বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পর গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগ পতনের পর ৮ আগস্ট নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়। এ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা হয়েছেন অধ্যাপক আসিফ নজরুল। তিনি সুইজারল্যান্ডের জেনেভাস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস ও স্থায়ী মিশনে যান। সেখানে আওয়ামী লীগের কর্মীদের হাতে হেনস্তার শিকার হন এ আইন উপদেষ্টা।
বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) রাতে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। ১ মিনিট ৪৩ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, একদল আওয়ামী লীগের সমর্থক ঘিরে ধরেছেন আসিফ নজরুলকে। তার সঙ্গে উত্তেজিত ভাষায় তর্ক করছেন তারা। বারবার প্রশ্ন করছেন— ‘আপনি মিথ্যা বলেছেন।’ হেনস্তার শিকার হোন আইন উপদেষ্টা। এতেই ক্ষুব্ধ হয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বিনোদন জগতের সংগীতাঙ্গনের জনপ্রিয় সংগীত পরিচালক প্রিন্স মাহমুদ।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্টে তিনি বলেছেন, সুইজারল্যান্ডে আসিফ নজরুলকে হেনস্তাকারী কাউকে ছাড়া হবে না। একই কথা বলেছেন আরেক গীতিকার লতিফুল ইসলাম শিবলী।
প্রিন্স মাহমুদ বলেন, আসিফ নজরুল ভাইকে এয়ারপোর্টে হেনস্তাকারী কাউকে ছাড়া হবে না । প্রবাসী যারা সুইজারল্যান্ডে আছেন, তাদের খুঁজে বের করুন। এদের নাম-ঠিকানা ও পরিচয় প্রকাশ করুন। বাংলাদেশে কোথায় এই গণহত্যাকারীর দোসররা থাকেন ঠিকানা বের করুন।
তিনি বলেন, আসিফ ভাই চাইলে আগের আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের মতো দেশের টাকা লুটপাট করে ১০০ জনের লট বহর নিয়ে বিদেশে সফর করতে পারতেন, কিন্তু সেটি না করে তার মতো একজন রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি সাধারণ সিটিজেনদের মতো একা বিদেশ সফর করে উদাহরণ সৃষ্টি করলেন।
জনপ্রিয় এ সুরকার বলেন, আসিফ ভাইকে একা পেয়ে আওয়ামী কাপুরুষরা যা করেছে, তাদের নিশ্চয়ই মনে আছে— তাদের খুনি নেত্রী বিদেশ সফরে গেলে জনতার প্রতিবাদের ভয়ে শত দেহরক্ষী ও স্তাবক চামচা পরিবেষ্টিত হয়েও হোটেলের পেছনের দরজা দিয়ে চলাফেরা করতে হতো। আসিফ নজরুল ভাই, ভালো মানুষদের এমনই হয়।
প্রিন্স মাহমুদ বলেন, আপনি এভাবেই বিদেশ সফর করবেন, আর মনে রাখবেন— আপনি একা না, কিছু আওয়ামী দুর্বৃত্ত ছাড়া পুরো দেশ দাঁড়িয়ে আছে আপনার পাশে। তিনি বলেন, গণহত্যাকারী স্বৈরাচারী বরাহ শাবকদের কঠিন শাস্তি নিশ্চিত করা জরুরি। এদের প্রতি দরদ দেখাবেন, এদের নিকটজনরা দেশের বাইরে এ রকম আচরণ করতে থাকবে। স্বৈরাচারের দোসরদের ছাড় দেওয়ার ওসিয়ত নামাটা পাওয়া গেল।
এদিকে সুইজারল্যান্ডের জেনেভাস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস ও স্থায়ী মিশন সূত্রে জানা যায়, সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) গভর্নিং বডি এবং সংস্থাটির গুরত্বপূর্ণ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) দেশে ফিরছিলেন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। দূতাবাসের প্রটোকলে তিনি গাড়ি করে সুইজারল্যান্ডের জেনেভা বিমানবন্দরে পৌঁছান। এ সময় দূতাবাসের প্রটোকল আইন উপদেষ্টার সঙ্গে ছিল। গাড়ি বিমানবন্দরে নামার পর একদল লোক এসে আইন উপদেষ্টাকে ঘিরে ধরেন। উপদেষ্টা জেনেভা বিমানবন্দরে প্রবেশের আগ পর্যন্ত হেনস্তাকারী তাকে বিরক্ত করেছেন।
সুইজারল্যান্ডের বেশ কয়েকটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, সুইজারল্যান্ডের জেনেভা বিমানবন্দরে আইন উপদেষ্টাকে হেনস্তাকারীরা আওয়ামী লীগের সমর্থক। সেখানে সুইজারল্যান্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি নজরুল ইসলাম জমাদার ও সাধারণ সম্পাদক শ্যামল খান উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, আইএলওর গভর্নিং বডির বৈঠকে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ছাড়াও শ্রম উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকীও অংশ নেন।