UsharAlo logo
বুধবার, ১৫ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১লা মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

যেন এক অন্ধকার ভূতুড়ে স্থাপনা

ঊষার আলো
সেপ্টেম্বর ১, ২০২৪ ৪:৩৬ অপরাহ্ণ
Link Copied!

ঊষার আলো রিপোর্ট : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ঢাকার বহু থানায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। শেখ হাসিনা সরকারের নির্দেশে পুলিশ বাহিনীর গুলিতে বহু সাধারণ জনতা নিহত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে বিক্ষুব্ধ জনতা থানায় হামলা করে আগুন ধরিয়ে দেয়। থানা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের কারণে পুলিশ সদস্যদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লে বেশিরভাগ থানার কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর ধীরে ধীরে স্বল্প পরিসরে কম ক্ষতিগ্রস্ত থানার কার্যক্রম শুরু হতে থাকে। এর মধ্যে বহু থানায় পুরোপুরি কার্যক্রম শুরু করতে পারলেও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত অনেক থানার এখন পর্যন্ত সংস্কার কাজই শেষ হয়নি। তেমনি বেশি ক্ষতিগ্রস্ত থানার মধ্যে যাত্রাবাড়ী একটি। আগুনে এ থানার মূল ভবনের সব আসবাব পুড়ে যাওয়া ছাড়াও দেওয়ালের বেশিরভাগ পলেস্তারা খসে পড়ে যায়। এছাড়া থানার ভেতরে থাকা সব যানবাহন পুড়ে অঙ্গার হয়ে যায়। থানাটিতে গত দুই সপ্তাহ ধরে সংস্কার কাজ করছেন শ্রমিকরা। পুরোপুরি সংস্কার শেষে থানার কার্যক্রম চালু করতে আরও দেড় থেকে দুই মাস সময় লাগতে পারে। থানাটি দেখলে মনে হবে যেন অন্ধকার এক ভূতুড়ে স্থাপনা।

শুক্রবার বিকাল ৪টার দিকে যাত্রাবাড়ী থানার ভেতরে ঢুকে কোনো এক ভূতুড়ে স্থাপনা বলে মনে হলো। আগের মতো ভবনের সামনে কোনো শিক্ষার্থী বা স্বেচ্ছাসেবীদের দেখা যায়নি। থানার ভেতরে তিনজনকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনার পর ধীরে ধীরে থানা পাহারায় থাকা স্বেচ্ছাসেবীরা চলে যান। সরেজমিন দেখা যায়, থানার সীমানার বাইরে মূল গেটের দুই পাশে আগুনে পোড়া বেশ কয়েকটি যানবাহন পড়ে আছে। ডান পাশের ছাউনিতে ২০/২৫ জন যুবক মোটরসাইকেল পার্কিং করে গল্প করছেন। থানার সীমানার ভেতরেও পড়ে আছে পুড়ে অঙ্গার হওয়া অর্ধশতাধিক যানবাহন। মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকার, মিনি ট্রাকসহ এসব গাড়ি সরানোর কাজ শুরু হয়নি। থানার মূল ভবনের সামনে খসে পড়া পলেস্তারাসহ অন্যান্য ধ্বংসস্তূপ জড়ো করে রাখা হয়েছে।

থানার মূল ভবনে উঠতে গেলে চোখ পড়ে বাম পাশে। সেখানে নিচে রান্না করছিলেন একজন। থানায় পলেস্তারা সংস্কারের কাজ করা শ্রমিকদের জন্য ভাত রান্না হচ্ছিল। বাবুর্চি বলেন, প্রায় ১৫ জন শ্রমিক গত দুই সপ্তাহ ধরে সংস্কার কাজ করছেন। পুরো কাজ শেষ হতে কমপক্ষে দেড় থেকে দুই মাস সময় লাগবে। রান্নার জায়গার আশপাশেও পুড়ে ক্ষতিগ্রস্ত গাড়ির অংশ ও নানা সরঞ্জাম পড়ে থাকতে দেখা যায়। ভবনটির ওপরে উঠে দেখা যায়, দোতলায় কোথাও কোথাও ইটের গাঁথুনির কাজ চলছে। কোথাও দেওয়াল ছিদ্র করে পাইপ বসানো হচ্ছে। এই ফ্লোরের বিভিন্ন কক্ষে আলাদাভাবে শ্রমিকরা কাজ করছেন। তবে অন্যান্য ফ্লোরগুলোতে উঠলে যে কেউ ভয়ে আঁতকে উঠবেন। একদিকের আগুনে পুড়ে দেওয়ালগুলো কালো হয়ে আছে। এছাড়া অন্ধকারের কারণে ভালোমতো কিছু দেখা যায় না।

এক নির্মাণ শ্রমিক বলেন, ময়মনসিংহের গফরগাঁও থেকে তারা কাজ করতে এসেছেন। প্রায় ১৫ জন শ্রমিক দুই সপ্তাহ ধরে কাজ করছেন। থানার ভবনের সংস্কার কাজ কবে শেষ হবে, সেটি নিশ্চিত করে বলতে পারেননি তারা। তবে কয়েকজন শ্রমিক বলেন, নিয়মিত কাজ করে গেলে দেড় থেকে দুই মাসের মধ্যে পুরো কাজ শেষ করা সম্ভব হবে।

কয়েকজন শ্রমিক বলেন, আগুনে থানার পলেস্তারা যেমন খসে পড়েছে, তেমনি থানার বৈদ্যুতিক সংযোগ, স্যানিটারি ব্যবস্থাপনাসহ সবকিছু ধ্বংস হয়ে গেছে। একটি নতুন ভবনে যেভাবে শুরু থেকে সাজাতে হয়, সেখানেও সব কাজ করতে হবে। তারপর আসবাবপত্র আনা হলেই কেবল পুলিশ সদস্যরা সেখানে ডিউটি করতে পারবেন।

স্থানীয় ফল বিক্রেতা রুহুল আমিন বলেন, ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার সঙ্গে সংঘর্ষে পুলিশের গুলিতে বহু মানুষ মারা গেলে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতাও থানায় আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে পুলিশের বেশ কয়েকজন সদস্য নিহত হন। থানার ভেতরে থাকা বিভিন্ন আসবাব ও সরঞ্জাম ভাসমান মানুষ ও দুর্বৃত্তরা লুট করে নিয়ে যায়।

থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মাইনুল ইসলাম শুক্রবার বলেন, যাত্রাবাড়ী থানার কার্যক্রম সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় বর্তমানে ডেমরা থানার ভেতরে স্বল্প পরিসরে চলছে। আগের মতো অভিযান পরিচালনাসহ অনেক কাজ যথাযথভাবে করা সম্ভব হচ্ছে না। যাত্রাবাড়ী থানার সংস্কার কাজ শেষ হলে, সেখানে স্থানান্তরের পর পুরোদমে কাজ করা সম্ভব হবে।

ঊষার আলো-এসএ