ঊষার আলো ডেস্ক : সুপ্রিমকোর্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্ট’র নামে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন থেকে প্রতি মাসে কিছু টাকা নেয়া হয়। এছাড়াও বিভিন্ন মাধ্যম থেকে কল্যাণ ট্রাস্ট্রের কিছু বাড়তি আয় আছে। এ টাকা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কল্যাণে ব্যয় হওয়ার কথা। কিন্তু এই টাকা ‘নয়-ছয়’ করার অভিযোগ উঠেছে ট্রাস্ট পরিচালনার দায়িত্বে থাকা নির্বাচিত কিছু সাবেক ও বর্তমান নেতার বিরুদ্ধে।
২০১৫ সাল থেকে কল্যাণ ট্রাস্টের কোনো অডিট রিপোর্টও প্রকাশিত হচ্ছে না। আর এ কারণে অডিট রিপোর্ট প্রকাশের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছে সুপ্রিমকোর্টের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
আগামী ৩১ মার্চ অনুষ্ঠেয় ‘সুপ্রিমকোর্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্ট’র নির্বাচনের আগেই এই অডিট রিপোর্ট প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন তারা। অন্যথায় নির্বাচন পেছানোরও দাবি জানিয়েছেন।
সোমবার (২২ মার্চ) প্ল্যাকার্ড হাতে কল্যাণ ট্রাস্টের আয়-ব্যয়ের অডিট রিপোর্ট প্রকাশের দাবিতে রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। প্ল্যাকার্ড অনুযায়ী তাদের দাবি একটায়-‘৩১ মার্চের আগেই প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী অডিট রিপোর্ট প্রকাশ চাই’। পরে হাইকোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রারের পক্ষে একজন অতিরিক্ত রেজিস্ট্রারের মঙ্গলবার ১০টার মধ্যে রিপোর্ট প্রকাশ করার প্রতিশ্রুতি দিলে তারা কর্মসূচি সমাপ্ত ঘোষণা করেন। কিন্তু মঙ্গলবারও ওই রিপোর্ট প্রকাশিত হয়নি। এর পেছনে কল্যাণ ট্রাস্টের ফান্ড তছরুপে জড়িত একটি পক্ষকে বাঁচানোর চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে আন্দোলনরত নেতা-কর্মীরা। এ অবস্থায় মঙ্গলবার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রয়োজনে কল্যাণ ট্রাস্ট্রের নির্বাচন পেছানোর দাবি জানিয়ে ট্রাস্টের চেয়ারম্যান ও এই নির্বাচনের প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে পৃথক আবেদন দাখিল করেছেন।
এ বিষয়ে আন্দোলরত কল্যাণ ট্রাস্টের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও হাইকোর্ট বিভাগের বেঞ্চ অফিসার ইব্রাহীম আলম ভূঁইয়া বলেন, ‘একটি সিএ ফার্মকে দিয়ে ইতিমধ্যে কল্যাণ ট্রাস্টের অডিট সম্পন্ন করা হয়েছে। অডিট রিপোর্ট হাইকোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রারের দফতরে দাখিল করা হয়েছে। হাইকোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রার মঙ্গলবার আমাদেরকে জানিয়েছেন, এই রিপোর্ট এখন ট্রাস্টের চেয়ারম্যান (আপিল বিভাগের বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী)’র কাছে দাখিল করা হবে। এরপর অডিট রিপোর্ট প্রকাশের ব্যাপারে তিনি সিদ্ধান্ত নেবেন। এজন্য দু-তিন দিন সময় লাগতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘এ কারণে নির্বাচন পেছাতে ট্রাস্টের চেয়ারম্যান ও নির্বাচন কমিশনারের কাছে আমি সাবেক সেক্রেটারি হিসেবে একটি এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পক্ষে আলাদা একটি আবেদন দিয়েছি। আবেদনে নির্বাচনের আগে কল্যাণ ট্রাস্টের আয়-ব্যায়ের হিসাব প্রকাশের যে ওয়াদা করা হয়েছে, সে অনুযায়ী অডিট রিপোর্ট প্রকাশ করতে হবে। প্রয়োজনে নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়া হোক। এখন আমরা ২৮ মার্চ সকাল ১০টা পর্যন্ত অপেক্ষা করবো। তারপরও অডিট রিপোর্ট প্রকাশ না করা হলে অন্য কোন বিকল্প পদক্ষেপের চিন্তা করব।’
অডিট রিপোর্ট প্রকাশের দাবির পেছনের যৌক্তিকতা তুলে ধরে এই কমকর্তা বলেন, ছয় বছর ধরে কল্যাণ ট্রাস্টের কোনো অডিট রিপোর্ট হচ্ছে না। এখানে অনেক অনিয়ম হয়েছে। লক্ষ লক্ষ টাকা তছরুপ করা হয়েছে। সংগঠনের বিধানের বাইরে ব্যায় করা হয়েছে। অবসরে যাওয়ার পর একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দেওয়া হয়। কিন্তু এখন স্টাফরা টাকা পাচ্ছেন না। বলা হচ্ছে টাকা নাই, পরে দেবো। এসব কারণে আমরা ট্রাস্টের ফান্ডের প্রকৃত চিত্রটা দেখতে চাই। এ কারণে অডিট রিপোর্ট প্রকাশের এই জোর দাবি উঠেছে।’
হাইকোর্ট বিভাগের সহকারি বেঞ্চ অফিসার মো. নিয়াজ মোর্শেদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘নির্বাচনের পূর্বে প্রকাশ করা সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীর দাবি। নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসলেও এখনও প্রতিবেদন প্রকাশ করা হচ্ছে না। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাদের সঞ্চিত আমানতের বিষয়ে সন্দিহান। এ আমানত কোনোভাবেই আত্মসাৎ হওয়া আমরা মেনে নিতে পারি না। তাই নির্বাচনের পূর্বেই অডিট রিপোর্ট প্রকাশ হওয়া অত্যন্ত জরুরি।’ সূত্র : আমাদের সময়
(ঊষার আলো-এমএনএস)