ড. সাঈদুর রহমান: ইংল্যান্ড-নিউজিল্যান্ড ম্যাচ দিয়ে শুরু হচ্ছে এবারের বিশ্বকাপ। আগামীকাল বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) বাংলাদেশ সময় দুপুর আড়াইটায় আহমেদাবাদে ম্যাচটি শুরু হবে। চার বছর আগে ২০১৯ সালের ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপের ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল এই দুই দল। কার্ডিফের সেই ফাইনাল ম্যাচে স্কোর টাই হয়ে গিয়েছিল। তারপর বাউন্ডারি নিয়মে ম্যাচ জিতেছিল ইংল্যান্ড আর রানার্সআপ হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিল নিউজিল্যান্ডকে। সেদিন একরাশ হতাশা গ্রাস করেছিল নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেটারদের। চার বছর পর আবারও বিশ্বকাপ এসেছে এবং প্রথম ম্যাচেই সেই দুই দল আবারও মুখোমুখি। সেবারের সেই দুর্বল বাউন্ডারি নিয়মের কারণে ফাইনালে হেরে যাওয়া নিউজিল্যান্ড আগামীকাল কি পারবে প্রতিশোধ নিতে? নাকি হতাশা দিয়ে শুরু করতে হবে এবারের বিশ্বকাপ।
ইংল্যান্ড এবং নিউজিল্যান্ড ম্যাচে আমার মতে ইংল্যান্ড ফেভারিট। যদিও পরিসংখ্যান কোন দলের দিকেই খুব একটা ঝুঁকে নেই। ইংল্যান্ড এবং নিউজিল্যান্ড একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এ পর্যন্ত ৯৫ বার পরস্পরের মুখোমুখি হয়েছে। এর মধ্যে ইংল্যান্ড জিতেছে ৪৫ বার, নিউজিল্যান্ড জিতেছে ৪৪ বার, ২টা ম্যাচ টাই হয়েছে, আর চারটি ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়েছে। মাত্র গত মাসেই ইংল্যান্ডের মাটিতে ইংল্যান্ড এবং নিউজিল্যান্ড চারটি ওডিআই ম্যাচ খেলেছে, যেখানে তিনটিতে জিতেছে ইংল্যান্ড এবং একটিতে জিতেছে নিউজিল্যান্ড। চার ম্যাচের সিরিজের প্রথম ম্যাচটি নিউজিল্যান্ড ৮ উইকেটে জিতলেও এরপর তিনটি ম্যাচে নিউজিল্যান্ডকে বড় ব্যবধানে পরাজিত করে ইংল্যান্ড। এর মধ্যে তৃতীয় ওডিআই-তে নিউজিল্যান্ডকে ১৮১ রানের ব্যবধানে পরাজিত করে ইংল্যান্ড এবং সেই ম্যাচে বেন স্টোকস ১২৪ বলে ১৮২ রান করেছিলেন। বলে রাখা ভালো, এবারের বিশ্বকাপ খেলার জন্যই বেন স্টোকস অবসর ভেঙে ফিরে এসেছেন। ফলে এবারের বিশ্বকাপে বেন স্টোকস যদি এই রকম কিছু বড় ইনিংস উপহার দেন, তাহলে অবাক হওয়ার কিছুই থাকবে না। ইংল্যান্ডের ব্যাটিং লাইনআপ খুবই শক্তিশালী এবং এবারের বিশ্বকাপে তারা যদি একাধিক ম্যাচে ৪০০ এর বেশি রান করে, তাহলে আমি মোটেই অবাক হবো না। ইংল্যান্ডের প্রতিষ্ঠিত ব্যাটসম্যানদের বাইরে তরুণ ব্যাটসম্যান হ্যারি ব্রুকের কথা আলাদা করে বলতে হয়। বিশ্বকাপের জন্য ইংল্যান্ডের প্রাথমিক স্কোয়াড যখন ঘোষণা করা হয়, তখন হ্যারি ব্রুক সেখানে জায়গা পাননি। অথচ তার আগে প্রায় বছর দেড়েক ধারাবাহিকভাবে ভালো খেলেছিলেন তরুণ এই ব্যাটসম্যান। এরপর দ্য হান্ড্রেড টুর্নামেন্টে একটি ম্যাচে ব্রুক ৪২ বলে ১০৫ রান করে অপরাজিত ছিলেন ।নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম দু-ম্যাচে অপরাজিত ৪৩ ও ৬৭ রানের ইনিংস খেলেন ব্রুক। ফলে বিশ্বকাপ স্কোয়াডে হ্যারি ব্রুককে অন্তর্ভুক্ত করতে বাধ্য হন ইংলিশ নির্বাচকরা। এছাড়া তাদের প্রতিষ্ঠিত ব্যাটসম্যান জনি বেয়ারস্টো, দাউয়িদ মালান, জো রুট, জজ বাটলার, বেন স্টোকস, মঈন আলী-রা রয়েছেনই। এইরকম একটা ব্যাটিং লাইনআপ যে কোন বোলিংয়ের বিরুদ্ধে যে কোনদিন সাড়ে তিনশো রান করার ক্ষমতা রাখে। জোফরা আর্চার এবং মার্ক উড-এর পেস আক্রমণের সাথে আদিল রশিদ এবং মঈন আলীর স্পিন যে কোনো দলের ব্যাটিং লাইন আপের জন্য মাথা ব্যথার কারণ। তারপরও নিউজিল্যান্ড দলের পক্ষে সম্ভব ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ভালো খেলে এবারের বিশ্বকাপ জয় দিয়ে শুরু করা। সেজন্য তাদের যেটা প্রয়োজন সেটা হচ্ছে, শুরু থেকেই প্রতিপক্ষের উপরে চেপে বসা। আইসিসির ওডিআই রাঙ্কিংয়ে অবশ্য এই মুহূর্তে ইংল্যান্ড এবং নিউজিল্যান্ডের মধ্যে পার্থক্য সামান্যই। ইংল্যান্ড রয়েছে র্যাঙ্কিংয়ের পাঁচে এবং নিউজিল্যান্ড রয়েছে র্যাঙ্কিংয়ের ছয়ে। ফলে নিউজিল্যান্ডকে ম্যাচ জিততে হলে অবশ্যই ইংল্যান্ডের ইনিংসকে কিভাবে ৩০০ রানের নিচে রাখা যায়, সেটি নিয়ে কাজ করতে হবে। তাছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের কন্ডিশনের কাছাকাছি কন্ডিশনের বাংলাদেশে সিরিজ খেলতে এসে স্বাগতিকদের বিরুদ্ধে ২-০ তে ওডিআই সিরিজ জিতেছে নিউজিল্যান্ড দল। নিয়মিত একাদশের বেশ কয়েকজনকে ছাড়াই বাংলাদেশ সফরে এসেছিল নিউজিল্যান্ড দল। ভারতের কাছাকাছি কন্ডিশনের বাংলাদেশে এসে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সিরিজ জয় নিউজিল্যান্ড দলকে নিঃসন্দেহে উজ্জীবিত করেছে। তবে আজ ইংল্যান্ড এবং নিউজিল্যান্ড দু’দলই চাইবে জয় দিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করতে।
ঊআ-বিএস