UsharAlo logo
সোমবার, ২৬শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১২ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

জুলাই গণহত্যার আনুষ্ঠানিক বিচার প্রক্রিয়া শুরু

ঊষার আলো রিপোর্ট
মে ২৫, ২০২৫ ১২:৩২ অপরাহ্ণ
Link Copied!

রাজধানীর চানখাঁরপুলে গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময় ছয়জনকে হত্যার ঘটনায় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান হাবিবসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে জুলাই বিপ্লবের প্রথম মামলার আনুষ্ঠানিক বিচার প্রক্রিয়া শুরু হলো।

গত ২০ এপ্রিল এ মামলায় আটজনকে অভিযুক্ত করে একটি পূর্ণাঙ্গ তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। সেই প্রতিবেদন রোববার ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিকভাবে দাখিল করার মধ্য দিয়ে এ বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়।

অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন- ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, সাবেক যুগ্ম কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী, রমনা অঞ্চলের সাবেক অতিরিক্ত উপ-কমিশনার শাহ আলম ও মো. আখতারুল ইসলাম, রমনা অঞ্চলের সাবেক সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ ইমরুল, শাহবাগ থানার সাবেক পরিদর্শক মো. আরশাদ হোসেন, কনস্টেবল মো. সুজন হোসেন, ইমাজ হোসেন ও মো. নাসিরুল ইসলাম। তাদের মধ্যে শেষের চারজন বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন, বাকিরা পলাতক রয়েছেন।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে চানখাঁরপুল হত্যাকাণ্ডের নির্দেশদাতা হিসাবে চিহ্নিত হয়েছেন। শেখ হাসিনার নির্দেশ বাস্তবায়ন করেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সাবেক আইজিপি।

এদিকে আশুলিয়ায় ৫ আগস্ট ছয়জন আন্দোলনকারীকে গুলি করে হত্যার পর তাদের লাশ পোড়ানোর ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্তও শেষ হয়েছে। তদন্ত সংস্থা আজ সেই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন প্রসিকিউশনের কাছে দাখিল করবে বলে জানা গেছে।

রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গত ২১ এপ্রিল তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় তদন্ত সংস্থা। ৯০ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদনটি ১৯৫ দিনে তৈরির কাজ সম্পন্ন হয়। এতে মোট ৭৯ জন সাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়। প্রসিকিউশনের একটি সূত্র জানায়, ফরমাল চার্জে ৭৯ জন সাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণ করা হলেও ফরমাল চার্জে ৩২ জন সাক্ষী চূড়ান্ত করা হয়ছে।

এদিকে প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে চিফ প্রসিকিউটর ১ মাস পাঁচ দিনে ফরমাল চার্জ প্রস্তুত করেন। এখন ট্রাইব্যুনাল ফরমাল চার্জ গ্রহণ করার পর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করার মাধ্যমে বিচারিক কার্যক্রম শুরু করবেন। মামলায় যেসব আসামি গ্রেফতার আছেন, তাদের আইনজীবীদের প্রস্তুতির জন্য নির্দিষ্ট সময় দেওয়া হবে। প্রসিকিউশনের ওপেনিং স্টেটমেন্টের মাধ্যমে মূল কার্যক্রম শুরু হবে।

এ বিষয়ে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম শনিবার বলেন, চানখাঁরপুল এলাকায় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) প্রস্তুত করেছে প্রসিকিউশন। রোববার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ফরমাল চার্জ দাখিল করা হতে পারে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের একটি ফরমাল চার্জ শেষের পথে। কয়েকদিনের মধ্যে সেটিও দাখিল করা হবে। তিনি বলেন, আশুলিয়ায় হত্যার পর ছয় মরদেহ পোড়ানোর ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার তদন্ত প্রতিবেদন রোববার হাতে পাবেন বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, এই মামলার তদন্ত প্রক্রিয়া চলমান থাকা অবস্থায় প্রধান আসামি শেখ হাসিনাসহ তার ‘সুপিরিয়র কমান্ডারদের’ বিরুদ্ধে আলাদাভাবে আরেকটি তদন্ত হয়েছে। কারণ সারা দেশে যেসব এলাকায় অপরাধ হয়েছে, প্রতিটি অপরাধের সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততা প্রমাণিত হয়েছে। এ কারণে তাদের বিরুদ্ধে সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটির (ঊর্ধ্বতন দায়) আলাদাভাবে তদন্ত রিপোর্ট দাখিল হয়েছে। যা খুব তাড়াতাড়ি ফরমাল চার্জ দাখিল হবে।

নিরস্ত্র ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকারীদের ওপর প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার: ফরমাল চার্জে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার নির্দেশে অপরাপর আসামিরা ঢাকা মহানগরীর চানখাঁরপুল এলাকায় নিরস্ত্র ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকারীদের ওপর প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে। গুলিতে স্কুলছাত্র শাহরিয়ার খান আনাস, শেখ মাহদি হাসান জুনায়েদ, মো. ইয়াকুব, মো. রাকিব হাওলাদার, মো. ইসমামুল হক ও মানিক মিয়া শাহরিয়ার শহীদ হন।

এ মামলার তদন্ত কাজে নিয়োজিত প্রসিকিউটর বিএম সুলতান মাহমুদ শনিবার বলেন, ৮ জন আসামির বিরুদ্ধে ফরমাল চার্জ প্রস্তুত করা হয়েছে। এই ৮ আসামি হলেন-ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, ডিএমপির সাবেক যুগ্ম কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী, রমনা জোনের সাবেক এডিসি শাহ আলম, রমনা জোনের সাবেক এসি মো. ইমরুল, শাহবাগ থানার সাবেক পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) আরশাদ হোসেন, কনস্টেবল সুজন, কনস্টেবল ইমাদ হোসেন এবং কনস্টেবল নাসিরুল ইসলাম। এদের মধ্যে গ্রেফতার আছেন পরিদর্শক আরশাদ হোসেন, কনস্টেবল সুজন, কনস্টেবল ইমাদ হোসেন ও কনস্টেবল নাসিরুল ইসলাম।

তদন্ত প্রতিবেদনে সংযুক্ত করা হয় ১৯টি ভিডিও, ১১টি পত্রিকার প্রতিবেদন, ২টি অডিও, ১১টি বই ও রিপোর্ট এবং ৬টি মৃত্যুসনদ। ঘটনার সময়কাল ছিল ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট।

শেখ হাসিনার নির্দেশেই নির্বিচারে গুলি: প্রতিবেদনে বলা হয়, এই মামলার পলাতক আসামি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের যুগ্ম কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী। তিনি একটি উচ্চ পদে থেকেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আজ্ঞাবহ হয়ে ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ছাত্র-জনতার ওপর গুলির নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি আন্দোলন দমনের লক্ষ্যে শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুন ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার হাবিবুর রহমানের নির্দেশে সুদীপ কুমার চক্রবর্তী ৫ আগস্ট সকাল ৬টায় শাহবাগ থানায় উপস্থিত হন। এ সময় আন্দোলনকারীরা যেন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের দিকে যেতে না পারে, সেজন্য পুলিশ কমিশনারের নির্দেশ মোতাবেক অধীনস্থ পুলিশ সদস্যরা সরাসরি গুলি করে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ১৪ জুলাই রাতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও অন্যান্য অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরীহ ও নিরস্ত্র শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে। এই হামলা করার সুযোগ করে দেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার হাবিবুর রহমান।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে পদত্যাগ করে ৫ আগস্ট দেশত্যাগ করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে টানা প্রায় ১৬ বছরের শাসনের অবসান হয়। এসব অপরাধের বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে।

প্রসিকিউশনের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ৩৩০টি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। যেখানে ৩৯টি তদন্ত কার্যক্রম (কমপ্লেইন্ট রেজিস্টার অনুসারে) চলমান। তদন্তের প্রাথমিক সত্যতার আলোকে মিস কেস হয়েছে ২২টি। এসব মিস কেসে সর্বমোট অভিযুক্ত ব্যক্তি ১৪১ জন। এর মধ্যে গ্রেফতার রয়েছেন ৫৪ জন, আর ওয়ারেন্টভুক্ত পলাতক ৮৭ জন। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে বেসামরিক ৭০ জন, পুলিশ ৬২ জন, আর সামরিক ৯ জন।

ঊষার আলো-এসএ