তালা প্রতিনিধি : নোংরা ও স্যাঁতসেঁতে পরিবেশের মধ্যদিয়ে পরিচালিত হচ্ছে তালা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। মাসের পর মাস অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের মধ্যে রোগীদের এখানে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। একদিকে ডাক্তার সংকট, অপরদিকে নোংরা ও দূর্গন্ধযুক্ত পরিবেশ। এসাথে করোনার প্রাদূর্ভাব। সবমিলিয়ে হাসপাতালের পরিবেশ চরম অস্বাস্থ্যকর এবং ঝুঁকির কারন হয়ে দাড়িয়েছে। ডা. রাজিব সরদার তালা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব নেবার পর এখানকার চিকিৎসা সেবা প্রদানসহ সামগ্রিক অবস্থার অবনতি হয়েছে।
তালা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক কমান্ডার মো. আলাউদ্দীন জোয়াদ্দার বলেন, তালার সাবেক ইউএনও মো. ইকবাল হোসেন হাসপাতাল পরিদর্শনকালে নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করে পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার উদ্যোগ নেন। তিনি হাসপাতালের দু’টি ওয়ার্ডে এসি’র ব্যবস্থা করেন। টয়লেটগুলো ব্যবহারযোগ্য করেন এবং ওয়ার্ডের মধ্যে ধুলা-ময়লা মুক্ত পরিবেশ গড়ে তোলেন। কিন্তু দুঃখের বিষয়, ইউএনও ইকবাল হোসেন বদলি হবার পর হাসপাতালের পরিবেশ আবারও নোংরা হয়ে উঠেছে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা আলাউদ্দীন জোয়াদ্দার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ডা. রাজিব সরদার হাসপাতালের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালনে সম্পূর্ন ব্যর্থ। হাসপাতালের উন্নয়নে ভূমিকা না রেখে তিনি নিজেকে ব্যক্তিগত ও অনৈতিক কাজে ব্যস্ত রাখেন। এজন্য ৫০ শয্যা বিশিষ্ট আধুনিক এই হাসপাতালে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। হাসপাতালের এসিগুলো নষ্ট হবার পথে। টয়লেটে গেলে অসুস্থ্য হতে হবে। ওয়ার্ডের ভিতরে ধুলাবালি আর ময়লা-আবর্জনায় রোগীদের ভোগান্তি বাড়ছে।
তালা নাগরিক কমিটির সাধারন সম্পাদক মো. শফিকুল ইসলাম জানান, তালা হাসপাতালের মতো এতো বড় প্রতিষ্ঠান চালানোর যোগ্যতা ডা. রাজিব সরদার’র নেই। তিনি হাসপাতালের উন্নয়নে পদক্ষেপ না নিয়ে মাদক সেবন এবং লুটপাট নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। এছাড়া সাবেক একজন স্টাফের সাথে যোগসাজস করে তিনি হাসপাতালে লুটতরাজ চালাচ্ছে। স্বাস্থ্য কর্মকর্তার দূর্নীতির যাতাকলে পড়ে বর্তমানে এখানে দক্ষ বা নীতিবান ডাক্তার এবং স্টাফরা বেশিদিন থাকতে পারছেনা।
শফিকুল ইসলাম বলেন, তালা উপজেলার ৪ লক্ষ মানুষের চলমান কোভিড-১৯ চিকিৎসা, পরীক্ষা ও ভ্যাকসিন নেয়া সহ পাশ^বর্তী বিভিন্ন উপজেলার কয়েকটি অঞ্চলের মানুষের জরুরী চিকিৎসার আশ্রয়স্থল তালা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। অথচ, দক্ষ পরিচালনার অভাব, খোদ স্বাস্থ্য কর্মকর্তার ক্লিনিক ও প্যাথলজি বানিজ্য, হাসপাতালে মাদকের আখড়া তৈরি, দূর্নীতি এবং অনিয়মের ফলে তালা হাসপাতালের এখন করুন অবস্থা। দিনের পর দিন এঅবস্থা চললেও দেখার যেন কেউ নেই! এমনকি, হাসপাতালের একটি স্বাস্থ্য কমিটি থাকলেও এই কমিটির সফলতা দেখা যাচ্ছেনা।
রাজনীতিক মীর জিল্লুর রহমান বলেন, নীতি বহির্ভূতভাবে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা হিসেবে পদায়িত হন হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডাক্তার রাজিব সরদার। তিনি দায়িত্ব নেয়ার পর হাসপাতালটি ধ্বংসের দিকে ধাপিত হচ্ছে।
তিনি জানান, হাসপাতালের প্রধান ফটক দিয়ে ঢুকতেই নাক চেঁপে রাখতে হয়। ফটকের দু’পাশ জুড়ে ময়লা আবজর্নার সহ মল-মূত্রের দূর্গন্ধ। ফটক হয়ে হাসপাতাল’র ভিতরকার চারিদিকে যেখানে চোখ যাবে সেখানে ময়লা-আবর্জনার ভাগাড় দেখা যাবে। হাসপাতালে থাকা বেওয়ারিশ কুকুরদল মানুষদের সবসময় আতংকের মধ্যে রাখে। হাসপাতালের নতুন ভবনের দু’টি সিঁড়িরুম প্রসাব-পায়খানা এবং আবর্জনায় ভরা। ময়লা-আবর্জনা ও পানি নিস্কাসনের ড্রেনের পাশে রোগীদের জন্য খাদ্য রান্না করা হচ্ছে।
রোববার (৫ সেপ্টেম্বর) সরেজমিন দেখা যায়, রোগী ওয়ার্ডের দেয়াল ও ছাদের পলেস্তারা এবং রংয়ের আস্তরন খসে পড়ছে। হাসপাতালের কেবিনগুলোর অনুরুপ করুন দশা। একাধিক ফ্যান, লাইট এবং সুইচ অকেজো রয়েছে।
তবে, হাসপাতালের জরুরী বিভাগ থেকে আউটডোর যাবার পথের উপর টয়লেটের পাইপ থেকে মল-মুত্রযুক্ত পানি বের হয়ে পথ প্লাবিত করছিল। সমস্যা সমাধানে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রায় ৩ সপ্তাহেও নজর দেয়নি। সংবাদকর্মীরা ওই স্থানের চিত্র ধারন করে। বিষয়টি জানতে পেরে কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে পাইপ’র ভাঙ্গাস্থান সিমেন্ট দিয়ে প্লাস্টার করে দিয়েছেন।
(ঊষার আলো-আরএম)