UsharAlo logo
শুক্রবার, ২১শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৮ই ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আসছে নতুন দল : নাহিদ আহবায়ক-সদস্য সচিব আখতার

ঊষার আলো ডেস্ক
ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২৫ ২:৩৭ অপরাহ্ণ
Link Copied!

জুলাই ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে হাসিনা সরকারের পতনে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রদের উদ্যোগে নতুন রাজনৈতিক দল চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে ঘোষণা হতে যাচ্ছে। সূত্রগুলো বলছে, এক দফা আন্দোলনের ঘোষক ও তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম আগামী ১৮ বা ১৯ ফেব্রুয়ারি পদত্যাগ করে নতুন দলে যুক্ত হবেন। তিনি এই দলের আহবায়ক হবেন এটা প্রায় চুড়ান্ত। আর সদস্য সচিব হবেন আখতার হোসেন। আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি দল ঘোষণার প্রাথমিক তারিখ নির্ধারন করা হয়েছে। একই সঙ্গে ২৫ বা ২৬ তারিখের বিষয়েও ওই ফোরামে আলোচনা হয়েছে।

প্রাথমিকভাবে নাগরিক কমিটির ৭০ জন এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৩০ জন থেকে ৫১ অথবা ১০০ সদস্যর নাম ঘোষণা করা হবে। পর্যায়ক্রমে এই সংখ্যা আরও বাড়বে। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে এই দলের ঘোষণা আসবে। জুলাইয়ের দুই হাজার শহীদ পরিবার এবং ৩১ হাজার আহত ব্যাক্তিদের সামনে রেখেই দল ঘোষণা করা হবে। তার আগে আগামী ২০ তারিখ ছাত্রদের অংশ থেকে নতুন একটি ছাত্র সংগঠনের ঘোষণা করা হবে। সেখানে জুলাই অভ্যুত্থানে ভূমিকা রাখা ছাত্রদের নিয়ে শক্তিশালী এক বা একাধিক উইং থাকবে।

নাগরিক কমিটি ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সূত্রে জানা গেছে, রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত দলের নাম কি হতে পারে তা এখনো ঠিক হয়নি।  তবে আগামী ২/১ দিনের মধ্যেই নাম চুড়ান্ত করা হবে। এর আগে ২০ ফেব্রুয়ারি বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমিটি ঘোষণা করা হবে। সদস্য সচিব কে হবেন এটা নিয়ে নানা আলোচনার মধ্যে আখতার হোসেনকেই সবাই এগিয়ে রেখেছেন।

তাছাড়া জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসির উদ্দিন পাটওয়ারী, প্রধান সংগঠক সারজিস আলম এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ, প্রধান সংগঠক আব্দুল হান্নান মাসুদ ও সমন্বয়ক মাহিন সরকার, নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন ও সমন্বয়ক উমামা ফাতেমা এবং জুলাই অভ্যুত্থানে ভূমিকা রাখা রাফে সালমান রিফাত, আলী আহসান জোনায়েদ ও আরিফিন মোহাম্মদ হিজবুল্লাহসহ আরও বেশ কয়েকজনের নাম  গুরুত্বপূর্ণ পদে রাখার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, শহীদ পরিবারের চাওয়া, চাহিদা এবং তাদের পরামর্শকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েই নতুন দলের ঘোষণা আসবে। একইসাথে চব্বিশের আন্দোলনে আহত যোদ্ধাদের রাখা হবে গুরুত্বপূর্ণ মর্যাদায়। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের দল ঘোষণার পর জুলাই আন্দোলনের প্রথম শহীদ রংপুরের আবু সাঈদের বাড়ি থেকে লংমার্চ শুরু করে চট্টগ্রামের শহীদ ওয়াসিমের বাড়ি পর্যন্ত লংমার্চ করার প্রাথমিক কর্মসূচী ঠিক করা হয়েছে। এই লংমার্চ চলবে অন্তত ১৫ দিন। ১৫ দিনে পথে পথে কর্মসূচিতে সব দল মতের মানুষের অংশগ্রহনের পাশাপাশি অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিক্রিয়াও জানা যাবে। রাজপথে লংমার্চ থেকে উত্তর দেওয়ায়ও সুবিধার হবে।

ছাত্র নেতৃত্বদ্বয় বলছেন, নতুন দল গঠন হলেও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং জাতীয় নাগরিক কমিটি অরাজনৈতিক সংগঠন হিসেবেই থাকবে। এই প্লাটফর্ম স্ব স্ব অবস্থায় থাকবে। যে প্লাটফর্ম থেকে হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে সেই প্লাটফর্ম প্রেসার গ্রুপ হিসেবে কাজ করবে। একই সঙ্গে চব্বিশের ছাত্রজনতার সকল হত্যার বিচার বাস্তবায়ন পর্যন্ত এটি কাজ করে যাবে। ইতোমধ্যে দক্ষ ও অভিজ্ঞদের দ্বারা তৈরি করা হচ্ছে দলীয় নতুন গঠনতন্ত্র। ১৯৪৭, ১৯৭১ এবং ২০২৪-এর চেতনার ওপর ভিত্তি করেই এইসব তৈরি হয়েছে। সংবিধান বিশেষজ্ঞ, রাজনীতি, কূটনীতিতে অভিজ্ঞ এবং বিশ্বব্যাপী রাজনীতির গ্রহণযোগ্যতাকে প্রাধান্য দিয়েই দলের মূল ভিত্তি দাঁড় করানো হচ্ছে। বিশেষ করে তরুণদের চাওয়া ও চাহিদা থাকবে বেশি অগ্রাধিকার।

নতুন দলে নেতৃত্বে আসছে এমন কয়েকজন জানিয়েছেন, দুই রাজনৈতিক দলের ওপর দেশের মানুষ অনেক বিরক্ত। এই দলগুলো নিজেদের সঠিকভাবে সংস্কার করতে পারে না এবং তরুণদের বেশি অগ্রাধিকার দেয় না। যার পেশি শক্তি রয়েছে, অবৈধ পথে সম্পদ রয়েছে এমন ব্যক্তিদের জনপ্রতিনিধি বানানো হয়। ফলে দেশের জনগণ অধিকার এবং সেবা থেকে বঞ্চিত হয়। তরুণরা কী চায় দেশের রাজনৈতিক দলগুলো অগ্রাধিকার দেন না। দলের ভাবনাকেই তারা সব সময় গুরুত্ব দেন।

ফলে একটা দল ১৫ বছর অবৈধ ভোটে ক্ষমতায় ছিল এবং আরেকটা দল নিজেদের সংস্কারের জন্য দলে কাউন্সিল পর্যন্ত করেনি। সিলেকশনের মাধ্যমে তারা নেতা নির্বাচন করেছেন। নিজ দলের মধ্যে মতামত প্রকাশ, ভোট দেওয়ার রীতি চালু করতে পারেননি। তাই তারুণ্যের বড় একটা অংশ হাসিনার পতনের নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রদের নতুন রাজনৈতিক দলে ভরসা, আস্থা রাখবেন বলে আশা করছেন তারা। নতুন রাজনৈতিক দলে যারা আসছেন, তারা মনে করছেন, আন্দোলন করে যে ছাত্ররা হাসিনাকে সরাতে পেরেছে, দেশকে দ্বিতীয়বার বিজয় করেছে, এমন তরুণরা কেউ আর পুরনো দলে যাবেন না। গত ১৫ বছর একটি দলের শাসনে সাধারণ মানুষ বিরক্ত আরেকটি দলের ব্যর্থতায় মানুষ অতিষ্ঠ। এখন মানুষ তরুন শক্তিকে খুঁজে নেবে।

নাগরিক কমিটির যুগ্ন আহবায়ক আরিফুল ইসলাম আদিব বলেছেন, আমাদের সবারই প্রত্যাশা নাহিদ ভাই পদত্যাগ করে রাজনৈতিক দলের আহ্বায়ক হোক এর পাশাপাশি সদস্য সচিব হিসেবে আখতার হোসেন ভাই সবারই পছন্দের। পাশাপাশি নাছির উদ্দিন পাটওয়ারী, সারজিস ভাই, হাসনাত ভাইসহ আরও অনেকে আলোচনায় রয়েছেন। তবে এ বিষয়গুলো এখনো আলোচনার মধ্যে রয়েছে। যারা ২৪ এর আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছেন সবারই মতামত নেওয়া হচ্ছে, অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। সবাইকে নিয়ে দল ঘোষণা করা হবে আমরা আশা করছি । আগামী একুশে ফেব্রুয়ারির পর অর্থাৎ ২৫ তারিখের আগে কিংবা পরে দল গঠন হবে।

নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় নেতা এস এম সুজা বলেন, আগামী একুশে ফেব্রুয়ারির পরপরই নতুন দলের যাত্রা শুরু হবে। সবাইকে নিয়ে নতুন রাজনৈতিক দল গঠিত হবে। আপাতত নাহিদ ভাই দলের আহবায়ক হবেন এ বিষয়টা প্রায় চূড়ান্ত। বাকি পদগুলোর বিষয় এখনো ফোরামে আলোচনা চলছে।

নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন বলেন, ‘আমরা একটা সম্ভাব্য তারিখ নিয়ে আলোচনা করেছি, আজকেও সাধারণ সভা ছিল। এ বিষয়ে একটি প্রস্তুতি কমিটি গঠন করা হচ্ছে, দ্রুতই তার ঘোষণা করা হবে। জনগণ প্রত্যাশা করে অভ্যুত্থানের পক্ষে শুধু একটিই দল হবে, যা দেশের নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের নতুন সূচনা করবে।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, পূর্ববর্তী রাজনৈতিক দলগুলোর মতো কোনো আদর্শ আমরা চাপিয়ে দিতে চাই না। আমরা জনগণের মতামতের ভিত্তিতে নিজেদের আদর্শ গড়তে চাই। ২৪ এরপর মানুষের মনে নতুন যে প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে, সেটিকে ধারণ করে ফ্যাসিবাদবিরোধী জনতাকে সঙ্গে নিয়ে রাজনৈতিক দল গঠন হবে।

ঊআ-বিএস