খুলনায় ইজিবাইক চালক হত্যার ঘটনায় দুজন আসামি গ্রেফতার ও আলামত উদ্ধার। এছাড়াও অপর একটি মামলার এক আসামি গ্রেফতার ও চোরাই একটি ইজিবাইক উদ্ধার করেছে কেএমপির আড়ংঘাটা থানা পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, হত্যা মামলার প্রধান আসামী মোঃ বিল্লাল হোসেন ও মোঃ তৌফিকুর রহমান দিন মজুরের কাজ করে। তাদের নির্দিষ্ট কোন পেশা নেই বিধায় গত ২৮ মে আসামী মোঃ বিল্লাল হোসেন ও মোঃ তৌফিকুর রহমান খুলনা রেলস্টেশন থেকে সকাল ১০/১১ টার দিকে গাড়ি চুরির পরমর্শ করে। সেই পরিকল্পনা মতে দুপুর ০১.০০ টার দিকে বড়বাজার থেকে ০১ টি বাটওয়ালা ছুরি কেনে এবং ঐদিন সন্ধ্যায় গল্লামারী থেকে ক্যান্সার হাসপাতাল থেকে রুগী আনার জন্য ইজিবাইক ভাড়া করে।
ইজিবাইকে যাওয়ার সময় আসামী বিল্লাল ও তৌফিকুর পথিমধ্যে দুজনই চালক রায়হানকে গাঁজা খাওয়ার প্রস্তাব দেয়। ইজিবাইক চালক গাঁজা খাওয়ার জন্য রাজি হলে তারা আড়ংঘাটা থানাধীন খুলনা সিটি বাইপাস সড়কের আকমানের মোড় সংলগ্ন একটি নির্জন ইটের সলিংয়ের রাস্তায় যায় এবং আসামীরা গাঁজার কলকিতে টান দিয়ে ড্রাইভারের কাছে দেয়। পরবর্তীতে আসামী তৌফিক ইজিবাইক চালক রায়হানকে পিছন থেকে জাপটে ধরলে বেল্লাল ছুরি দিয়ে গলায় সজোরে পোচ দেয়। তারপর রায়হানের মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য তার গলায় বেল্ট দিয়ে প্যাঁচ দিয়ে অজ্ঞান করে গাড়ী নিয়ে চলে যায়। পরবর্তীতে তারা তাবলিগ মসজিদের সামনে রাত ১১.৩০ টায় গাড়ী রেখে ঘুমায় এবং সকালে মিস্ত্রি এনে ইজিবাইক ঠিক করে।অতঃপর তারা ২৯ মে সকালে কয়রায় ইজিবাইকটি বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে নিয়ে যায় এবং তার দুই দিন পর স্ট্যাম্পের মাধ্যমে পাইকগাছার জনৈক ব্যক্তির কাছে ইজিবাইকটি বিক্রি করে টাকা নিয়ে চলে যায়।
এরই ধারাবাহিকতার কেএমপি’র আড়ংঘাটা থানার মামলা নং-০৫, তারিখ-১০/০৫/২০২৪খ্রিঃ;ধারা-৩৯৪/৩০২/২০১/৩৪ পেনাল কোড সংক্রান্তে হত্যা মামলার আসামী গ্রেফতারের জন্য আড়ংঘাটা থানা পুলিশের একটি চৌকস টিম গঠন করা হয়। উক্ত আভিযানিক টিম তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় ঘটনার সাথে জড়িত আসামীদের সনাক্তপূর্বক আসামীদের গ্রেফতারের উদ্দেশ্যে খুলনা মহানগরীসহ বিভিন্ন এলাকায় সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা অব্যাহত রাখে। এরই প্রেক্ষিতে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ঢাকা জেলার আশুলিয়া থানা এলাকা থেকে আশুলিয়া থানা পুলিশের সহায়তায় উক্ত মামলার ঘটনায় জড়িত আসামী মোঃ বিল্লাল হোসেন(২৫), পিতা-আবু মুসা মিস্ত্রি, সাং-গোবিন্দপুর , থানা-কয়রা, জেলা-খুলনা এবং মোঃ তৌফিকুর রহমান(২৪), পিতা-মৃত: আতিয়ার রহমান, সাং-গাবুরা, থানা-শ্যামনগর, জেলা-সাতক্ষীরা, এ/পি সাং-গোবিন্দপুর, থানা-কয়রা, জেলা-খুলনাদ্বয়কে গ্রেফতার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত আসামীদ্বয় হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে এবং ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে আসামীদের প্রদত্ত তথ্যের ভিত্তিতে তাদের দেখানো মতে কেএমপি’র আড়ংঘাটা থানাধীন ঘটনাস্থলের পাশ থেকে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ০১টি প্লাস্টিকের কালো হাতলযুক্ত স্টিলের ছুরি উদ্ধারপূর্বক নিরপেক্ষ সাক্ষীদের উপস্থিতিতে জব্দ করা হয়। গ্রেফতারকৃত আসামীদ্বয়কে বিজ্ঞ আদালতে পুলিশ রিমান্ডে এনে নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করতঃ হত্যাকান্ডে জড়িত অন্যান্য আসামীদের সনাক্তপূর্বক গ্রেফতার করা হবে এবং হত্যাকান্ডের মূল রহস্য উন্মোচন করা হবে।
অপরদিকে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে কেএমপি’র আড়ংঘাটা থানার মামলা নং-১৪ এর আসামী মোঃ রাজু শেখ(২৯), পিতা-মোঃ আব্দুর রাজ্জাক শেখ, সাং-সোনাতন কাঠি, থানা-পাইকগাছা জেলা-খুলনাকে গতকাল গ্রেফতার করা হয় এবং গ্রেফতারকৃত আসামীর হেফাজত থেকে মামলার ঘটনায় লুন্ঠিত সবুজ রংয়ের ০১টি ইজিবাইক উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতারকৃত আসামী রাজু শেখ (২৯) বিজ্ঞ আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারা মোতাবেক দোষ স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে আসামী রাজু শেখ অত্র মামলায় অন্যান্য সহযোগী আসামীদের নাম-ঠিকানা প্রকাশ করে। জবানবন্দি পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, পূর্বে গ্রেফতারকৃত আসামী মোঃ বিল্লাল হোসেন (২৫) এবং মোঃ তৌফিকুর রহমান (২৪) অত্র মামলার ঘটনার সাথেও সরাসরি জড়িত। গ্রেফতারকৃত আসামীদ্বয়কে অত্র মামলা সংক্রান্ত প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা মামলার ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে।
মামলাটি তদন্তাধীন। গ্রেফতারকৃত আসামীদ্বয়কে অত্র মামলায়ও পুলিশ রিমান্ডে এনে নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করে ঘটনার সাথে জড়িত অন্যান্য আসামীদের সনাক্তপূর্বক গ্রেফতার প্রক্রিয়া চলমান ।
