UsharAlo logo
শুক্রবার, ১০ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৬শে পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

আমার ছেলে মারা যাবে তা কল্পনা করা যায় না : নিহত টিপুর বাবা

হাসিবুর রহমান হাসিব
জানুয়ারি ১০, ২০২৫ ৮:৪২ অপরাহ্ণ
Link Copied!

গোলাম আকবর মাস্টারের বয়স এখন ৮৭ । ছেলের অকাল মৃত্যুকে মেনে নিতে পারছেন না। বাসার সামনে চেয়ার বসে আছেন ছেলের লাশ আসার অপেক্ষায়। কারণ তার ছেলেকে বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) রাত ৮টার দিকে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সিগাল পয়েন্টে খুলনা সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর ও সেচ্ছাসেবক লীগ নেতা গোলাম রাব্বানী টিপুকে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। সেখান থেকে খুলনায় আজ তার ছেলের লাশ পৌছাকে। নিহতের পিতা গোলাম আকবর মাস্টার বলেন, তিন ছেলে এক মেয়ের মধ্যে টিপু ছিলো সেজ। ‘আমার সহ্য সীমার বাইরে, কারন আমার ছেলে মারা যাবে তা কল্পনা করা যায় না’। আমার ছেলেকে যারই হত্যা করেছেন তারা ধরা পড়–ক, তাদের বিচারের দাবি জানাই। টিপু হত্যাকা-ে বৃহস্পতিবার রাতে খুলনা সিটি করপোরেশনের আরেক কাউন্সিলর শেখ হাসান ইফতেখার ওরফে চালুসহ দুইজনকে আটক করেছে র‌্যাব-১৫। চালু খুলনার ১৬ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর। তিনি ওই ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। আটক অপরজন মেজবাহ হক ভুট্টো।

তিনি কক্সবাজার শহরের টেকপাড়ার বাসিন্দা। র‌্যাব-১৫ এর অধিনায়ক লে. কর্ণেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন জানান, ইফতেখারকে কক্সবাজার শহরের কলাতলী সড়কের হোটেল গোল্ডেন হিল থেকে রাত ১২টার পর আটক করা হয়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে জানিয়ে র‌্যাব-১৫ এর অধিনায়ক বলেন, ইফতেখারসহ নিহত গোলাম রব্বানী টিপু বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) সকালে কক্সবাজারে আসেন। হোটেল গোল্ডেন হিলের ‘অতিথি লিপিবদ্ধ বই’ এ দেখা গেছে আটক ইফতেখার, নিহত গোলাম রব্বানী টিপুর সাথে রুমি (২৭) নামের এক নারীও সকাল ৭টায় হোটেলে উঠেন। বৃহস্পতিবার ( ৯ জানুয়ারি) সকালে ঢাকা থেকে সে কক্সবাজারে আসেন। পরে আমরা রাতে জানতে পারি সে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন।

এলাকাবাসি জানায়, গোলাম রব্বানী টিপু কাউন্সিলর হওয়ার পর গত ২০২৪ সালে ৭ এপ্রিল ভোর রাতে দেয়ানা উত্তরপাড়া হোসেন শাহ রোডস্থ নিজ বাড়িতে মোটরসাইকেল যোগে আসা দুর্বৃত্তরা তিনটি ককটেল বোমা নিক্ষেপ করেন। দুর্বৃত্তরা বোমা ছুড়েই মোটরসাইকেল যোগে পালিয়ে যায়। নিহতের বড় ভাই গোলাম রব্বানী বাদশার সাথে কথা হয়। তিনি বলেন, আমাদেরকে রাতে (বৃহস্পতিবার) কক্সবাজার থানা থেকে ফোন দেয়। আমরা টিপুর আইডিকার্ড ও গুলিবিদ্ধ ছবিগুলো পাই। আমরা রাত ১০-১১টার দিকে কনফর্ম হই যে, সে আততায়ী গুলিতে নিহত হয়েছে। আমাদের লোকাল প্রশাসন কোন ফোন দেয়নি। আমার ছোট ভগ্নিপতি পুলিশ ইন্সপেক্টর ইউনুস তাকে পাঠানো হয়েঠে লাশ আনতে। যেস কোন সন্ত্রাসী পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী তাকে হত্যা করেছে। এ বিষয়ের আমার জানা মতে, কক্সবাজার এলাকায় কোন শত্রু ছিলো না। খুলনা ভিত্তিক রাজনৈতিক হোক বা এলাকা ভিত্তিক শত্রু থেকে তার যারা শত্রু-মিত্রু তারাই কোন না কোন ভাবে ওখানে গিয়ে হত্যাকা- ঘটনা ঘটিয়েছে।

জানা গেছে, খুলনার দৌলতপুর থানাধীন দেয়ানা উত্তরপাড়া হোসেন শাহ রোড এলাকার বাসিন্দা গোলাম আকবর। তিনি সাবেক খালিশপুর মহাসিন স্কুলের সাবেক শিক্ষক ছিলেন। পৈত্রিক সূত্রে তার গ্রামের বাড়ি খুলনার রূপসা উপজেলার ৫নং ঘাটভোগ ইউনিয়নের আনন্দ নগর এলাকায়। তার তিন ছেলে ও এক মেয়ে। বড় ছেলে গোলাম রসুল বাদশা খালিশপুর বঙ্গবাসি মাধ্যমিক বিদ্যালয় সহকারি শিক্ষক। ছোট ছেলে গোলাম রহমান মিন্টু। পেশায় একজন ব্যবসায়ী। ইজিবাইক ভাড়া দিতো এবং নিজেও চালাতো। ছোট মেয়ে হ্যাপী একজন গৃহিনী। নিহত গোলাম রব্বারী টিপু তিন ভাই বোনের মধ্যে মেঝ ছিলেন। নিহত টিপুর এক ছেলে ও এক মেয়ে। বড় ছেলে তাসিন রব্বানী রাহাত এবার ৭ম শ্রেনীতে ফুলবাড়িগেট গভ: ল্যাবরেটরি হাই স্কুলে পড়া শুনা করে। ছোট মেয়ে ওয়াজিয়া রব্বানি রায়না (৬) দৌলতপুর পাবলা এলাকায় সবুজ সাথী প্রিক্যাডেট স্কুলে পড়াশুনা করে। তার স্ত্রী সাবিনা আক্তার ওরফে শ্যাম্পো। একজন গৃহিনী।

এ ব্যাপারে দৌলতপুর থানার ওসি মীর আতাহার আলী গতকাল শুক্রবার দুপুরে বলেন, আমরা গত রাতে আপনাদের মতো সাংবাদিকদের কাছ থেকে টিপুকে কক্সবাজারে সন্ত্রাসীরা গুলি করে মেরে ফেলেছেন। এর বেশি কিছু জানি না। নিহতের পরিবারের বাসায় যাওয়া হয়নি বলে তিনি উল্লেখ করেন।

ঊ/আ-এইচআর