ষার্থীর পক্ষে সম্ভব না। বলতে গেলে তারা আমাকে হেনস্তা করেছেন। এ ঘটনার পর যদি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের সহযোগিতা না করে তাহলে আমাদের পক্ষে দায়িত্বে থাকা সম্ভব না।
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, বিষয়টি নিয়ে আগামীকাল ছাত্র-উপদেষ্টা, প্রক্টরসহ সংশ্লিষ্টরা আলোচনায় বসবেন। এরপর উপাচার্য সিদ্ধান্ত নিবেন।
ঊষার আলো-এসএ