UsharAlo logo
শুক্রবার, ২৪শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১০ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

টিউলিপকে বাংলাদেশে প্রত্যর্পণে চাপ বাড়ছে

ঊষার আলো রিপোর্ট
জানুয়ারি ২৩, ২০২৫ ৩:৫২ অপরাহ্ণ
Link Copied!

বড় ধরনের দুর্নীতির তদন্তের পর টিউলিপ সিদ্দিককে বাংলাদেশে প্রত্যর্পণের চাপ বাড়ছে যুক্তরাজ্যে। দেশটির বিরোধী নেতারা মনে করেন, সাবেক লেবার এমপির ‘আইন প্রয়োগের মুখোমুখি হওয়া উচিত’। কারণ বাংলাদেশে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত চলছে।

ডেইলি মেইলের এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশি রাজনীতিক ববি হাজ্জাজের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, তিনি বাংলাদেশ সরকার ও দুদকের কাছে যুক্তরাজ্য থেকে টিউলিপ সিদ্দিককে দেশে ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন। টিউলিপ বর্তমানে তার খালা শেখ হাসিনার সঙ্গে তার যোগসূত্রের জন্য তদন্তাধীন, যিনি আগস্টে দুর্নীতি ও নিষ্ঠুরতার অভিযোগের মধ্যে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে পদচ্যুত হন এবং ভারতে পালিয়ে আছেন।

এদিকে ব্রিটিশ সরকার টিউলিপকে প্রত্যর্পণ আদেশ মেনে চলার জন্য অনুরোধ করবে কিনা জানতে চাইলে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের মুখপাত্র গুইডো ফকসকে (ব্রিটিশ-আইরিশ রাজনৈতিক ব্লগার পল স্টেইনস দ্বারা প্রকাশিত একটি ডানপন্থী রাজনৈতিক ওয়েবসাইট) বলেন, তারা ‘কল্পনাপ্রসূত কিছু বলবেন না।’

টোরি নেতা কেমি ব্যাডেনোচ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের বিরুদ্ধে টিউলিপ সিদ্দিককে মন্ত্রীত্ব দেওয়ার ব্যাপারে ‘দুর্বল’ নেতৃত্বের অভিযোগ আনেন এবং মন্ত্রীর (টিউলিপ) সঙ্গে তার বন্ধুত্বের কারণে তিনি কিভাবে প্রক্রিয়াটি বিলম্বিত করেছেন তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। টিউলিপকে নিয়ে ব্রিটিশ রাজনৈতিক অঙ্গনে কড়া সমালোচনা ও মিডিয়াগুলোর ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশের এক পর্যায়ে টিউলিপ দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ান।

কেমি ব্যাডেনোচ বলেন, সপ্তাহান্তে এটা স্পষ্ট হয়ে যায় যে টিউলিপ দুর্নীতি দমন মন্ত্রীর পদে সম্পূর্ণরূপে অযোগ্য। তবুও কিয়ার স্টারমার তার ঘনিষ্ঠ বন্ধুকে রক্ষা করার জন্য দ্বিধাগ্রস্ত এবং বিলম্ব করেছেন। এখনো, যখন বাংলাদেশ টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করেছে, তিনি তার অনিবার্য পদত্যাগে ‘দুঃখ’ প্রকাশ করেছেন। কিয়ার স্টারমারের এ ধরনের কার্যকলাপকে কেমি, ‘একজন দুর্বল প্রধানমন্ত্রীর দুর্বল নেতৃত্ব’ বলে অভিহিত করেন।

ব্রিটিশ ইনস্টিটিউট ফর গভর্নমেন্ট এসব বিষয় পর্যবেক্ষণ করে বলেছে, এই বিরোধ মোকাবিলায় দেখা গেছে যে লেবার এখনো সরকারের তদন্তে অভ্যস্ত নয়। নীতিশাস্ত্র এবং সততার ক্ষেত্রে গত সরকারের ব্যর্থতার জন্য এত দ্রুত সমালোচনা করার পর, স্টারমার এবং তার দলকে দেখাতে হবে যে তারা ক্ষমতায় আসার পর যে মানদণ্ড বজায় রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তা পূরণের গুরুত্ব তারা সত্যিই বোঝেন।

লিবারেল ডেমোক্রেট মুখপাত্র সারাহ ওলনি বলেছেন, ‘এটা ঠিক যে টিউলিপ সিদ্দিক পদত্যাগ করেছেন, আপনি একজন দুর্নীতি দমন মন্ত্রীকে দুর্নীতি কেলেঙ্কারিতে আটকে রাখতে পারেন না।’

একটি গোপন তদন্তে টিউলিপ সিদ্দিক ‘দুঃখজনক’ আচরণের নিন্দা জানানোর পর গত ১৪ জানুয়ারি লেবার সরকার থেকে পদত্যাগ করেন এবং বলেন যে তিনি ব্রিটিশ সরকারের কাজে বাধা হয়ে দাঁড়াতে চান না।

২০১৩ সালে রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশে একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য একটি চুক্তিতে দালালির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে, যেখানে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এমপি থাকাকালীন তার পরিবারের সদস্যদের অবৈধভাবে জমি বরাদ্দের ঘটনায় দ্বিতীয় তদন্তে মিসেস সিদ্দিকের নামও এসেছে।

এসব দাবির পর, বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ তাকে ‘আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মুখোমুখি’ করার জন্য বাংলাদেশে প্রত্যর্পণের দাবি জানান।

হাজ্জাজ গুইডো ফকসকে বলেন, টিউলিপের যুক্তরাজ্য এবং বাংলাদেশ উভয় দেশের জন্য দ্বৈত নাগরিকত্ব রয়েছে এবং তিনি দাবি করেন যে তিনি দেশটির দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) তাকে ফিরে আসতে বলার জন্য অনুরোধ করবেন।

তিনি আরও বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে আমরা অবশ্যই দুদক এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলিকে টিউলিপকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মুখোমুখি হতে অথবা এখানে আদালতের মুখোমুখি হতে অনুরোধ করার জন্য চাপ দেব।

হাজ্জাজ আরও দাবি করেন, লেবার সরকার ‘স্বৈরাচারী শাসনের আস্থাভাজনদের দ্বারা ব্যাপকভাবে সমর্থিত। লেবার এবং আওয়ামী লীগ দল প্রায় সহযোগী দলের মতো এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি খুব ভালোভাবে জানে।

ডেইলি মেইলের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, মিসেস সিদ্দিকের খালা শেখ হাসিনার শাসনামলের সঙ্গে সংযোগ নিয়ে সঙ্কট মোকাবিলার ক্ষেত্রে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের রাজনৈতিক বিচারবুদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। টিউলিপের বিদায়ের আগের দিন, ১০নং ডাউন স্ট্রিট তার ওপর ‘পূর্ণ আস্থা’ প্রকাশ করেছিল, যদিও কয়েক সপ্তাহ ধরে ব্রিটিশ মিডিয়া সহ আন্তর্জাতিক মিডিয়াগুলোতে মিসেস সিদ্দিককে নিয়ে ক্ষতিকারক শিরোনাম হয়েছিল।

মিসেস সিদ্দিক তার খালার সঙ্গে সম্পর্কিত সম্পত্তি ব্যবহার নিয়ে ক্রমবর্ধমান প্রশ্নগুলোর পরে নিজেকে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর নীতিশাস্ত্র উপদেষ্টা স্যার লরি ম্যাগনাসের কাছে জবাবদিহিতে বাধ্য হন। এরপর টিউলিপ মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেন এবং পেনশন মন্ত্রী এমা রেনল্ডসকে তার স্থলাভিষিক্ত করা হয়। চীনা ব্যবসায়িক কার্যকলাপের ওপর বিধিনিষেধ কমাতে গত সরকারের বিরুদ্ধে তদবির করার অভিযোগ প্রকাশ পাওয়ার পরই টিউলিপর নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপিত হয়।

ঊষার আলো-এসএ