UsharAlo logo
মঙ্গলবার, ৮ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৪শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

বাংলাদেশকে কর্তৃত্ববাদী চিন্তার মানুষের কাছ থেকে নিরাপদ রাখতে হবে

ঊষার আলো
জুলাই ৭, ২০২৫ ১১:৩০ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর পিস স্টাডিজ (সিপিএস) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেছেন, বাংলাদেশকে অবশ্য কর্তৃত্ববাদী চিন্তার মানুষের কাছ থেকে নিরাপদ রাখতে হবে। জুলাই অভ্যুত্থানের অংশীজনদের মধ্যে কেউ দূরত্ব তৈরি করতে চাই নিজেদের সতর্ক থাকতে হবে। দেশকে গণতন্ত্রের‌ পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। মঙ্গলবার অসমাপ্ত লড়াই: বাংলাদেশের প্রকৃত গণতন্ত্রের সংগ্রাম শীর্ষক এক ওয়েবিনারে দেশে শীর্ষস্থানীয় বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এসব কথা বলেন।

জুলাই অভ্যুত্থানের বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এই আলোচনায় আরো অংশ নেন দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, আইনবিদ ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। তারা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক যাত্রাপথে বিদ্যমান কাঠামোগত সংকট ও সম্ভাবনা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ মতামত তুলে ধরেন।

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল হান্নান চৌধুরী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন। তিনি গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ এবং জবাবদিহিতা প্রচারে শিক্ষাবিদদের সক্রিয় ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান। আলোচনা অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস স্কুলের ডিন অধ্যাপক এ কে এম ওয়ারেসুল করিম। তিনি বাংলাদেশের দীর্ঘ ১৭ বছরের স্বৈরশাসনের পটভূমি তুলে ধরে বলেন, নাগরিক ও চিন্তাবিদদের অবশ্যই মাতৃভূমিকে রাজনৈতিক বিপথগামিতা ও কর্তৃত্ববাদী আগ্রাসন থেকে রক্ষা করতে হবে।

মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালক ড. এম জসিম উদ্দিন। তিনি এরশাদ শাসনামল থেকে হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার পর্যন্ত বাংলাদেশের কর্তৃত্ববাদী উত্তরাধিকারের একটি ঐতিহাসিক সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, প্রকৃত গণতন্ত্রের চর্চা এখনও অনুপস্থিত। ক্ষমতার অতিরিক্ত কেন্দ্রীকরণ, প্রতিষ্ঠানগত ভারসাম্যহীনতা এবং নির্বাহী বিভাগের বিচার বিভাগ ও আইনসভায় হস্তক্ষেপের বিষয়টি তিনি সমালোচনা করেন।

তিনি বলেন, ন্যায়বিচার, শান্তি এবং জাতীয় স্বার্থে প্রতিশ্রুতিশীল একটি আলোকিত নেতৃত্বই পারে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে। তিনি প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার স্বৈরতন্ত্রবিরোধী আপসহীন অবস্থানের প্রশংসা করেন এবং জনগণের আস্থার পুনঃপ্রতিষ্ঠায় সাংবিধানিক ও নির্বাচনী সংস্কারের ওপর জোর দেন।

বিএনপির শীর্ষ আইনজীবী ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন আহমেদ অসীম বলেন, স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরেও বাংলাদেশের গণতন্ত্র এখনও অসমাপ্ত। তিনি ইতিহাসের বিচ্যুতি ও একদলীয় শাসন ব্যবস্থা (বাকশাল) প্রবর্তনের দিকটি তুলে ধরে  বলেন, অবাধ নির্বাচন নিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশনের শক্তিশালী ও নিরপেক্ষ ভূমিকা অত্যন্ত জরুরি। তিনি প্রশাসনিক সংস্কার, ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ এবং যুবসমাজের সক্রিয় অংশগ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

এবি পার্টির ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, উদ্ধারকারী মানসিকতা একটি বড় সমস্যা। তিনি সতর্ক করে বলেন, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের উপর চলমান সংগ্রামের বোঝা বর্তাবে, যদি কাঠামোগত পরিবর্তন না আনা হয়। তিনি ইতিহাসের ধারাবাহিকভাবে গণতন্ত্রের ব্যর্থতা তুলে ধরে যুবসমাজকে সচেতন ও সুনির্দিষ্টভাবে রাজনীতিতে অংশগ্রহণের আহ্বান জানান।

সুপ্রিয় কোর্টের শীর্ষ আইনজীবী অ্যাডভোকেট শিশির মনির সাংবিধানিক সীমাবদ্ধতার বিষয়টি তুলে ধরে বলেন, ক্ষমতার ভারসাম্যহীনতার কারণে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থা অনেকাংশেই অসার। তিনি জানান, বর্তমান সময়ে রাজনৈতিক মেরুকরণ কিছুটা হ্রাস পাচ্ছে- এতে সামান্য আশাবাদের জায়গা তৈরি হয়েছে।

সমাপনী বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক আবদুল হান্নান চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক পরিবেশ প্রতিষ্ঠায় নেতৃত্ব ও প্রতিষ্ঠানের ব্যর্থতা ছিল চোখে পড়ার মতো। তিনি নাগরিক শিক্ষার প্রসার, অন্তর্ভুক্তিমূলক চর্চা এবং শহর-গ্রাম, ধনী-গরিব বিভাজন দূর করার মাধ্যমে জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানান।

গুরুত্বপূর্ণ এ ওয়েবিনারে আইনবিদ, রাজনীতি বিশ্লেষক, শিক্ষার্থী ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিগণ অংশগ্রহণ করেন এবং বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা নিয়ে এক আন্তরিক ও গঠনমূলক সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনার মূল বার্তা ছিল- প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার, নাগরিক সম্পৃক্ততা ও নিরপেক্ষ নির্বাচনি ব্যবস্থা ছাড়া বাংলাদেশের গণতন্ত্রের লড়াই থেকে যায় অসমাপ্ত।

ঊষার আলো-এসএ