দীর্ঘদিন পরে আবারও খুলনা শিববাড়ী মোড়ে আন্দোলনে নেমেছে শিক্ষার্থীরা। তবে উপস্থিতি কম হওয়ার ও পুলিশের হস্তক্ষেপে তারা আন্দোলনে তেমন সারা ফেলতে পারেনি।
আজ মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) বেলা ১২টার দিকে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষার্থীরা শিববাড়ী মোড়ে জড়ো হয়। এরপর তারা তাদের বিভিন্ন দাবী আদায়ের শ্লোগান দিতে থাকে। এর আগে থেকেই শিবাবাড়ী মোড়ে ব্যাপক সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন ছিল।জড়ো হওয়া শিক্ষার্থীদের মাথায় লালফিতা বাধা ছিল। এ সময় পুলিশ তাদের চারিদিক থেকে ঘিরে রেখেছিল।
আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীরা সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে রাজি হয়নি। তবেবৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৮ দফা দাবি নিয়ে তারা উপস্থিত হয়েছিল। শ্লোগানে শ্লোগানে তারা তাদের দাবীর বিষয়টি তুলে ধরে। মাত্র দু’ঘন্টা পড়ে দুপুর ২টা বাজার আগেই তাদের আন্দোলন কর্মসূচি শেষ হয়ে যায়।
এবিষয়ে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের দক্ষিন বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার তাজুল ইসলাম বলেন, বেলা ১২টার দিকে শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়ে আন্দোলনের চেষ্টা চালায়। আমরা তাদের সাথে কথা বলে ফিরিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছি। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় ২শ থেকে ৩শ’ শিক্ষার্থী এতে অংশ নিয়েছিল।
খুলনা মডেল স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষক শরিফুল ইসলাম খান বলেন, সরকার ইতোমধ্যে শিক্ষার্থীদের মূল দাবী মেনে নিয়েছে। শিক্ষার্থীদের আর যেসকল দাবী আছে আশা করছি সরকার সেগুলোও ধাপে ধাপে মেনে নেবে। সারা দেশের তুলনায় খুলনায় তেমন কোন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। তাই আমরা খুলনাতে আর কোন সংঘর্ষ বা হানাহানি দেখতে চাই না।
মুরাদ হোসেন নামে এক অভিভাবকের সাথে কথা হলে তিনি জানান, দেখুন আমার দুই ছেলে মেয়ে কলেজে পড়ে। আমি দিন আনি দিন খাই। আন্দোলনের ফলে সকল কিছু বন্ধ থাকায় আমাদের অর্থাভাবে পড়তে হয়েছে। তাই আমরা খুলনায় কোন আন্দোলন দেখতে চাই না।
সু-শাসনের জন্য নাগারিক খুলনা জেলা শাখার সম্পাদক এ্যাড. কুদরত-এ-খুদা বলেন, এটা মূলত জাতীয় আন্দোলন। হাইকোর্ট এবিষয়ে একটি যুগান্তকারী ও সন্তোষজন রায় দিয়েছেন। সরকারের দীর্ঘ সূত্রিতা ও অনেকের কথাবার্তা শিক্ষার্থীদের আবেগে আঘাত হেনেছে। যে কারণে এই আন্দোলন এখনও রয়ে গেছে। খুলনার পুলিশ সদস্যদের ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, খুলনার পুলিশ সদস্যরা অত্যন্ত ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছেন। তাদের বুদ্ধিমত্তার জন্য খুলনায় কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
শিক্ষার্থীরা দুপুর বারোটা থেকে দুইটা নাগাদ শীববাড়ি মোড় ত্যাগ করে। এ সময় পুলিশের সাথে তাদের বাগ বিতণ্ডা হলেও কোন অপ্রীতিকার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি। পুলিশের পক্ষ থেকে সমগ্র এলাকায় যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। শিক্ষার্থীরা চলে যাবার পর আবার যান চলাচল ছেড়ে দেয় পুলিশ
এ সময় খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনারসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। কোন কর্মসূচি ঘোষণা না করেই শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে ফিরে যায়।
উল্লেখ্য গত ১৯ জুলাই এরপর বুধবার প্রথম খুলনায় শিক্ষার্থীরা আবারও রাজপথে নেমেছে।
শিক্ষার্থী ও নাগরিকদের করণীয় হিসেবে আট দফা বার্তায় বলা হয়,
১। রংপুরের আবু সাঈদসহ সকল শহীদদের স্মরণ করুন। তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করুন। তাদের প্রতিবাদী স্পিরিটকে ধারণ করুন। শহীদদের কবর জিয়ারত করুন। তাদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করুন।
২। হাসপাতালে প্রচুর মানুষ আহত অবস্থায় কাতরাচ্ছে। হাসপাতালে যান, তাদেরকে যথাসম্ভব সহোযোগিতা করার চেষ্টা করুন। আমরা ঢাকা থেকে দ্রুতই একটা ইমার্জেন্সি হেলথ ফোর্স গঠনের উদ্যোগ নিব।
৩। এখনেও অনেক লাশের প্রকৃত পরিচয় পাওয়া যায়নি। সক্ষমতা থাকলে পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করতে সহায়তা করুন৷ মর্যাদার সাথে তাদের দাফন করুন। জানাজায় অংশগ্রহণ করুন।
৪। প্রতিটা বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজে ও এলাকায় কারা শহীদ হয়েছেন ও আহত হয়েছেন, তাদের তালিকা তৈরি করুন ও পরিবারের সাথে যোগাযোগ করুন৷ আমরা পরবর্তীতে সমন্বয় করব।
৫। যেসব সন্ত্রাসী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য হত্যা ও হামলায় সরাসরি জড়িত ছিল, তাদেক চিহ্নিত করে রাখুন।
৬। যারা যে স্থানে আন্দোলন করেছেন নতুন করে সংগঠিত হন। সকলে নিরাপদে থাকুন, চিকিৎসা নিন এবং গ্রেপ্তার এড়ান। ফেইসবুকে ক্ষোভ না ঝেড়ে মাঠের প্রস্তুতি নিন। ইন্টারনেটনির্ভর না হয়ে বিকল্প কিছু পরিকল্পনা ভাবুন। আমরা কেন্দ্রীয়ভাবে দ্রুত সকলের সাথে যোগাযোগ করব।
৭। শিক্ষার্থীরা যার যার ক্যাম্পাস ও হল খোলার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে চাপ দিন। শিক্ষকদের সাথে যোগাযোগ করুন।
৮। যেসকল শিক্ষার্থী ভাই ও বোন প্রবাসে আছেন আন্তর্জাতিকভাবে এই ক্র্যাকডাউন ও হত্যা-নিপীড়ন প্রচার করুন। বাংলাদেশের আন্দোলনরত ছাত্র-নাগরিকদের জন্য সহযোগিতার হাত বাড়ান।