ঊষার আলো প্রতিবেদক : নগরীর খালিশপুরে মোঃ লিটন (৪২) নামে একজন চা দোকানদারকে মাদক বিক্রেতারা উপর্যুপরি কুপিয়ে হত্যা করেছে। এ সময় আমিন (৩০) নামের আরেক যুবক আহত হয়েছে। শনিবার দিবাগত গভীর রাতে খালিশপুরের কাশিপুর করবখানা রোড লাভলু শরীফের বাড়ির সামনের সড়কে এ ঘটনা ঘটে। লিটন কাশিপুর বাইতিপাড়া এলাকার শেখ সোবহান আলীর ছেলে। মাদক বিক্রির প্রতিবাদ করায় এলাকার চিহ্নিত মাদক বিক্রেতারা তাকে হত্যা করে বলে নিহতের স্বজনদের দাবি। এ ঘটনায় শনিবার নিহতের স্ত্রী হেলেনা খাতুন বাদী হয়ে খালিশপুর থানায় ১৯ জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। এরপর পুলিশ অভিযান চালিয়ে ৭ জনকে গ্রেফতার করেছে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, শনিবার দিবাগত রাত ১টার দিকে লিটনকে কয়েকজন ফোন করে ডেকে নেয়। এ সময় তারা ধারালো অস্ত্র দিয়ে লিটন ও আমিনকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করে। আমিন দৌড়ে লিটনদের বাসার সামনে এসে পড়ে যায়। এ সময় তার চিৎকারে লিটনদের স্বজনরা ঘুম থেকে উঠলে তিনি ঘটনা বললে তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখে লিটন রক্তাক্ত অবস্থায় নিথর দেহ পড়ে আছে। তাৎক্ষণিকভাবে লিটন ও আমিনকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক লিটনের মৃত্যু ঘোষণা করেন। আমিন বর্তমানে খুমেক হাসপাতালের ১১-১২নং ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
নিহতের বড় ভাই শহিদুল ইসলাম পেশায় চা বিক্রেতা। তারা কাশিপুরের আলোচিত ২২ পরিবারের সদস্য। তিনি বলেন, উত্তর কাশিপুর বাতিপাড়া পোড়া বাড়ি মসজিদ রোডের সোহবান শেখের পুত্র লিটন শেখের দুটি চায়ের দোকান রয়েছে। লিটন একটি চায়ের দোকান নিজেই পরিচালনা করেন। লিটনের বাইতিপাড়া চায়ের দোকানে গত ৬/৭ দিন আগে এলাকার চিহ্নিত মাদক বিক্রেতারা মাদক বিক্রি করছিল । এ সময় তিনি মাদক বিক্রির প্রতিবাদ করেন। এ নিয়ে মাদক বিক্রেতাদের মধ্যে বাকবিতন্ডা হয়। পরে তারা লিটনের চায়ের দোকান ছেড়ে চলে যায়। ঘটনার এ বিষয়টি মিমাংশা করার কথা বলেন ঘটনার দিন রাতে লিটনকে তারা ডাকে। মিমাংশার এক পর্যায়ে উভয় পক্ষের মধ্যে বাকবিতন্ডা হয়। এ সময় দুর্বৃত্তরা লিটনকে উর্পযুপরি কুপিয়ে হত্যা নিশ্চিত করে। তার সাথে থাকা আমিনকেও তারা কুপিয়ে রক্তাত্ত জখম করে। সে দুর্বৃত্তদের হাত থেকে বেঁচে দৌড়ে লিটনদের বাসার সামনে গিয়ে চিৎকার শুরু করলে তার স্বজনরা ঘুম থেকে উঠে দৌড়ে আমিনের কাছে আসে। আমিনের কাছ থেকে ঘটনা শুনে স্বজনরা লিটনের খোজে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখে লিটনের রক্তাক্ত নিথর দেহ পড়ে রয়েছে। এ সময় দু’জনকে খুমেক হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক লিটনের মৃত্যু ঘোষণা করেন। নিহতের ছোট ভাই ইমামুল বলেন, লিটনের তিন ছেলে, স্ত্রী ও মা- বাবা রয়েছে। এলাকায় তার দু’টি চায়ের দোকান রয়েছে। মাদক বিক্রির প্রতিবাদ করায় এলাকার চিহ্নিত মাদক বিক্রেতা হজা লিটন, ফরমা আব্দুল্লাহ, আল আমিনসহ ২০/৩০ জন এ হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে।
নিহত লিটন শেখের স্ত্রী হেলেনা বেগম জানান, রাত ১টার সময় তার স্বামী দোকান বন্ধ করে বাড়ির দিকে যাচ্ছিল। এ সময় তাকে দুর্বৃত্তরা লোক মারফত ডেকে পাঠায়। লিটন দোকান থেকে বার্মাশীল কবর খানা রোড আতিয়ার শেখের বাড়ির পর্যন্ত পৌছালে সেখানে ওৎ পেতে থাকা ১৫/২০ জন সন্ত্রাসী তার উপর হামলা করে। এ সময় লিটনের সহযোগী আমিন ছুটে এলে তাকেও কুপিয়ে জখম করে। সন্ত্রাসীদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে লিটনের বুক, দুই হাত, পাসহ শরিরের বিভিন্ন স্থানে গভীর ক্ষত হয়। ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। তাদের ডাক চিৎকারে এলাকার লোকজন এগিয়ে এলে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। তাদের দু’জনকে মুমুর্ষ অবস্থায় উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসক লিটনকে মৃত্যু ঘোষণা করেন।
খালিশপুর থানায় দায়েরকৃত মামলাটি তদন্ত করছেন খালিশপুর থানার অফিসার্স ইনচার্জ (তদন্ত) নিমাই চন্দ্র কুন্ডু। তিনি বলেন, এ ঘটনায় লিটনের স্ত্রী হেলেনা বেগম বাদী হয়ে খালিশপুর থানায় জয়নাল, শাহাদৎ, আজা লিটন, রাজু, রোকন, আল আমিন, আসলাম, টিক্কি রুবেল, আকিব, সাকিব, আব্দুল্লাহ, এলকো সোহেল, গরু মামুন, মাড়–য়া আল আমিন, হেলাল, সাব্বির, মোঃ মাহির, বাবু, আশিকুর রহমানসহ মোট ১৯ জনের নামে এজাহার করেছেন। মামলায় আরো ১০/১৫ জনকে আজ্ঞাত আসামী করা হয়েছে। পুলিশ অভিযান চালিয়ে এজারভুক্ত সাত আসামীকে গ্রেফতার করেছে। এ বিষয়ে খালিশপুর থানার ওসি কাজী মোস্তাক আহমেদ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, হত্যা মামলা রুজু হয়েছে, অভিযান চালিয়ে এজাহারভুক্ত সাত আসামীকে গ্রেফতার হয়েছে। বাকীদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।
আমাদের ৭নং ওয়ার্ড প্রতিনিধি জানান, এদিকে মাগরিব বাদ খালিশপুর লিবার্টি চত্বরে বিআইডিসি সড়কে লিটনের নামাজের জানাজা শেষে গোয়ালখালি কবরস্থানে দাফন করা হয়। এর আগে এলাকায় লিটনের লাশ নিয়ে এলে স্বজনদের কান্নায় এলাকার পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। সন্ধ্যার পর কাশিপুর এলাকা ফাঁকা হয়ে যায়।