ঊষার আলো রিপোর্ট : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গিয়ে ঢাকার বনশ্রীতে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার মধ্যে পড়েন রনি আহমেদ (৩০)। গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু নিশ্চিত জেনে আল্লাহকে স্মরণ করে কালেমা পড়তে শুরু করেন। কখন যে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন জানতে পারেনি। পিছনে পুলিশ-বিজিবি, উপরে চক্কর দেওয়া হেলিকেপ্টার থেকে আশপাশে নির্বিচারে গুলি ছোড়া হচ্ছে। গুলিতে ৪ জন ঘটনাস্থলে মারা যায়।
রনি আহমেদ রাজশাহীর বাঘা উপজেলার বাজুবাঘা ইউনিয়নের চন্ডিপুর গ্রামের এলাহী বকরের ছেলে। নিজ গ্রামের বাড়িতে বিছানায় শুয়ে দিন কাটছে বেঁচে আসা রনি। রনি আহমেদ ঢাকা একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। থাকতেন রামপুরার বনশ্রী এলাকায় ভাড়া বাসায়।
রনি আহমেদ বলেন, ১৭ জুলাই দুপুরে বাসায় ফেরার সময় দেখি পুলিশ-বিজিবি গুলি করতে করতে সামনের দিকে যাচ্ছে। এ সময় নিজেকে স্থির রাখতে না পেরে ছাত্রদের সঙ্গে আন্দলনে যুক্ত হন। ছাত্রদের দেখে পুলিশ-বিজিবি রাস্তা বন্ধ করে দিয়ে গুলি ছুড়তে থাকে।
এ সময় ৪ জন গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলে মারা যায়। পুলিশ-বিজিবির ছোড়া গুলি বাম পায়ের উরুর এক পাশ দিয়ে ঢুকে আরেক পাশ দিয়ে বের হয়ে যায়। গুলিবিদ্ধ জায়গা থেকে অনেক রক্তপাত হচ্ছিলো। আশপাশে তেমন কেউ ছিল না, তখনো মনে হয়েছিল আর মনে হয় বাঁচবো না। তখন কালেমা পড়া শুরু করি। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় রামপুরার বনশ্রী এলাকার এফ ব্লকের ৩ নম্বর রোডে আশ্রয় নেন।
সেখান থেকে জি ব্লকের ৩ নম্বর রোডের এক মহিলার বাসায় নিয়ে গজ ব্যান্ডেজ দিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়। তাৎক্ষণিক একজন চিকিৎসক চিকিৎসা দিয়ে চলে যান। পরে অ্যাডভান্স হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে গিয়ে দেখি বিপুল সংখ্যক গুলি বিদ্ধ মানুষ। সিট নাই, ফ্লোরে চিকিৎসা চলছে। ৩ নম্বর রোডের এফ ব্লকের ২৮ নম্বর বাসায় চলে আসি। সেখান থেকে চুপি চুপি হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছিলাম। ২৬ জুলাই ডাক্তার বলেন এখানে আসার দরকার নেই। আসলে তুলে নিয়ে যাবে।
পরে ঢাকা থেকে নিজ বাড়ি আসা হয়। ভয়ে এখানে না থেকে পাশের উপজেলায় বোনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে চিকিৎসা নেই। সেখান থেকে জানতে পারেন পুলিশ খোজ-খবর নিচ্ছে ঢাকায় থেকে কারা এলাকায় ফিরেছে। ৫ আগষ্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পর নিজ বাড়িতে ফিরে আসেন। বর্তমানে বাঘা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
রনি ২০১৬ সালে ঢাকার ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যান্ড সাইন্স থেকে ইলেট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেন। পরে ঢাকায় জেড থ্রি করপোরেশনে চাকরি শুরু করেন। বর্তমানে বেসরকারি কোম্পানি এনারজিসিল্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডে কর্মরত রয়েছেন।
শুক্রবার দুপুরে রনি আহমেদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তার বাঁ ঊরুতে ব্যান্ডেজ বাধা। পায়ের নিচে বালিশ দিয়ে বিছানায় শুয়ে আছেন। চোখে-মুখে এখনো ভয়-আতঙ্ক। গুলিবিদ্ধ বাম পায়ে শক্তি নেই। আগের মতো আর শক্তি ফিরে পাবেন কি-না, তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন।
মা নিলুফা বেগম বলেন, গুলিবিদ্ধ পায়ে কোনো শক্তি পাচ্ছে না। যেভাবে গুলি করেছে তাতে ওর ফিরে আসার কথা ছিল না, আল্লাহ ওকে বাঁচিয়ে রেখেছে।
বাঘা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডা. আশাদুজ্জামান বলেন, সেরে উঠতে সময় লাগবে।
ঊষার আলো-এসএ