ঊষার আলো রিপোর্ট : ফাতেমা বেগম, বয়স ৫২ বছর। একমাত্র কর্মঠ ছেলের মৃত্যুতে তিনি নির্বাক। যে যায়, শুধু তার দিকেই তাকিয়ে থাকেন তিনি। চোখে যেন পানি নেই। পাশেই তার দুই মেয়ে মুন্নি বেগম ও শিউলি বেগম ভাইয়ের জন্যে বুক চাপড়ে শুধুই কাঁদছেন। বুধবার সকালে সরেজমিন এই করুন দৃশ্য দেখা যায় লক্ষ্মীপুরে বাসের সিলিন্ডার বিস্ফোরণে নিহত আরিফ হোসেন হৃদয়ের (১৯) বাড়িতে গিয়ে।
রোববার রাত দুইটার দিকে ঢাকা-লক্ষ্মীপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে গ্রিন লাইফ ফিলিং স্টেশনে গ্যাস রিফিলের সময় একটি বাসের গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়। এ সময় ঘটনাস্থলে ৩ জন নিহত হয়, আহত হয় আরও ২০ জন।
নিহত অপর দুজন মো. সুমন ও ইউসুফ হোসেন নামের দুই ব্যাটারি চালিত অটোরিকশাচালক। এ ঘটনায় ইউসুফ হোসেনের স্ত্রী নাসিমা বেগম বাদী হয়ে লক্ষ্মীপুর সদর থানায় মামলা করেছেন। এতে বাসমালিক সাইফুল ইসলামসহ দুজনকে আসামি করা হয়।
তিনি জানান, কিছুদিন আগে তার হাত ভেঙে যায়। ওষুধের প্রয়োজন হতো, সবই কিনে দিতেন হৃদয়। সোমবার দুপুরেও ওষুধ নিয়ে বাড়িতে আসার কথা ছিল তার। তবে ছেলে ঘরে এসেছে লাশ হয়ে।
ফাতেমা জানান, সংসারের অভাবের কারণে হৃদয় অল্প বয়সেই কাজে যোগ দেন। বাস, ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহণের মেকানিক হিসেবে কাজ করতেন। যে ফিলিং স্টেশনটিতে বাসের সিলিন্ডার বিস্ফোরণ ঘটেছে, এর পাশের একটি গ্যারেজে কর্মরত ছিলেন হৃদয়।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, হৃদয়ের বাবা মো. সিরাজ রিকশা-অটোরিকশার মেকানিক হিসেবে কাজ করেন। ছেলে উপার্জনক্ষম হওয়ায় সংসারের খরচ বহনে তার ওপর চাপ কিছুটা কমেছিল। ছেলের মৃত্যুতে বাবা সিরাজসহ পরিবারের সব সদস্যই যেন দিশাহারা। এই দুর্ঘটনার জন্য দায়ীদের বিচার দাবি করেন হৃদয়ের ভাই ওমর ফারুক।
বিস্ফোরণের ঘটনা তদন্তে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট প্রিয়াংকা দত্তকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
লক্ষ্মীপুর সদর মডেল থানার ওসি মো. আবদুল মোন্নাফ বলেন, প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, ওই বাসের গ্যাস সিলিন্ডার নিম্নমানের এবং মেয়াদোত্তীর্ণ ছিল। বাসমালিকের অবহেলার কারণে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
সোমবার লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে বিস্ফোরণে আহত হয়ে চিকিৎসাধীন সুমন হোসেন (২৩) বলেন, তিনিও বাসের চালক। তার বাসটি বিস্ফোরিত বাসের পরেই ছিল। বাস থেকে নেমে তিনি পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন। হঠাৎ বিকট শব্দে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এরপর আর কিছু তাঁর মনে নেই। হাসপাতালে আনার পর দেখা যায়, শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম হয়েছে।
ফিলিং স্টেশনটির নিরাপত্তা প্রহরী মো. হুমায়ুন বলেন, ‘বাসটিতে গ্যাস রিফিল করার সময় সেটি কেঁপে ওঠে। বাসে কোনো যাত্রী ছিল না। যিনি গ্যাস রিফিল করছিলেন তিনি দ্রুত গ্যাসের নজেল খুলে নেন। সঙ্গে সঙ্গে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে।’
লক্ষ্মীপুর সদর আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা অরূপ পাল বলেন, হাসপাতালে আহত ১৫ জনকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে কয়েকজনের হাত-পা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। প্রাথমিক চিকিৎসার পর তাদের ঢাকায় নিয়ে যেতে বলা হয়।
ঊষার আলো-এসএ