কেসিসিতে মৃত কর্মচারীর নামে বেতন উত্তোলন
খুলনা সিটি করপোরেশনে (কেসিসি) মৃত কর্মচারীর নামে বেতন তুলে মোটা অঙ্কের অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় চার জনকে শোকজ করা হয়েছে। অপরদিকে আত্মসাতকৃত টাকা পুনরায় ফিরিয়ে দিয়ে দায় মুক্তির চেষ্টা করছে অভিযুক্তরা।
এবিষয়ে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা (সিনিয়র সহকারী সচিব) সানজিদা বেগম বলেন, বিষয়টি জানতে পেরেছি এবং এবিষয়ে তদন্ত হবে। তার আগে চারজনকে শোকজ করা হয়েছে। তারা হলেন, কেসিসির সাবেক প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা আঃ আজিজ, কনজারভেন্সী বিভাগের জ্যেষ্ঠ কর্মচারী আনোয়ার হোসেন, বর্তমান শিক্ষা শাখায় কর্মরত মাস্টাররোল শ্রমিক সাইফুর রহমান, গ্যারেজ শাখায় কর্মরত শহিদুল ইসলাম। তারা সাত কর্মদিবসের মধ্যে শোকজ নোটিশের জবাব দিয়েছে। তা যাচাই বাচাই চলছে। কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান।
তিনি আরও জানান, টাকা জমা দেয়া হবে তিনি শুনেছেন। আত্মসাৎকৃত টাকা জমা দিলেই দায়মুক্তি পাবে কি’না তা এখনই পরিস্কার করে কিছু বলা যাচ্ছে না। কারণ তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কে কতটুকু দায়ী তা ইচ্ছাকৃত না অনিচ্ছাকৃত সব কিছু সনাক্ত হওয়ার পর এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
এদিকে টাকা আত্মসাতের বিষয়টি ধরা পড়ার পর যাদের নাম আলোচনায় আসছে তারা সম্প্রতি বৈঠক করেছেন। ওই বৈঠকে সমন্বয় করেন কেসিসির অবসরপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী লিয়াকত আলী খান। তিনি বৈঠকের কথা স্বীকার করে বলেন, আত্মসাৎকৃত টাকা ফেরৎ দেয়ার জন্য বৈঠকের আয়োজন করা হয়। কে কত টাকা দিবে সে ব্যাপারে আলোচনায় সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর মধ্যে সাবেক প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা আঃ আজিজ দিবেন ২ লাখ টাকা, কনজারভেন্সী শাখার জ্যেষ্ঠ কর্মচারী আনোয়ার হোসেন ২ লাখ টাকা, শিক্ষা শাখায় কর্মরত মাস্টাররোল শ্রমিক সাইফুর রহমান ১ লাখ টাকা, গ্যারেজ শাখায় কর্মরত শহিদুল ইসলাম ১ লাখ টাকা ও বিল প্রস্তুতকারি রুবেল ৬০ হাজার টাকা। এই ছয় লাখ ৬০ হাজার টাকা তারা সবাই মিলে কেসিসির সংশ্লিষ্ট ফান্ডে জমা দিবেন। এরপর তারা মেয়রের নিকট ক্ষমা চাইবেন।
সাবেক প্রধান বর্জ ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা ও বর্তমান তত্ত¡বধায়ক প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) আঃ আজিজের উপস্থিতিতে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকের কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, সমস্যাটি তারা সমাধানের চেষ্টা করছেন মাত্র। তিনি আরও বলেন, অভিযোগ ওঠার পরই শেখ শহিদুল ইসলামকে বেতন বিতরণের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
অভিযুক্ত সাইফুর রহমান অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তিনি এ টাকা আত্মসাতের সাথে জড়িত নন।
কেসিসি সূত্রে আরও জানা যায়, খুলনা সিটি করপোরেশনের মাস্টাররোল কর্মচারী হিসেবে চাকরি করতেন শেখ ইব্রাহিম। তার বাড়ি খুলনা নগরীর গোবরচাকা মেইন রোড (তামিরুল মিল্লাত মাদ্রাসার সামনে)। করপোরেশনের ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে কনজারভেন্সি শাখার স্প্রে-ম্যান হিসেবে চাকরিরত অবস্থায় ২০২০ সালের ৭মে তিনি মারা যান। দায়িত্বে থাকাকালে দৈনিক কর্মঘন্টা হিসেবে শেখ ইব্রাহিম ১৩ হাজার ৫০০ থেকে ১৬ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত বেতন পেয়েছেন। ২০২০ সালের ৭মে ইব্রাহিম মারা গেলেও মাস্টাররোল শ্রমিকের তালিকায় তার নাম রাখা হয়েছে। ফলে ২০২০ সালের ৭ মে থেকে ২০২৩ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত বেতন, বোনাসসহ সমুদয় টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। সাড়ে তিন বছরের অধিক সময়ে অন্তত সাড়ে ৬ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।
ইব্রাহিমের স্ত্রী তাসলিমা বেগম জানান, তার স্বামী মারা যাওয়ার পর তিনি কর্পোরেশনে যোগাযোগ করেছিলেন। কিন্তু কর্পোরেশন থেকে তখন তাকে মাত্র সাত দিনের বেতন দেওয়া হয়। এরপর থেকে তিনি আর কোনো টাকা পাননি।
কর্পোরেশনের কন্জারভেন্সি অফিসার মোঃ আনিসুর রহমান বলেন, কর্পোরেশনে বর্তমানে মাস্টাররোলে ৬৫১ জন এবং আউট সোর্সিংয়ের ১৩৭ জন কর্মচারী কর্মরত রয়েছেন। ইব্রাহিম মারা যাওয়ার পর থেকে তার নামে বেতন ও বোনাসের টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। মাস্টাররোল ও আউটসোর্সিং শ্রমিকদের বেতনশিট প্রস্তুত এবং বেতন প্রদানের আগে দায়িত্বে ছিলেন কনজারভেন্সি শাখায় কর্মরত সাইফুল ইসলাম (মাস্টাররোল শ্রমিক)। পরে দায়িত্ব পালন করেন গ্যারেজ শাখার মেকানিক সহকারী হিসেবে কর্মরত শেখ শহিদুল ইসলাম।
কনজারভেন্সি অফিসার আরও বলেন, কনজারভেন্সি অফিসার হিসেবে তিনি দায়িত্ব গ্রহণ করার পর তিন মাস আগে জাহাঙ্গীর নামের অপর কর্মচারীকে বেতনশিট প্রস্তুত ও বেতন বিতরণের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তখন দেখা যায় আগস্ট, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর এই তিন মাস ইব্রাহিম বেতন নিতে আসেন না। তখন বিষয়টি নজরে আসে। এরপর বিষয়টি মেয়র ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অবহিত করা হয়।