UsharAlo logo
শুক্রবার, ২০শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৫ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

কৃষি জমি শ্রেণী পরিবর্তন ও জলাভূমি ভরাট করে শিল্প কলকারখানা গড়ে তোলার প্রতিবাদসহ ১০ দফা দাবিতে পরিবেশ সুরক্ষা মঞ্চের সংবাদ সম্মেলন

ঊষার আলো রিপোর্ট
ডিসেম্বর ৩০, ২০২৩ ৫:০৪ অপরাহ্ণ
Link Copied!

 কৃষি জমি শ্রেণী পরিবর্তন ও জলাভূমি ভরাট করে শিল্প কলকারখানা গড়ে তোলার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় খুলনা প্রেসক্লাবে পরিবেশ সুরক্ষা নাগরিক কমিটি বাগেরহাট এবং পরিবেশ সুরক্ষা মঞ্চ খুলনা যৌথভাবে এ সম্মেলনের আয়োজন করে। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাগেরহাট পরিবেশ সুরক্ষা নাগরিক কমিটির নেতা নজরুল ইসলাম। সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেন পরিবেশ সুরক্ষা মঞ্চ খুলনার আহবায়ক এড. কুদরত ই খুদা।

সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করা হয়, বাগেরহাট জেলা বসবাসের জন্য একটি মনোরম স্থান। এই জেলায় জলাভূমি ভরাট, ভূমি দখল, কৃষি জমির শ্রেণী পরিবর্তন করে অবকাঠামো উন্নয়ন ও শিল্প কারখানা স্থাপিত হওয়ার ফলে বাসযোগ্য ভূমি, ফসলি জমি ও জলাভূমির পরিমান কমে যাচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বাস্তুতন্ত্র। বাগেরহাট জেলার সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের সবুজ গাছপালা ঘেরা শান্ত গ্রমের নাম “চাপাতলা”। গ্রামে অধিকাংশ হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বসবাস। গ্রামে একটি পুকুরের নাম “সিড়ি পুকুর”। আয়তন এক একরের বেশী। গ্রামের হিন্দু স¤প্রদায়ের লোকেরা ঐ পুকুরকে ঘিরে ধর্মীয় পূজা এবং সাস্ত্রীয় আচার-আচরণ পালন করতেন। সেই পুকুরটি ভরাট করা হয়েছে।

এ রকম একটি জনবসতি ও পরিবেশ ভারসাম্যপূর্ণ গ্রামে কোন রকম পরিবেশ ও সামাজিক সমীক্ষা ও ঘোষণা ছাড়াই ব্যক্তি পর্যায়ে জমি ক্রয়ের মাধ্যমে কারখানা স্থাপন করা হয়েছে, যা ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে এলাকার পরিবেশ ও প্রতিবেশ। কারখানায় যখন মেশিন চালু থাকে তখন প্রচুর ধোয়া বের হয়। কাঠের গুড়ো এসে স্থানীয় বিদ্যালয়ের টেবিল, চেয়ার, বেঞ্চসহ সব ধরণের আসবাবপত্র ঢেকে যায়। একটা বই বা খাতা ব্যবহার করতে হলে, তা মুছে ব্যবহার করতে হয়। অন্যদিকে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পড়াশুনাও ব্যাহত হচ্ছে। কারখানা থেকে আসা গন্ধে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা অস্বস্তি ও বিরক্ত বোধ করে।

রাত দশটার পরে যখন এখানে বয়লার ছাড়ে তখন আশেপাশের ভবনের ভীত পর্যন্ত কেপে ওঠে স্থানীয় জনজীবনে বিরূপ প্রভাব ফেলছে। এখানে ব্যবহৃত রাসয়নিক পদার্থের (আঠা) গন্ধ ও কাঠের গুড়োয় স্থানীয়দের শ্বাসকষ্টসহ বেশকিছু শারীরিক সমস্যা দেখা দিচ্ছে। প্রতিদিন কাঁচামাল হিসেবে আনুমানিক দশ হাজার মন কাঠ ব্যবহৃত হয়। অন্যান্য কাজে গাছের ব্যবহারের ক্ষেত্রে পরিপক্কতা জরুরী থাকলেও, এখানে ছোটবড় সব ধরণের গাছ। ব্যবহৃত হয়। এই কাঠ ব্যবহৃত হওয়ায় এক দিকে যেমন বৃক্ষ নিধন হচ্ছে অন্যদিকে বিপর্যন্ত হচ্ছে পরিবেশ।

স্থানীয়দের চাকুরী প্রদানের কথা বলে কারখানার জন্য জমি ক্রয় করা হলেও এখানের কাউকে গুরুত্বপূর্ণ কোন পদে চাকুরী প্রদান করা হয়নি। কিছু মানুষ শ্রমিক হিসেবে কাজ করে। নিবিড় বসতিপূর্ণ এলাকায় কারখানা স্থাপনের ফলে স্থানীয় আর্থ-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিবেশ যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তেমনি অন্যান্য জেলার শ্রমিকরা এসে আশে পাশে বসবাস করায় গ্রামের নারী ও মেয়েদের স্বাভাবিক চলাচল ব্যাহত হচ্ছে এবং বাড়ছে সামাজিক নিরাপত্তাহীনতা।

সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করা হয়, প্রধানমন্ত্রী ঘোষনা করেছেন, শিল্পাঞ্চলেই শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে। কোনভাবেই কৃষিজমিতে শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা যাবে না। অর্থাৎ কৃষি জমির শ্রেণী পরিবর্তন করা যাবে না। কিন্তু এসব না মেনে বিভিন্ন শিল্প কলকারখানা স্থাপনের জন্য যত্রতত্র জমির শ্রেণী পরিবর্তন করা হচ্ছে। বসত ভিটা ও বাগ বাগিচা শ্রেণী পরিবর্তন করে ক্ষুদ্র ও বৃহৎ শিল্প গড়ে উঠছে। আর ঐ সমস্ত জমি যারা বিক্রি করছেন তারা অন্যত্র বসবাসযোগ্য জমি ক্রয় করতে সামর্থ্য হচ্ছেন না। ফসলি জমির শ্রেণী পরিবর্তনের ফলে চাষাবাদের জমি পর্যায়ক্রমে সমুচিত হচ্ছে। ধীরে ধীরে ফসলি জমি ও জলাভূমির পরিমান কমে যাচ্ছে যা অদূর ভবিষ্যতে মানব জীবনের জন্য বিপদ ডেকে আনবে বলে নাগরিক নেতারা মনে করেন।
তারা মনে করেন, সরকার ঘোষিত শিল্পাঞ্চল ব্যতিত যত্রতত্র কৃষিজমি নষ্ট করে শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা এখনই বন্ধ করা উচিৎ। কারখানা বন্ধ হয়ে যাক বা নতুন করে তৈরি হবে না তা তারা চায় না, তবে এ ক্ষেত্রে মানুষ ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর বিষয়গুলোকে অবশ্যই বিবেচনায় রাখতে হবে।
পরিবেশ দূষণ, বৃক্ষ নিধন, জলাভূমি ভরাট ও ভূমি শ্রেণী পরিবর্তনসহ সব ধরনের পরিবেশ বিপর্যয়ের বিরুদ্ধে যদি এখনই প্রতিবাদ না করলে ভবিষ্যৎ প্রজনন্ম পড়বে ঝুঁকির মুখে। সুতরাং উল্লেখিত বিষয়ে বাস্তবায়নে নাগরিক নেতাদের ১০ দফা সুপারিশ পেশ করা হলো।

দাবিনানা হলো-ভূমির শ্রেণী পরিবর্তন করা যাবে না, শিল্পায়নের নামে কোনভাবেই কৃষি জমি ও জলাভূমি ধ্বংস করা যাবে না; ল্যান্ড জোনিং করতে হবে; বানিজ্যিক খাতে জমি ক্রয়ের পূর্বে ক্রয়কৃত জমি ব্যবহারের কারণ অবহিত করতে হবে; শব্দ দূষণ ও বায়ু দূষণ বন্ধ করতে হবে; কারখানা হতে নির্গত কাঠের গুড়া, ছাই ও আঠার গন্ধ বন্ধের ব্যবস্থা করতে হবে; স্থানীয়দের মতামত ও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে; কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে স্থানীয়দের অগ্রাধিকার দিতে হবে: প্রতিটি প্রকল্পের জন্য এনভায়রনমেন্ট ইমপ্যাক্ট ও সোস্যাল ইস্পার্ক এসেসমেন্ট করতে হবে; প্রকল্প শুরুর সাথে সাথে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সকল তথ্য জনসম্মুখে তুলে ধরার ব্যবস্থা করতে হবে। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ সুরক্ষা মঞ্চ খুলনার সদস্য অজান্তা দাস, বেলার বিভাগীয় সমন্বয়কারী মাহফুজুর রহমান মুকুল, মেরিনা যুথি, জয়, খলিলুর রহমান সুমন, পরিবেশ সুরক্ষা নাগরিক কমিটির শেখ মাহাবুবুর রহমান, শেখ আঃ গনি, সাবেক ইউপি মেম্বও মনিন্দ্রনাথ রায় প্রমূখ।