ক্রীড়া ডেস্ক : চলমান টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সুপার এইটে খেলছে বাংলাদেশ। শনিবার ভারতের বিপক্ষে ১৯৬ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে ৫০ রানে হেরেছে বাংলাদেশ।
এর আগে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলার আগে চন্ডিকা হাথুরুসিংহে বলেছিলেন— ‘টুর্নামেন্ট শুরুর আগে লক্ষ্য ছিল সুপার এইটে উন্নীত হওয়া। তাই এখান থেকে কিছু পেলে তা বোনাস।’
কিন্ত শ্রীলংকার বিপক্ষে জয়ের পর লেগস্পিনার রিশাদ হোসেন মিডিয়াকে বলেছিলেন, তারা বড় স্বপ্ন নিয়ে খেলছেন। সেদিন তার কথায় সুপার এইট ছাপিয়ে সেমিফাইনালের দৌড়ে থাকার ইঙ্গিত ছিল।
কোচ ও খেলোয়াড়দের এমন বিপরীত বক্তব্যে হতবাক হয়েছেন খালেদ মাহমুদ সুজন।
সুজন মনে করেন, হাথুরুসিংহের এমন বক্তব্য নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে সুপার এইটের পারফরম্যান্সে। আফগানিস্তান কোচিং স্টাফের কাছ থেকে হাথুরুসিংহের শেখার আছে বলেও জানান তিনি।
অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশ দলের পারফরম্যান্স মূল্যায়ন করতে গিয়ে সুজন বলেন, ‘বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জয়ের পর আমি যদি বলতাম– চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেছি, কাজ শেষ; তা হলে ডেভেলপমেন্ট বিভাগের কেউ কাজ করত না। কারণ বস বলেছে— কাজ হয়ে গেছে। আমরা তা না করে প্রতি বছর চ্যাম্পিয়ন হওয়ার চেষ্টা করছি। কারণ আমাদের ক্ষুধা আছে।
আর আপনি বলে দিলেন– আমাদের লক্ষ্য পূরণ হয়ে গেছে। সুপার এইটে জিততে পারলে তা হবে বোনাস। আমি জানি না, কী অর্থে বলেছেন কথাটা। যদি অর্জন হয়ে গিয়ে থাকে, তা হলে খেলার দরকার কী; ওয়েস্ট ইন্ডিজে ঘুরেফিরে, খাইদাই করলেই হলো।’
সুজনের হতাশার জায়গা গেম প্ল্যান দেখে, ‘আমরা অস্ট্রেলিয়া, ভারতের কাছে হারতেই পারি। এ রকম বড় দলের কাছে হারা দোষের না। কিন্তু যে ‘অ্যাটিটিউড’ দেখলাম, এটা নিয়ে ক্রিকেট না খেলাই ভালো। দুজন পেস বোলার নিয়ে একাদশ সাজায়। ব্যাটিং ঠিক থাকে না। দুই স্পিনার দিয়ে বোলিং শুরু করে। আমার তো মাথায়ই তো ঢুকে না, কী হচ্ছে।’
সুজনের মতে, বিশ্বকাপে সেরা স্পিন ইউনিট আফগানিস্তানের। তারাও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বোলিং ওপেন করেছে দুই পেসার দিয়ে। সেখানে ভারতের বিপক্ষে ব্যাটিংস্বর্গে বাংলাদেশ স্পিন দিয়ে বোলিং ওপেন করার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘মোহাম্মদ নবি তো শেখ মেহেদির চেয়ে ভালো বোলার। তাকে দিয়ে তো বোলিং ওপেন করেনি আফগানিস্তান। তা হলে আমরা কেন করলাম?
তিনি বলেন, আমাদের পেস বোলার তো আফগানিস্তানের চেয়ে ভালো। দেড়-দুই বছর ধরে বিশ্বমানের পেস বোলিং করছে। পেস বোলারদের প্রতি টিম ম্যানেজমেন্টের আস্থা নেই কেন? আফগানরা রশিদ খানকে বোলিংয়ে এনেছে আট নম্বর ওভারে। নবি বল করেছে দুই উইকেট পড়ার পর, ওয়ার্নার যখন ৯ বলে ৩ রানে। ওয়ার্নার সুইপ মারতে গিয়ে আউট হয়ে গেল। ওদের কত ভালো ক্রিকেট জ্ঞান, সেটি দেখাচ্ছে। ১০ বছরে ওদের ক্রিকেট জ্ঞান এত হলো, আর ২৪ বছর ক্রিকেট খেলে আমরা পারি না কেন?’
সুজন কোচের কৌশল নিয়েও প্রশ্ন তুলে বলেছেন, ‘হাথুরুসিংহে মাঠে বার্তা পাঠাতে রাজি না। রাসেল ডমিঙ্গোকেও দেখিনি। আজ আজমত উল্লাহ যখন শেষ ওভার বল করছে, তখন অ্যাডাম জাম্পা পুল করে চার মেরেছে। ব্রাভোর মুখের ওপর তখন ক্যামেরা ধরা হয়। সঙ্গে সঙ্গে ব্রাভো হাত নাড়িয়ে বলছিল– পেস অফ। ওমরজাই পেস অফ করায় জাম্পা আউট পরের বলে। এভাবে বোলার বা ব্যাটারদের বাইরে থেকে তথ্য দিতে হয়। বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, নেদারল্যান্ডস তো অস্ট্রেলিয়ার মতো অত অভিজ্ঞ না। আমাদের খেলোয়াড়দের বলতে হবে।’
শরিফুল, তাসকিনকে আইপিএল খেলতে না দেওয়াকে ভুল নীতি হিসেবে দেখেন সুজন। তবে তিনি সবচেয়ে বেশি বিরক্ত ব্যাটিং অ্যাপ্রোচ দেখে, ‘স্লো উইকেটে যখন ধরে খেলার কথা, তখন নেপালের বিপক্ষে চালিয়ে খেলে আউট হয়েছেন ব্যাটাররা।
বিসিবির এ পরিচালক জানান, ভালো উইকেট যখন এলো, তখন ঠেকিয়ে খেলল। আপনি যখন বলেছেন বোনাস, তা হলে আপনার খেলোয়াড়রা পারে না কেন? আমেরিকা, আফগানিস্তানের মতো ব্যাটিং করে না কেন? ব্যাটাররা ভয় পায় কেন? বোনাস যখন, তখন মারলেই তো হয়। হারলেই কী জিতলেই কী?’
ঊষার আলো-এসএ