UsharAlo logo
সোমবার, ২০শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

করজাল বাড়াতে ক্রাশ প্রোগ্রাম

usharalodesk
মার্চ ১৩, ২০২৪ ১০:১১ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

ঊষার আলো রিপোর্ট : করজাল বাড়াতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ক্রাশ প্রোগ্রাম হাতে নিয়েছে। সঞ্চয়পত্রের গ্রাহক, গাড়ির মালিক, বিদ্যুৎ সংযোগ, ইটভাটা মালিক, জমি রেজিস্ট্রেশন, ক্রেডিট কার্ডধারী, বিদেশি কর্মী, ব্যবসায়ী সংগঠন সভা-সমিতির রিটার্ন জমার তথ্য চেয়েছে সংস্থাটি। প্রতি মাসের ৩ তারিখের মধ্যে মাঠ পর্যায়ের কর অঞ্চলগুলোকে হালনাগাদ তথ্য পাঠাতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি জোরেশোরে চলছে নতুন কর অঞ্চল স্থাপন কাজ। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি এনবিআর তার অধীনস্থ সব কর অঞ্চলকে চিঠি দেয়। চিঠিতে যেসব সঞ্চয়পত্রের গ্রাহক রিটার্ন জমা দেয়নি এবং যারা জমা দিয়েছেন তাদের তথ্য চাওয়া হয়। রিটার্নে বিনিয়োগের প্রকৃত তথ্য উল্লেখ আছে কিনা, রিটার্নে কম বিনিয়োগ প্রদর্শন করেছে-এমন করদাতাদের তথ্য চেয়েছে সংস্থাটি। একইভাবে রিটার্নে গাড়ির তথ্য উল্লেখ রয়েছে-এমন করদাতাদের তথ্যও দিতে বলেছে। পাশাপাশি যেসব করদাতা গাড়ি থাকা সত্ত্বেও রিটার্নে উল্লেখ করেনি, বিআরটিএ ওয়েবসাইট থেকে যাচাই-বাছাই করে সেই তথ্য পাঠাতে বলেছে। এছাড়া নৌযান মালিকের নাম, জাতীয় পরিচয়পত্র, টিআইএন, নৌযানের ধরন, সংখ্যা ও রিটার্ন জমা দিয়েছে কিনা সেই তথ্য পাঠাতে বলা হয়েছে।

বিআরটিএ’র ওয়েবসাইটের তথ্য মতে, গত জানুয়ারি পর্যন্ত সারা দেশে প্রাইভেট কার নিবন্ধিত আছে ৪ লাখ ১০ হাজার ৫৩২টি। এছাড়া মাইক্রোবাস আছে এক লাখ ২১ হাজার এবং জিপ আছে ৯১ হাজার ৩০৪টি। গাড়ি নিবন্ধনের সময় রিটার্ন জমার স্লিপ বা প্রাপ্তি স্বীকারপত্র প্রদর্শন বাধ্যতামূলক।

মাঠ পর্যায়ে পাঠানো এনবিআরের চিঠিতে ডিপিডিসির বিদ্যুৎ গ্রাহকরা সঠিকভাবে আয়কর রিটার্ন দিচ্ছে কিনা সেটিও খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে। যেমন ডিপিডিসির আওতায় কতগুলো মিটার আছে, এর মধ্যে কতজন রিটার্ন দিচ্ছেন; বিদ্যুৎ সংযোগ রয়েছে-অথচ রিটার্ন জমা দেয়নি; রিটার্নে মিটারের তথ্য উল্লেখ আছে কিনা সেগুলো যাচাই করে এনবিআরে তথ্য পাঠাতে বলা হয়েছে। এছাড়া জমির ক্রেতা ও বিক্রেতার টিআইএন, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, দলিল নম্বর, দলিল মূল্য, দলিলের সময় প্রদেয় উৎসে করের বিস্তারিত পাঠাতে বলা হয়েছে।

মৌসুমি ইটভাটা মালিকদের করজালে আনতে চাচ্ছে এনবিআর। তাই ইটভাটা মালিকদের টিআইএন, জাতীয় পরিচয়পত্র, ইটভাটার প্রকৃতি, প্রদেয় উৎসে করের পরিমাণ, রিটার্নে ইটভাটায় বিনিয়োগ দেখানো আছে কিনা তার তথ্য পাঠাতে বলা হয়েছে। এছাড়া ক্রেডিট কার্ড গ্রাহকের নাম, জাতীয় পরিচয়পত্র, ব্যাংকের নাম, শাখার নাম, ক্রেডিট কার্ড নম্বর, ক্রেডিট কার্ডের সর্বোচ্চ সীমা, ব্যবহৃত ক্রেডিট কার্ডের পরিমাণ, মোবাইল নম্বর পাঠাতে বলা হয়েছে।

বিদেশি নাগরিকের নাম, কর্মীর দেশ, পাসপোর্ট নম্বর, কর্মক্ষেত্রে পদবি, যোগদানের তারিখ, কর্মকাল, কর্মরত প্রতিষ্ঠানের নাম, প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা, চুক্তি অনুযায়ী প্রাপ্ত বেতন, প্রতিষ্ঠানের টিআইএন নম্বর। ব্যবসায়ী সমিতি ও চেম্বারগুলো রিটার্ন দেয় কিনা সেই তথ্যও পাঠাতে বলা হয়েছে এনবিআরের চিঠিতে। ব্যবসায়ী চেম্বার-সমিতির নাম, টিআইএন, ঠিকানা, প্রকৃতি, সদস্য সংখ্যা, সদস্যদের নাম, টিআইএন এবং রিটার্ন জমা দিয়েছে কিনা সেই তথ্য পাঠাতে বলা হয়েছে।

প্রাপ্ত তথ্য মতে, বর্তমানে দেশে এক কোটি কর শনাক্তকরণ নম্বরধারী (টিআইএন) আছেন। এ বছর তাদের মধ্যে রিটার্ন জমা দিয়েছেন ৩৬ লাখ ৮১ হাজার করদাতা। যা গত বছরের তুলনায় ২১ শতাংশ বেশি। রিটার্নের বিপরীতে ব্যক্তি শ্রেণির করদাতাদের কাছ থেকে আয়কর আদায় হয়েছে ৫ হাজার ৭৯৯ কোটি টাকা।

এ বিষয়ে কর জরিপ ও পরিদর্শন অনুবিভাগের সদস্য এমএস ফজলুল হক আরিফ বলেন, কর অঞ্চলগুলো থেকে সঞ্চয়পত্র, ক্রেডিট কার্ড, গাড়ির মালিক, বিদ্যুৎ সংযোগ, ইটভাটা মালিক, জমি রেজিস্ট্রেশন, ক্রেডিট কার্ডধারী, বিদেশি কর্মীদের তথ্য চাওয়া হয়েছে। আংশিকভাবে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। তবে পূর্ণাঙ্গ তথ্য দিতে বলা হয়েছে। ঈদে পরে পূর্ণাঙ্গ তথ্য পাওয়া যাবে আশা করছি।

অন্যদিকে করজাল বাড়াতে নতুন কর অঞ্চল স্থাপনের কাজ জোরেশোরে চলছে। বর্তমানে ৩১টি কর অঞ্চলের পাশাপাশি সারা দেশে ৩ ধাপে নতুন আরও ২৮টি কর অঞ্চল স্থাপনের কাজ শুরু করেছে এনবিআর। এতে প্রায় আট হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হবে। প্রথম ধাপে রাজধানীতে নতুন কর অফিস স্থাপনের কাজ শুরু হবে। ঢাকা কর অঞ্চল- ১৬, ১৭, ১৮, ১৯, ২০, ২১, ২২, ২৩, ২৪ ও ২৫; কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিট; ই-ট্যাক্স ব্যবস্থাপনা ইউনিট এবং উৎসে কর ব্যবস্থাপনা ইউনিটের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রায় চার হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগেরও প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে। দ্বিতীয় ধাপে নতুন সৃষ্ট চট্টগ্রামের কর অঞ্চল-৫ ও ৬, কর অঞ্চল- কক্সবাজার, ফরিদপুর, নরসিংদী, যশোর, কুষ্টিয়া, দিনাজপুর ও নোয়াখালীর কার্যক্রম শুরু হবে। আর তৃতীয় ধাপে আন্তর্জাতিক কর ইউনিট, কর অঞ্চল- পাবনা, কর আপিল অঞ্চল-৫ ও ৬, চট্টগ্রামের কর আপিল অঞ্চল-২ এবং রংপুরের কর আপিল অঞ্চলের কার্যক্রম শুরু হবে। ইতোমধ্যে নতুন কর অঞ্চলগুলোর অধিক্ষেত্র ভাগ করে আদেশ জারি করা হয়েছে।

এ বিষয়ে এনবিআরের সদস্য (কর প্রশাসন ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা) সৈয়দ মোহাম্মদ আবু দাউদ বলেন, আগামী ১ জুলাই থেকে নতুন কর অঞ্চলগুলোর কার্যক্রম শুরু লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে লোকবল নিয়োগে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের ছাড়পত্র চাওয়া হয়েছে। একইভাবে সরকারি স্থাপনা বরাদ্দ অফিস ভাড়ার জন্য আবাসনের ছাড়পত্র চাওয়া হয়েছে।

ঊষার আলো-এসএ