কেসিসিতে মৃত কর্মচারীর নামে বেতন উত্তোলন করে টাকা আত্মসাতের ঘটনায় ৩ কর্মচারিকে চাকুরিচ্যুত
খুলনা সিটি করপোরেশনে (কেসিসি) মৃত কর্মচারীর নামে বেতন তুলে মোটা অঙ্কের অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় তিন কর্মচারিকে চাকুরিচ্যুৎ করা হয়েছে। চাকুরিচ্যুৎ কর্মচারিরা হলো-কেসিসির লাইব্রেরী শাখার অফিস সহায়ক সাইফুর রহমান, কনজারভেন্সী বিভাগের কর্মচারী মোঃ রুবেল ও গ্যারেজ শাখায় কর্মরত শহিদুল ইসলাম । এরা সবাই মাস্টাররোল শ্রমিক।
গত ২০ ডিসেম্বর খুলনা সিটি কর্পোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা ও ভারপ্রাপ্ত সচিব সানজিদা বেগম স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে তাদের চাকুরি হতে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
ভারপ্রাপ্ত সচিব সানজিদা বেগম ঊষারআলোকে বলেন, মৃত শ্রমিকের টাকা আত্মসাতের ঘটনায় তিনজন কর্মচারিকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। এ বিষয় অন্য কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে কি না-বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। যেহেতু আত্মসাৎকৃত টাকা অভিযুক্তরা কেসিসির কোষাগারে ফেরৎ দিয়েছে। তাই তাদের বিরুদ্ধে আর কোন ব্যবস্থা নেয়া হবে কি না সে বিষয়ে এখনও কোন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি।
এর আগে গত ১১ ডিসেম্বর কেসিসির কোষাগারে আত্মসাৎকৃত ৬ লাখ ৭ হাজার টাকা জমা দেয়া হয়েছে। কনজারভেন্সী বিভাগের জ্যেষ্ঠ কর্মচারী আনোয়ার হোসেন স্বাক্ষরিত ওই চেক কেসিসির ফান্ডে জমা দেয়া হয়। যার সত্যতা স্বীকার করেন চাকুরিচ্যুত কর্মচারি সাইফুর রহমান।
এদিকে এ ঘটনায় আগে চারজনকে শোকজ করা হয়। তারা হলেন, কেসিসির সাবেক প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা আঃ আজিজ, কনজারভেন্সী বিভাগের জ্যেষ্ঠ কর্মচারী আনোয়ার হোসেন, বর্তমান শিক্ষা শাখায় কর্মরত মাস্টাররোল শ্রমিক সাইফুর রহমান, গ্যারেজ শাখায় কর্মরত শহিদুল ইসলাম। তারা সাত কর্মদিবসের মধ্যে শোকজ নোটিশের জবাব দিয়েছে। তা যাচাই বাচাই চলছে।
এদিকে টাকা আত্মসাতের বিষয়টি ধরা পড়ার পর যাদের নাম আলোচনায় আসছে তারা সম্প্রতি বৈঠক করেছেন। কে কত টাকা দিবে সে ব্যাপারে আলোচনায় সিদ্ধান্ত হয়েছে। এনিয়ে ঊষার আলোতে সংবাদ প্রকাশ হয়। ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য আত্মসাতকৃত টাকা ফেরত দিতে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে সাবেক প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা আঃ আজিজ দেন ২ লাখ টাকা, কনজারভেন্সী শাখার জ্যেষ্ঠ কর্মচারী আনোয়ার হোসেন ২ লাখ টাকা, শিক্ষা শাখায় কর্মরত মাস্টাররোল শ্রমিক সাইফুর রহমান ১ লাখ টাকা, গ্যারেজ শাখায় কর্মরত শহিদুল ইসলাম ১ লাখ টাকা ও বিল প্রস্তুতকারি রুবেল ৬০ হাজার টাকা। এই ছয় লাখ ৬০ হাজার টাকা তারা সবাই মিলে কেসিসির সংশ্লিষ্ট ফান্ডে জমা দেন।
অভিযুক্ত সাইফুর রহমান অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তিনি এ আত্মসাতের সাথে জড়িত নন। আনোয়ার এ ঘটনায় মূল অপরাধী। কিন্তু কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় তিনি হতাশ।
কেসিসি সূত্রে আরও জানা যায়, খুলনা সিটি করপোরেশনের মাস্টাররোল কর্মচারী হিসেবে চাকরি করতেন শেখ ইব্রাহিম। তার বাড়ি খুলনা নগরীর গোবরচাকা মেইন রোড (তামিরুল মিল্লাত মাদ্রাসার সামনে)। করপোরেশনের ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে কনজারভেন্সি শাখার স্প্রে-ম্যান হিসেবে চাকরিরত অবস্থায় ২০২০ সালের ৭মে তিনি মারা যান। দায়িত্বে থাকাকালে দৈনিক কর্মঘন্টা হিসেবে শেখ ইব্রাহিম ১৩ হাজার ৫০০ থেকে ১৬ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত বেতন পেয়েছেন। ২০২০ সালের ৭মে ইব্রাহিম মারা গেলেও মাস্টাররোল শ্রমিকের তালিকায় তার নাম রাখা হয়েছে।
ফলে ২০২০ সালের ৭ মে থেকে ২০২৩ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত বেতন, বোনাসসহ সমুদয় টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। সাড়ে তিন বছরের অধিক সময়ে অন্তত সাড়ে ৬ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।
ইব্রাহিমের স্ত্রী তাসলিমা বেগম জানান, তার স্বামী মারা যাওয়ার পর তিনি কর্পোরেশনে যোগাযোগ করেছিলেন। কিন্তু কর্পোরেশন থেকে তখন তাকে মাত্র সাত দিনের বেতন দেওয়া হয়। এরপর থেকে তিনি আর কোনো টাকা পাননি।