শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে গত বছরের ২৮ আগস্ট ক্যাম্পাসে রাজনীতি নিষিদ্ধ করে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) কর্তৃপক্ষ। এরপর থেকেই ক্যাম্পাসে রাজনীতি অনেকটা নিষ্ক্রিয়। কিন্তু সম্প্রতি রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে ছাত্রদল। বাকৃবির শিক্ষার্থী না হয়েও ছাত্রদলের স্থানীয় নেতাকর্মীরা ক্যাম্পাসে দিচ্ছে শোডাউন। করছে মিছিল। দফায় দফায় করা এসব শোডাউন ও মিছিলের জেরে আতঙ্কে শিক্ষার্থীরা। নিরাপত্তা সংকটেও রয়েছে তারা।
ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায়, গত ৯ ফেব্রুয়ারি কেওয়াটখালী থেকে একটি মিছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। প্রায় দেড় শতাধিক নেতাকর্মী নিয়ে মিছিলটি ফাস্ট গেট থেকে শুরু হয়ে উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে দিয়ে শোডাউন করে। পরে মিছিলটি শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন মিলনায়তনের সামনে দিয়ে আবার ফাস্ট গেটের দিকে যায়। একইদিনে ছাত্রদলের আরেকটি গ্রুপ বিশ্ববিদ্যালয়ের জব্বার মোড় থেকে মিছিল শুরু করে কেআর মার্কেট হয়ে ফাস্ট গেটের দিকে অগ্রসর হয়।
১০ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন এলাকা থেকে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের জব্বার মোড়ে জড়ো হয়। পরে তারা ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) সংলগ্ন রাস্তা ধরে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে দিয়ে কেআর মার্কেটে গিয়ে মিছিল শেষ করে।
মিছিলের বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি পোস্টও দেওয়া হয়। ওই পোস্টে বলা হয়, ‘গণহত্যা ও গণতন্ত্র ধ্বংসের দায়ে শেখ হাসিনার ফাঁসি ও তার দোসরদের দ্রুত গ্রেফতার করে বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। ১০ ফেব্রুয়ারি রাতে বাকৃবিতে ময়মনসিংহ মহানগর ছাত্রদলের পূর্ব থানা আহ্বায়ক মো. রিপন মিয়া ও কোতোয়ালি থানার আহ্বায়ক মো. সোলেমান হোসেন রুবেলের নেতৃত্বে এ বিক্ষোভ মিছিল হয়। বাকৃবির কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সন্তান এবং সাধারণ জনগণ বিক্ষোভ মিছিলে অংশগ্রহণ করে।’
এর আগে বিভিন্ন সময় বাকৃবি ক্যাম্পাসে বেশ কয়েকবার বহিরাগতরা মিছিল করেছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।
রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাসে মিছিল নিয়ে আতঙ্কে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তবে ভয়ে এ নিয়ে মুখ খুলতে চাচ্ছে না কোনো শিক্ষার্থী। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। প্রক্টর স্যারের অনুমতি ছাড়া এখানে পুলিশও ঢুকতে পারে না। প্রভোস্টের অনুমতি ছাড়া হলের মধ্যে পুলিশ এক পা দিতে পারে না। কিন্তু সেখানে আগের মতো শোডাউন চলছে।’
এ বিষয়ে ময়মনসিংহ মহানগর ছাত্রদলের পূর্ব থানা আহ্বায়ক মো. রিপন মিয়া বলেন, ‘পতিত ফ্যাসিস্ট ও তাদের দোসরদের বিচারের দাবিতে আমরা মিছিল করেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি যথার্থ সম্মান রেখে ও শান্তিপূর্ণভাবে আমরা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছি। মিটিং করা আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের অনুমতি না নিলেও আমরা আমাদের দায়িত্ববোধ থেকে কর্মসূচি পালন করেছি।’
মিছিলের বিষয়ে বাকৃবি প্রক্টর অধ্যাপক ড. আবদুল আলীম বলেন, ‘আমরা এ বিষয় নিয়ে খুব উদ্বিগ্ন। এর আগেও একদিন মিছিল হয়েছিল। সম্প্রতি মিছিল নিয়েও সর্বোচ্চ পর্যায়ে কথা হয়েছে। গতকালের মিছিল সম্পর্কে আমাদের তেমন ধারণা ছিল না। আমরা যতক্ষণে জেনেছি, তার আগেই মিছিল শেষ হয়ে গেছে।’
অনুমতি না নিয়ে মিছিল করায় যারা নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রক্টর বলেন,‘তারা ক্যাম্পাসের বাইরের। তাদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিতে পারি না। তবে আমরা এ বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় আছি।’
ঊষার আলো-এসএ