UsharAlo logo
সোমবার, ১৮ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৩রা অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্রাধান্য পাবে সংস্কার ও নির্বাচনি রোডম্যাপ

usharalodesk
অক্টোবর ৫, ২০২৪ ১২:০১ অপরাহ্ণ
Link Copied!

ঊষার আলো রিপোর্ট :  প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনায় আজ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। দুপুর আড়াইটায় দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপিকে দিয়ে সংলাপ শুরু হবে। সংলাপে রাজনৈতিক দলের আমন্ত্রিত নেতারা বলেন, প্রথমত তারা প্রধান উপদেষ্টার কথা শুনবেন। পরে তারা রাষ্ট্র সংস্কার ও নির্বাচনের রোডম্যাপ বিষয়ে সরকারের মনোভাব জানতে চাইবেন।

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, সংলাপে সংস্কারসহ নানা বিষয়ে এ সরকারকে সব ধরনের সহযোগিতার কথা জানাবেন। তবে নির্বাচনব্যবস্থা, প্রশাসন ও বিচার বিভাগ-এ তিনটি ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সংস্কারের বিষয়ে তারা নির্দিষ্ট কিছু প্রস্তাব দিতে পারেন। এরপরই দ্রুত নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তি দিয়ে দলের অবস্থান তুলে ধরার কথা রয়েছে। পাশাপাশি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক মামলা ও সাজা প্রত্যাহার, আইনশৃঙ্খলাসহ দেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়েও কথা বলবেন দলটির নেতারা।

দায়িত্ব গ্রহণের পর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার এটি হবে তৃতীয় দফা সংলাপ। এর আগে দুদফা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। এদিন তৃতীয় দফা সংলাপে বিএনপি ছাড়াও জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, গণতন্ত্র মঞ্চ, বাম গণতান্ত্রিক জোট, হেফাজতে ইসলাম ও এবি পার্টি আমন্ত্রণ পেয়েছে বলে জানা গেছে। শুক্রবার বিকাল ৫টার দিকে জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জিএম কাদের  বলেন, তাদের এখনো এ বিষয়ে জানানো হয়নি। লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) প্রেসিডেন্ট কর্নেল (অব.) ড. অলি আহমেদ সন্ধ্যায় জানান, তার দলকে এখনো আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। তিনি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘এই সরকার কোয়ালিটি নয় কোয়ানটিটি দেখে ডাকে।’ এদিকে আওয়ামী লীগ ও দলটির নেতৃত্বাধীন জোটের কেউ এ সংলাপে আমন্ত্রণ পাননি বলে জানা গেছে।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ‘শনিবারের (আজ) সংলাপে যোগ দিতে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। দুপুর আড়াইটা থেকে এই সংলাপ শুরু হবে। প্রধান উপদেষ্টা রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলবেন।’

ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশন, পুলিশ, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন, দুর্নীতি দমন কমিশন ও সংবিধান সংস্কারে কমিশন গঠন করেছে সরকার।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সংলাপে সংস্কারের লক্ষ্যে গঠিত ছয়টি কমিশনের কাজের অগ্রগতি রাজনৈতিক দলগুলোকে জানানো হতে পারে। এছাড়া রাজনৈতিক দলগুলোকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করে বিভিন্ন প্রস্তাব বা পরামর্শ চাওয়া হবে সরকারের পক্ষে। আমন্ত্রণ পাওয়া রাজনৈতিক দলের নেতারা জানান, দুর্গাপূজায় নিরাপত্তা নিশ্চিত ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে স্বাভাবিক করা, নির্বাচন কমিশনসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ খাতের সংস্কার ইস্যুতে সুনির্দিষ্টভাবে কথা বলবেন তারা। সংস্কার কাজে কত দিন সময় লাগবে, এর কতদিন পর নির্বাচন ইত্যাদি বিষয় আলোচনায় আসতে পারে। এসবের পাশাপাশি সংস্কার ও নির্বাচনি রোডম্যাপ নিয়েও সরকারের মত জানতে চাওয়া হতে পারে।

জানতে চাইলে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, দেশ ও জনগণ এবং দল ও রাষ্ট্র পরিচালনর স্বার্থে বিএনপির নির্দিষ্ট কিছু প্রস্তাব আছে। এগুলোর বিষয়ে আগাম কিছুই বলা যাবে না। সরকার যা জানতে চাইবে সে বিষয়ে কথা বলব। বিভিন্ন সংস্কারের বিষয়ে প্রস্তাব দেওয়া হবে। মূলত সরকারের বক্তব্যের বাইরে আমাদের সুনির্দিষ্ট কিছু বক্তব্য থাকবে। বিশেষ করে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পর রাষ্ট্র পরিচালনা এবং নির্বাচনি রোডম্যাপ ইস্যুতে বক্তব্য থাকবে।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, সংস্কারের উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। কেননা রাজনৈতিক দলগুলোই হচ্ছে প্রধান অংশীজন। তাদের মতামত নিয়ে এগোলে সংস্কারের প্রক্রিয়া আরও ভালো হবে।

গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম নেতা বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, প্রধান উপদেষ্টা ডেকেছেন। দুর্গাপূজাসহ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উনারা ব্রিফ করবেন বা আমাদের সহযোগিতা হয়তো চাইবেন। সংস্কারে যে কমিশন হয়েছে সে বিষয়েও অফিশিয়ালি জানাবেন। আমাদের দিক থেকে যেটা বলা তা হলো প্রথমত অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর এক ধরনের দূরত্ব তৈরি হয়েছে। এটা যে ঠিক হচ্ছে না তা বলব। এই দূরত্বের জায়গাটা তৈরি হলে অপ্রয়োজনীয় সমস্যা বা সংকট তৈরি হতে পারে। সুতরাং গুরুত্বপূর্ণ অংশীজন হিসাবে রাজনৈতিক দল এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে তাদের একটা নিবিড় যোগাযোগ এবং তাদের আস্থায় নিয়ে সরকারের পুরো কার্যক্রম এগোনো উচিত।

তিনি আরও বলেন, তারা (অন্তর্বর্তী সরকার) যে যাত্রাটা শুরু করেছে একটা অবাধ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের মধ্য দিয়ে এই যাত্রাটা কখন শেষ করতে চায় এটা নিশ্চয়ই জানতে চাইব। সংস্কার কমিশন যাতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ বা আলাপ-আলোচনা করে সে বিষয়ে বলব। সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবগুলোতে যদি রাজনৈতিক দলগুলোর চিন্তার প্রতিফলন থাকে তবে কাজটা সহজ হয়। তারপর কোন কাজগুলো তারা করবেন আর কোনগুলো পরবর্তী সরকার করবে তা নিয়ে আলোচনা হতে পারে। আর এখন তো কোনো নির্বাচন কমিশন নেই। তারা নির্বাচন কমিশন গঠন কখন, কিভাবে করবেন, নির্বাচনি ব্যবস্থা সংস্কার তা সংলাপের মধ্য দিয়ে বেরিয়ে আসবে। ভোটার তালিকা থেকে শুরু করে সব কার্যক্রম একটা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। এটা কবে নাগাদ কিভাবে শুরু করবেন এগুলো আমাদের জানার মধ্যে থাকবে।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম বলেন, বিভিন্ন ইস্যুতে কথা বলব। বিশেষ করে ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী গণঅভ্যুত্থানের পর রাষ্ট্র পরিচালনার বর্তমান কী অবস্থা, আন্দোলনের যে লক্ষ্য ছিল তার প্রতিফলন কতটুকু হলো এ বিষয়ে কথা বলব। তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদ আওয়ামী লীগের প্রেতাত্মারা এখনো বহাল তবিয়তে আছে। তাদের ষড়যন্ত্র থেকে সবার সতর্ক থাকা, প্রতিটি পূজামণ্ডপে সিসি ক্যামেরা লাগানোর কথা বলব।

হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নায়েবে আমির মাওলানা মুহিউদ্দিন রাব্বানী বলেন, উপদেষ্টা পরিষদ যে বিষয়ে জানতে চাইবে সেই বিষয়ে মতামত দেবেন। পাশাপাশি হেফাজতের নামে থাকা সব মামলা প্রত্যাহার, শিক্ষানীতি সংশোধনসহ কয়েকটি ইস্যুতে তারা আলোচনা করবেন। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, প্রথম দিনেই সংলাপে যাচ্ছেন। সংলাপে গিয়ে আগে দেখব সরকার কী চায়। এরপর আমাদের উপলব্ধি শেয়ার করব।

এবি পার্টির সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, সংস্কার এজেন্ডা মোটা দাগে তিনটি। প্রথমত আমরা রাজনৈতিক দল ও সরকার কাঠামোতে সংস্কার চাই, দ্বিতীয়ত আইন ও বিচার ব্যবস্থার সংস্কার এবং তৃতীয়ত জনপ্রশাসন ও পুলিশি ব্যবস্থাপনার সংস্কার। রাজনৈতিক দল ও সরকার প্রসঙ্গে আমাদের প্রস্তাব হলো দলের প্রধান ও সরকারের প্রধান একই ব্যক্তি হতে পারবেন না। প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী ও সংসদ-সদস্য পদে পরপর অথবা বিরতি দিয়ে দুই মেয়াদের বেশি কেউ নির্বাচিত হতে পারবেন না। দলের প্রধান ও দায়িত্বশীল পদগুলোতেও এক ব্যক্তি দুই বা তিন মেয়াদের বেশি দায়িত্বে থাকতে পারবেন না। এতে দলে গণতন্ত্রের চর্চা, নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টি ও জবাবদিহিতার পথ সুগম হবে। ব্যক্তি বা পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতির পথ রুদ্ধ হবে এবং দুর্নীতি হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকবে বলে আমাদের বিশ্বাস।

সংলাপের সময়সূচি : জানা গেছে, দুপুর আড়াইটায় বিএনপি, বেলা ৩টায় জামায়াতে ইসলামী, সাড়ে ৩টায় গণতন্ত্র মঞ্চ এবং ৪টায় বাম গণতান্ত্রিক জোট। বিকাল সাড়ে ৪টায় হেফাজতে ইসলাম, ৫টায় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, সাড়ে ৫টায় আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি)। বিএনপির প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তার সঙ্গে থাকবেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। জামায়াতের নেতৃত্ব দেবেন আমির ডা. শফিকুর রহমান, বাম গণতান্ত্রিক জোটের সিপিবি, বাসদ (খালেকুজ্জামান), বাসদ (মার্কসবাদী), গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টি, বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগ, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক পার্টির সমন্বয়ক মাসুদ রানা, গণতন্ত্র মঞ্চের (জেএসডি, নাগরিক ঐক্য, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, ভাসানী অনুসারী পরিষদ, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন) সমন্বয়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, ইসলামী আন্দোলনের আমির ও চরমোনাই পির মাওলানা সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম, হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব মাওলানা সাজেদুর রহমান, এবি পার্টির এএফএম সোলায়মান চৌধুরী নিজ নিজ দলের নেতৃত্ব দেবেন।

ঊষার আলো-এসএ