ঊষার আলো প্রতিবেদক : মহানগরী দৌলতপুর খুলনা-যশোর মহাসড়কের পাশে দৌলতপুর বাজারে (বটতলা) ঢুকতেই ডানপাশে কয়েক যুগ ধরে সুনামের ব্যানারে মিষ্টির রমরমা ব্যবসা করে আসছে প্রতিষ্ঠানটির মালিক সাধন চন্দ্র সাধু। তবে ক্রেতাদের চোখে ধুলা দিয়েই অনেকটা ব্যবসা করে চলেছে এই প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিষ্ঠানটিতে তৈরী করা মিষ্টি, নাস্তা বা জনপ্রিয় সিঙ্গাড়া কিভাবে তৈরী হচ্ছে? কোন পরিবেশের তৈরী করা খাবার এখানে আসা ক্রেতা সামনে পরিবেশন করা হচ্ছে? তারা কি খাচ্ছে? তা কি কখনো ভেবে দেখেছে কি কেউ? দৌলতপুর এই জনপ্রিয় মিষ্টি ভান্ডারটিতে অস্বাস্থ্যকর আর নোংরা পরিবেশে মিষ্টি তৈরী করছে কারখানার শ্রমিকরা। পুরাতন মিষ্টির সীরা দিয়েই তৈরী হচ্ছে নতুন মিষ্টি। আধুনিক যুগে এসেও তারা খালি হাত দিয়ে শরীরের ঘাম আর ময়লায় একাকার করে তৈরী করছে প্রসিদ্ধ নানা প্রকার মিষ্টি। নোংরা পরিবেশে মান্ধাতার আমলের নিয়মে খালি হাত দিয়ে মিষ্টি তৈরী করা হচ্ছে। কারখানার প্রবেশ পথে ময়লা যুক্ত চটের বস্তা বিছানো। সমগ্র মেঝেতে টাইলাস তো দূরের কথা, ভাঙ্গা ইট আর সমগ্র মেঝ জুড়ে ময়লা আর স্যাঁতস্যাঁতে অবস্থা দৃশ্যমান। কারখানার চালে ঝুলছে কালি আর মাকড়সার দড়ি, সমগ্র দেয়ালে নোংরা তেল আর ময়লা আবরণে ভর্তি। খালি গায়ে নামে মাত্র গেঞ্জি পড়ে বসে কর্মচারিরা খাবার তথা মিষ্টি নাস্তা তৈরী করছে। গরমে ঘাম আর মাছি তো ভোক্তাদের জন্য বোনাস। কারখানার ভেতরে কয়লার ঝুড়ি আর বস্তাবন্দী কয়লার পাশে রাখা হয়েছে কড়াই ভর্তি ছানা জিলাপী। একইস্থানে সমগ্র মেঝেতে ঢাকনাবিহীন ভাবে থরে থরে সাজানো বিভিন্ন প্রকার মিষ্টি। সিঙ্গাড়া তৈরী জন্য যে আলু বসানো হচ্ছে চুলার উপর তার চতুরপাশে দুর্গন্ধময় আর্বজনা রয়েছে। কারখানার কর্মচারিরা হ্যান্ড গে¬াভস, এ্যাপ্রোন, মাক্স ও ক্যাপ ব্যবহার করে না। ফলে তৈরীকৃত মিষ্টির সাথে ধুলা ময়লা, গায়ের ঘাম মিশে খাদ্য দুষিত করছে এবং কর্মচারিদের করোনা ঝুঁকি বাড়ছে। কারখানার মেঝে কাঁদা ও ময়লা পানিযুক্ত। মেঝেতে মিষ্টিদ্রব্য রাখার ফলে মেঝের কাঁদা ময়লা ছিটে ছিটে মিষ্টির ভেতর ঢুকছে। একাধিক বার ব্যবহার করা মিষ্টির সিরা যার মধ্যে মাছি ভাসমান, সেই মিষ্টির সীরা (চিনি-পানি) নতুন মিষ্টিতে ব্যবহার করছে। দধি রাখা স্টোর রুমের ভিতর র্যাকে ও মেঝেতে রাখা দধির উপরে ময়লাযুক্ত মালামাল রাখায় দধির উপর ময়লা ও ধুলা বালি পড়ে তা দুষিত হচ্ছে। এ সবই জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাতœক ক্ষতিকর এবং খুলনা সিটি কর্পোরেশন অধ্যাদেশ ২০০৯-এর তৃতীয় তফশিলের ৩৯ ও ৬২ ধারা এবং নিরাপদ খাদ্য আইন ২০১৩-এর ৩৩ ধারা মোতাবেক জরিমানাসহ শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে কেসিসির ভেটেরিনারি বিভাগ সূত্রে জানা যায়। নগরীর দৌলতপুর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে এ প্রতিষ্ঠানটি সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক অনুষ্ঠানাদীতে মিষ্টি সরবরাহে বেশ জনপ্রিয়। অথচ সেই কারখানায় নোংরা পরিবেশে মিষ্টি তৈরী হচ্ছে।
এ ব্যাপারে খুলনা বিএসটিআই’র উপ-পরিচালক জানান, মিষ্টি দোকান পরিচালনার জন্য কোন বিএসটিআই’র লাইসেন্স লাগে না।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষন অধিদপ্তর খুলনার সহকারী পরিচালক শিকদার শাহীনুর আলম জানান, ভোক্তার অধিকার সংরক্ষন আইনের লংঘন করায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আমরা ইতিমধ্যে অভিযান পরিচালিত করছি এবং অব্যাহত আছে। যেহেতু দৌলতপুর মিষ্টান্ন দোকান গুলোতে অপরিচ্ছন্ন নোংরা পরিবেশে মিষ্টি তৈরী করা হচ্ছে তাই দ্রুতই এ সকল প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি আশ্বস্ত করেন।
প্রতিষ্ঠানের মালিক সাধন চন্দ্র সাধু অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, সিটি কর্পোরেশনের টিম প্রতি নিয়ত মিস্টির কারখানা চেক করে থাকেন। এছাড়া বিএসটিআই ও ভোক্তা অধিকারের টিম তো আছেই। দই ও ঘি’র জন্য বিএসটিআই-এর লাইসেন্স দরকার আছে। তা তার আছে বলে তিনি দাবি করেন। তিনি বলেন, মিষ্টির পুরাতন কোন সীরা রাখা হয় না। যা থাকে তা পরের দিন জিলাপিতে ব্যবহৃত হয়। আর কারখানা ফ্যান আছে, শ্রমিকদের ঘাম হওয়ার কোন সুযোগ নেই। মেঝেতে পানির কাজ করা হয়, তাই কিছু পানি থাকলেও তা ময়লাযুক্ত নয়। শ্রমিকদের হাতে গ্লোভস ব্যবহার করা হয়। কাঠ দিয়ে মিষ্টি তৈরী করার কারণে কারখানায় কাঠ পোড়ানো কালি থাকলেও মাকড়োশার জাল কোথাও নেই বলে তিনি দাবি করেন।
কেসিসির ভেটেরিনারী অফিসার ডা. রেজাউল করিম বলেন, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ যাতে না থাকে তার জন্য ভেটেরিনারী অফিসের ইন্সপেক্টররা নিয়মিত কারখানা পরিদর্শনে যান। তারপরও যদি কারখানার মালিকরা স্বাস্থ্য সম্মত উপায়ে মিষ্টি তৈরী না করে তাহলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি আশ্বস্ত করেন।