UsharAlo logo
শনিবার, ২৮শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৩ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আইপিএলের সর্বকনিষ্ঠ ক্রিকেটার বৈভব দিনে ৫০০ বল খেলত

usharalodesk
নভেম্বর ২৭, ২০২৪ ২:১৮ অপরাহ্ণ
Link Copied!

ক্রীড়া ডেস্ক : আইপিএলের নিলামে রাজস্থান ও দিল্লি ক্যাপিটালসের মধ্যে লড়াই হলো ১৩ বছর বয়সি বৈভব সূর্যবংশীকে নিয়ে। দুদলই তাকে নেওয়ার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ে। ৩০ লাখ টাকার দাম পৌঁছে গেল ১ কোটি ১০ লাখ টাকায়। শেষ হাসি হাসল রাজস্থান রয়্যালস।

প্রতিদিন অনুশীলনের সুযোগ হতো না বৈভবের। কারণ বিহারের সমস্তিপুরের বাড়ি থেকে পাটনার অ্যাকাডেমির দূরত্ব ছিল প্রায় ১০০ কিলোমিটার। তাই বাবা ছেলেকে অ্যাকাডেমিতে নিয়ে আসতেন একদিন অন্তর। ছেলেকে ক্রিকেটার তৈরি করার স্বপ্ন দেখা এবং তার জন্য জমি বিক্রি করে দেওয়া বাবা যেদিন নিয়ে আসতেন, সেদিন সেই ছেলে ৫০০ বল না খেলে নেট ছাড়ত না। ১৩ বছরের সেই বৈভব সূর্যবংশী সাধারণ ক্রিকেট অ্যাকাডেমি থেকে রাজস্থান রয়্যালসের নেটে এবং সেখান থেকে ছয় দিনের মধ্যে ঢুকে পড়ল আইপিএলে।

বৈভব চার বছর বয়সে বাবার হাত ধরে ক্রিকেট শেখা শুরু করে। সাড়ে সাত বছর বয়সে বৈভবের বাবা সঞ্জীব তাকে নিয়ে যান পাটনার একটি ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে। সেখানেই কোচ সৌরভ কুমার প্রথম দেখেন বৈভবকে। অবাক হয়ে গিয়েছিলেন এত কম বয়সে তার ব্যাটিং দেখে। নেটে নামার জন্য ছটফট করত বৈভব। আর সেখানে তার বয়সি বোলাররা প্রায় পাত্তাই পেত না। বড়দের সঙ্গে খেলানো হতো বৈভবকে। আনন্দবাজারের এক সাক্ষাৎকারে সৌরভ বলেন, আমরা জানতাম নিলামে রাজস্থান ওর জন্য ঝাঁপাবে। প্রায় সব দলই বৈভবের খেলার ভিডিও চেয়েছিল। দিল্লি আর রাজস্থান ট্রায়ালেও ডাকে। ১৯ নভেম্বর রাজস্থানের ট্রায়ালে গিয়েছিল বৈভব। পাঁচ দিনের মধ্যে ওরাই কিনে নিল ওকে।

মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে বৈভব। বাবা কৃষক। একটি দোকানও আছে। জমি বিক্রি করে ছেলের ক্রিকেট শেখার খরচ জুগিয়েছেন সঞ্জীব। সমস্তিপুর থেকে ভোর ৪টার সময় বেরোতে হয়। পাটনা পৌঁছতে সাড়ে ৭টা বেজে যায়। সেখানে কোচ মণীশ ওঝার কাছে প্রশিক্ষণ নেয় বৈভব। কাকভোরে খাবার বানিয়ে দেন বৈভবের মা। মণীশ বললেন, সমস্তিপুরে বৈভবের বাড়ি থেকে পাটনায় আমার অ্যাকাডেমির দূরত্ব প্রায় ১০০ কিলোমিটার। প্রতি দিন অনুশীলন করতে আসা সম্ভব ছিল না। একদিন অন্তর আসত ও। তবে যেদিন আসত অন্তত ৫০০ বল খেলত।

নিজের সঙ্গে কিছু বোলার নিয়ে আসত বৈভব। বিভিন্ন শট খেলার অনুশীলন চলত সারা দিন ধরে। খেলার এবং শেখার ইচ্ছা এতই প্রবল ছিল যে, সময়ের হিসাব থাকত না।

মণীশ বলেন, আমার কাছে আসা ছেলেদের আমি সাধারণত ১০০-২০০ বল খেলাই। বৈভব খেলত ৫০০ বল। এ বয়সটা ক্রিকেটারদের শেখার সময়। ও এত খেলে বলেই দ্রুত শিখতে পারে। একজন ক্রিকেটার যত বল খেলবে, তত শিখবে। তবে বেশি বল খেললেই সবাই যে শিখবে সেটি নয়। নেওয়ার ক্ষমতা এবং ইচ্ছাটাও প্রয়োজন। সেটি বৈভবের প্রবল।

নিলামের আগেই আলোচনায় উঠে এসেছিল বিহারের কিশোর ব্যাটারের নাম। নিলামের তালিকায় কনিষ্ঠতম ক্রিকেটার হিসাবে ছিল বৈভবই। তার ন্যূনতম দাম ছিল ৩০ লাখ টাকা। নিলামের সঞ্চালিকা মল্লিকা সাগর বৈভবের নাম ঘোষণা করতেই আগ্রহ দেখান দিল্লি কর্তৃপক্ষ। তাদের সঙ্গে টাকার যুদ্ধে নামেন রাজস্থান রয়্যালস। রাজস্থানকে নিলামে নেতৃত্ব দেন কোচ রাহুল দ্রাবিড় নিজে। দিল্লির হাতে সেই সময় ছিল ২ কোটি ২৫ লাখ টাকা। ১৮ জন ক্রিকেটারকে নেওয়া ছিল তাদের। অন্যদিকে রাজস্থানের হাতে ছিল ৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা। তাদের কেনা হয়েছিল ১৬ জন ক্রিকেটার। তুলনায় বেশি টাকা হাতে থাকায় সম্ভবত ভবিষ্যতের লগ্নি হিসাবে এগিয়ে যায় রাজস্থান। তারা ১ কোটি ১০ লাখ টাকা দাম দিতে লড়াই থেকে সরে যেতে বাধ্য হয় দিল্লি। তাতেই নতুন ইতিহাস তৈরি হলো আইপিএলে। বৈভব সূর্যবংশী হলো আইপিএলের সর্বকনিষ্ঠ ক্রিকেটার।

ঊষার আলো-এসএ