ঊষার আলো ডেস্ক : ১৯৩৩ সালের ৬ অক্টোবর কলকাতায় জন্ম হয় বাংলা সাহিত্যের এক অনন্য প্রদীপ অলোকরঞ্জন দাশগুপ্তের। তিনি শান্তিনিকেতনে পড়াশোনা শেষ করার পর সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে সাহিত্য নিয়ে উচ্চশিক্ষা শেষ করেন। পরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেন তিনি। ভারতীয় কবিতার শব্দমালা নিয়ে পিএইচডি করেছিলেন কবি অলোকরঞ্জন।
কর্মজীবনের শুরু হয় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামূলক সাহিত্য বিভাগ থেকে। এখানে অধ্যাপক হিসেবে থাকাকালীন জার্মান সাহিত্যের প্রতি আগ্রহ থেকে অনুবাদের কাজ হাত দেন তিনি। পরে হামবোল্ড ফাউন্ডেশন ফেলোশিপ নিয়ে পড়াতে যান জার্মানির হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে।
অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত এমন একজন কবি ও মানুষ যিনি তাঁর সহকর্মী এবং ভক্তদের দ্বারা প্রশংসিত তো বটেই সাথে তিনি কবিতা মূলভাব ও প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের জন্যও পরিচিত। বাংলা-জার্মান সাহিত্যের মেলবন্ধন ঘটানোর মতো বিরাট কাজের জন্য তাকে সে দেশের সরকার ‘গ্যেটে’ পুরস্কারে সম্মানিত করে। তিনি জার্মানিতেই পাকাপাকিভাবে বসবাস করেন। তবে নিজ দেশ ভারতের সাথে সংযোগ ছিল নিবিড়। সে দেশের সমসাময়িক সাহিত্য নিয়ে উৎসাহী ছিলেন।
ঐতিহ্যের প্রবাহমানতায় বিশ্বাসী অলোকরঞ্জন সম্পূর্ণ পৃথক এক ধরণের বাচনভঙ্গি তৈরি করেন, যেটি তাঁর একান্ত নিজস্ব এক সৃষ্টি। নিত্য নতুন শব্দের সন্ধানসহ তার অপূর্ব শব্দ বিন্যাস কবিতামনস্ক পাঠকদের কবিতার প্রতি আকৃষ্ট করত।
অলোকরঞ্জন দাশগুপ্তের কাব্যগ্রন্থের সংখ্যা মোট ২০টি। সাহিত্য জগতে বিশেষ অবদানের জন্য একাধিক পুরস্কারও লাভ করেছেন তিনি। ১৯৯২ সালে সাহিত্য অ্যাকাডেমি পুরস্কার পান অলোকরঞ্জন। এছাড়াও তিনি পেয়েছেন রবীন্দ্র পুরস্কার ও আনন্দ পুরস্কার। পঞ্চাশের দশকে রবির প্রভাব থেকে মুক্ত হয়ে বাংলা কাব্যে স্বকীয়তা এনেছিলেন যে হাতে গোনা কয়েকজন মানূষ তাঁর মধ্যে তিনি অন্যতম। শব্দ নির্মাণে ও ব্যবহারে তাঁর মতো মুন্সীয়ানা খুব কম কবি-ই তাদের জীবনে দেখাতে পেরেছেন।
৮৭ বছর বয়সে ২০২০ সালে ১৭ নভেম্বর জার্মানিতে নিজ বাসভবনেই মৃত্যু হয় খ্যাতিমান এ কবির।
(ঊষার আলো-এফএসপি)