আগামী ডিসেম্বরে জাতীয় সংসদ নির্বাচন করার লক্ষ্যে প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম এগিয়ে নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গত সোমবার পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ডিসেম্বরে সংসদ নির্বাচন হবে।
দেশে নির্বাচনি আবহ বিরাজ করছে। নির্বাচনে অংশ নিতে গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশ ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি’ নামে নতুন রাজনৈতিক দলও গঠন করেছে। আরও কিছু নতুন দল গঠন হতে যাচ্ছে।
পাশাপাশি নির্বাচনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার কমিশনগুলোর সুপারিশের ওপর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপ করছে অন্তর্বর্তী সরকার।
নির্বাচন ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা জানান, ৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে এবার নতুন এক পরিবেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে যাচ্ছে। ২০১৪ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত একতরফা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যেসব নাগরিক ভোট দিতে পারেননি, এ নিয়ে তাদের ক্ষোভ আছে। তাদের সবাই এবার ভোটকেন্দ্রে যাবেন। তারা পছন্দের প্রার্থী দেখে ভোট দেবেন।
এতে নির্বাচনে একদিকে ভোট পড়ার হার বাড়বে, অন্যদিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নির্বাচন কমিশন কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে। তেমনি রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনে জয় পেতে অগ্নিপরীক্ষায় পড়তে হবে। দলগুলোকে প্রার্থী বাছাই থেকে শুরু করে মনোনয়ন দেওয়া পর্যন্ত তরুণদের পছন্দ আগ্রহ-অনাগ্রহের বিষয় বিবেচনায় রাখতে হবে। এতে নতুন এবং তুলনামূলক কম বয়সি প্রার্থীর সংখ্যা বাড়তে পারে।
তারা আরও জানান, অতীতে যেসব নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হয়েছিল, সেগুলোতে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ ভোটের ব্যবধানে জয়-পরাজয় নির্ধারিত হয়। এবার নির্বাচনে যে রাজনৈতিক দল বা জোট তরুণদের ভোট বেশি টানতে পারবে, নির্বাচনে তারাই ভালো ফল পাবে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল বা জোটের জয়-পরাজয় নির্ধারণ তরুণ ভোটাররাই হবে ট্রাম্পকার্ড। দেশে তরুণ ভোটার তিন কোটি চার লাখ সাত হাজার। তাদের বয়স ১৮ থেকে ২৯ বছর। মোট ১২ কোটি ৪৪ লাখ ৮০ হাজার ভোটারের মধ্যে ২৪ দশমিক ৪২ শতাংশই তরুণ। এদের বড় অংশই শিক্ষার্থী। এদের অধিকাংশই ফ্যাসিস্টদের বাধায় আগে ভোট দিতে পারেনি।
৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থান পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এদের বড় অংশ প্রথমবারের মতো চাপমুক্তভাবে ভোট দেওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। এরা শুধু ভোটের ফল নয়, দলগুলোর প্রার্থী মনোনয়নের ধারা পালটে দিতেও ভূমিকা রাখতে পারে।
এসব বিষয় মাথায় রেখে নির্বাচনে জয়ের জন্য তরুণদের ভোট টানতে নানা ছক কষছে বিএনপি, জামায়াতসহ অন্য দলগুলো। একই সঙ্গে পালন করছে নানা কর্মসূচি, নির্ধারণ করছে কৌশল। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কোনো রাজনৈতিক দল তরুণদের ৫ শতাংশ ভোট পেলে সে প্রতিদ্বন্দ্বী দলের চেয়ে ১০ শতাংশ এগিয়ে যাবে, এটাই ভোটের সরল হিসাব। আর তিন কোটি তরুণ তো বিরাট সংখ্যা। যদিও তাদের মধ্যে রাজনৈতিক কিছুটা বিভাজন রয়েছে, তবুও তরুণ ভোটাররা আগামী নির্বাচনে ফলাফল নির্ধারণে বিরাট ভূমিকা রাখবে।
তিনি বলেন, তরুণরা শুধু নির্বাচন নয়, রাজনীতিতেই ফ্যাক্টর হিসাবে আভির্ভূত হয়েছেন। ৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে প্রকাশ্য নেতৃত্বে ছিলেন তরুণরা। বুলেটের সামনে আবু সাঈদসহ যারা বুক পেতে দিয়েছেন তাদের প্রায় সবাই বয়সে তরুণ। তারা একটি ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন ঘটিয়েছেন। তারা সম্মুখযোদ্ধা। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দেশের রাজনীতি ও নির্বাচনে তরুণ নেতৃত্বের গুরুত্ব বেড়েছে। ৫ আগস্টের পর সরকার ও দেশের রাজনীতি সংস্কারের দাবি উঠেছে। সেই দাবির সঙ্গে শুধু তরুণরা নয়, অনেক মধ্যবয়স্ক ও বয়স্কদেরও সমর্থন রয়েছে। প্রথাগত রাজনৈতিক সংস্কারের দাবি জনআকাঙ্ক্ষায় পরিণত হয়েছে।
নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের মতে, এবার সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রেক্ষাপটে নির্বাচন হতে যাচ্ছে। অতীতে দেশে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন হছে ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ সালে। এসব নির্বাচনের ফলাফলে দেখা গেছে কমবেশি ১০ শতাংশ ভোটে জয়-পরাজয় নিশ্চিত হয়েছে।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত ২০১৪ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনে বিএনপিসহ বেশির ভাগ দল অংশ নেয়নি। ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত অংশ নিলেও রাতের ভোট হিসাবে খ্যাতি পাওয়া ওই নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। কাজেই এসব নির্বাচনে জয় বা পরাজয়ের ভোটের হিসাব কোনো কাজে আসবে না।
ঊষার আলো-এসএ