ক্রীড়া ডেস্ক : ২০১৭ সালের অক্টোবরে বাংলাদেশের দায়িত্ব ছাড়েন হেডকোচ হাথুরুসিংহে। কিন্তু তিনি ২০১৭ সালের শেষ দিকে বাংলাদেশের একটা সফরের মাঝপথে ই–মেইলে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। অথচ কথা ছিল— ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপ পর্যন্ত তিনিই কোচ থাকবেন। ওভাবে দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়াটা পেশাদারত্বের সঙ্গে মোটেই সংগতিপূর্ণ ছিল না। ক্রিকেট নাকি সবকিছু্ই ফিরিয়ে দেয়— হাথুরুসিংহেকেও কি তা–ই দিল।
আবার ফেরেন ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে। এবারের শুরুটা কী দারুণ! ওয়ানডে সিরিজে হারলেও সেই সময়ের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে টি-টোয়েন্টি সিরিজে ধবলধোলাই করে বাংলাদেশ।
টি-টোয়েন্টিতে মোটামুটি ভালো, ওয়ানডেতে খারাপ—হাথুরুর দ্বিতীয় আমলে পুরোটা সময়েই বজায় থেকেছে এ ধারা। ২০২৩ সালের এশিয়া কাপ ও ওয়ানডে বিশ্বকাপে ভুলে যাওয়ার মতোই পারফরম্যান্স ছিল বাংলাদেশের।
মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়াম থেকে বেরিয়ে যাচ্ছেন হাথুরুসিংহে। বাংলাদেশের কোচ হিসেবে আজকের দিনটিই হয়ে রইল তার শেষ দিন।
এরপর এ বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সুপার এইটে উঠে বাংলাদেশ। তবু ওয়েস্ট ইন্ডিজের সেই বিশ্বকাপে বাংলাদেশের খেলা মন কাড়তে পারেননি সমর্থকদের। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে টি-টোয়েন্টি সিরিজের হারটা তো কালো দাগই হয়ে থাকবে বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে।
হাথুরুসিংহের প্রথম ও দ্বিতীয় মেয়াদের মাঝে বাংলাদেশের প্রধান কোচ ছিলেন দুজন—ইংল্যান্ডের স্টিভ রোডস ও দক্ষিণ আফ্রিকার রাসেল ডমিঙ্গো। তিন সংস্করণ মিলিয়ে রোডসের অধীন বাংলাদেশের শতকরা জয় ৫১.১১%, ডমিঙ্গোর অধীন ৪২.৩৪%।
বিশ্বকাপের পর পাকিস্তানে তাদেরই মাটিতে ধবলধোলাই করার বিরল কীর্তি গড়া বাংলাদেশ আবার সেই ভালো লাগার অনুভূতি ছুড়ে ফেলে এসেছে ভারত সফরে। টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি দুই সিরিজেই বাজেভাবে হারার পর এলো সেই খবর—হাথুরুকে বরখাস্ত করছে বিসিবি।
প্রথমবার হাথুরুসিংহে এসেছিলেন ২০১৪ সালে। সেই সময় ছিল বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে অন্যতম বাজে দিন। ১৭ জুন তারিখটাকে মনে রাখার মতো ছিল। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে ৪১ ওভারে নেমে আসা ওয়ানডে ম্যাচে ভারতকে ১০৫ রানে অলআউট করেও হেরেছিল বাংলাদেশ। রান তাড়ায় বাংলাদেশ অলআউট মাত্র ৫৮ রানে। ভারতের মিডিয়াম পেসার স্টুয়ার্ট বিনি সেদিন ৪ রান দিয়ে নিয়েছিলেন ৬ উইকেট।
সেটি ছিল বাংলাদেশের কোচ হিসাবে চন্ডিকা হাথুরুসিংহের দ্বিতীয় ম্যাচ। সেই হাথুরু সাড়ে তিন বছর পর বাংলাদেশ জাতীয় দলের ইতিহাসে সবচেয়ে সফল কোচ হিসেবে ছেড়েছিলেন দায়িত্ব।
মাঝের সময়টাকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের সোনালি সময় বলতেই হবে। ২০১৫ সালে এই শ্রীলংকান কোচের অধীনে ওয়ানডে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে বাংলাদেশ। এরপর ঘরের মাঠে পাকিস্তান, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টানা তিনটি ওয়ানডে সিরিজ জয়।
প্রথম মেয়াদে হাথুরুর অর্জন (১৯ মে ২০১৪-২৯ অক্টোবর ২০১৭)।
সংস্করণ ম্যাচ জয় হার ড্র ফল হয়নি শতকরা জয়
টেস্ট ২১ ৬ ১১ ৪ – ৩৪.৪৮
ওয়ানডে ৫২ ২৫ ২৩ – ৪ ৪৮.০৮
টি-টোয়েন্টি ২৯ ১০ ১৭ – ২ ৩৪.৪৮
সব মিলিয়ে ১০২ ৪১ ৫১ ৪ ৬ ৪০.২০
প্রথম মেয়াদে সাফল্য এসেছে টেস্টেও, নিজেদের শততম টেস্টে কলম্বোয় শ্রীলংকাকে হারিয়ে দেয় বাংলাদেশ। মিরপুরের স্পিনবান্ধব উইকেটে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেও টেস্টে জয় আসে হাথুরুর।
ওয়ানডেতে ধারাবাহিক ভালো করে র্যাংকিংয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ সুযোগ পায় ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে। ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে অনুষ্ঠিত সেই টুর্নামেন্টে তো সেমিফাইনালেই উঠে যায় মাশরাফির দল। ২০১৯ বিশ্বকাপেও বাংলাদেশ সরাসরি সুযোগ পায় র্যাংকিংয়ে এগিয়ে থাকার সৌজন্যেই।
এবার দেখুন হাথুরুর দ্বিতীয় মেয়াদ (৩১ জানুয়ারি ২০২৩ থেকে ১৫ অক্টোবর ২০২৪)।
সংস্করণ ম্যাচ জয় হার ড্র ফল হয়নি শতকরা জয়
টেস্ট ১০ ৫ ৫ ০ – ৫০.০০
ওয়ানডে ৩৫ ১৩ ১৯ – ৩ ৩৭.১৪
টি-টোয়েন্টি ৩৫ ১৯ ১৫ – ১ ৫৪.২৯
সব মিলিয়ে ৮০ ৩৭ ৩৯ ০ ৪ ৪৬.২৫
ঊষার আলো-এসএ