ঊষার আলো প্রতিবেদক : খুলনা মহানগরীর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থান হলো দৌলতপুর উপশহর। বছরের পর বছর ধরে কয়েকটি সরকারি-বেসরকারি স্থাপনার কারণে অত্যন্ত গুরুত্ববহন করে আসছে শহরটি। যার মধ্যে রয়েছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের একটি মাত্র সুনামধন্য শিক্ষপ্রতিষ্ঠান যা সরকারি ব্রজলাল কলেজ নামে পরিচিত, রয়েছে ১৫০ বছরের পুরাতন ঐতিহ্যবাহী সরকারি দৌলতপুর মুহসীন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, দৌলতপুর মুহসীন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, মুহসীন মহিলা মহাবিদ্যালয়, দৌলতপুর ডাকঘর, বাংলাদেশ কৃষি গবেষনা ইনস্টিটিউট, কৃষি প্রশিক্ষন ইনস্টিটিউট, দৌলতপুর ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্স, বাংলাদেশ রেলওয়ে স্টেশন দৌলতপুর, বাংলাদেশ জুট এ্যাসোসিয়েশন ভবন, হর্টিকালচার সেন্টার, সহজ প্রকৌশলীর অধিদপ্তর, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর, দৌলতপুর পুলিশ স্টেশন, ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয়, ঐহিত্যবাহী দৌলতপুর বাজারসহ বিবিধ প্রতিষ্ঠান। তবে সম্প্রতি সময়ে চোখমেলে এই গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহ্যবাহী শহরটি দেখতে একটু চোখ ঝলসে যাচ্ছে মহাসড়কসহ শহরটি অভ্যন্তরীন এলাকার গুরুত্বপূর্ন স্থানগুলোতে অবৈধ আর অনিয়মতান্ত্রিক বিজ্ঞাপনের কারনে। গাছে গাছে লোহার পেরেক বা কাঁটাতার দিয়ে লাগানো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি ও পণ্যের বিজ্ঞাপন বড়ই মর্মহত করে তুলছে এলাকার বৃক্ষপ্রেমীসহ সুধীমহলকে। এই বিজ্ঞাগুলোর কারণে গাছের প্রাণ আজ নিঃপ্রাণ। যা কেবল মাত্র গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধিকে ব্যাহতই করছেনা বরং মরে যেতে বসেছে অনেক গাছ। দৌলতপুর মহাসড়কের দু’পাশে বিশেষ করে দৌলতপুর, মুহসীন মোড়, নতুনরাস্তা, ইস্পাহানী কলোনী মোড়, পালপাড়া, রেলিগেট, মানিকতলাসহ গ্রামঞ্চলের দেয়ানা, মধ্যডাঙ্গা, কালীবাড়ী, পাবলা, গাইকুড়ের গুরুত্বপূর্ণ স্থানের গাছে গাছে পেরেক বা তাঁরকাটা মেরে প্রচার আর প্রসার বাড়ানো লক্ষ টাঙ্গানো হয়েছে প্যানা-ফেস্টুনসহ নানা ধরণের বিজ্ঞাপন। গাছের বিজ্ঞাপন লাগানো যে সকল প্রতিষ্ঠান গুলো তালিকায় রয়েছে তার মধ্যে, নানান অখ্যাত অনুমোদনহীন প্রতিষ্ঠান, অনিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান, কোচিং সেন্টার , শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন সংগঠনের নির্বাচনী প্রচারণামূখী প্যানা, ডায়াগনস্টিক সেন্টারসহ বিভিন্ন সংগঠনের প্যানা ফেস্টুন।
বৃক্ষ আমাদের পরম বন্ধ। যা সৃষ্টিকর্তা কর্তৃক প্রদত্ত। বৃক্ষের দেয়া অক্সিজেনের বলেই আমার বেঁচে আছি। প্রাকৃতিক দূর্যোগ প্রতিরক্ষা, প্রাকৃতিক ভারসাম্য নিয়ন্ত্রনে গাছের বিকল্প কিছুই নেই। তাছাড়া খাদ্যের একটি বিশেষ অংশ আমরা এই বৃক্ষের মাধ্যমেই পেয়ে থাকি। তবে আজ আমাদের অসচেতনা আর স্ব-প্রচারের কারণে গাছগুলো হুঁমকির মুখে পতিত যার শেষ পরিনতি ঘটছে মৃত্যু। কোন নিয়মকানুনের ধার না ধেরে যেখানে সেখানে ইচ্ছা স্বাধীনমতো বিজ্ঞাপনের জন্য পরম বন্ধু এই বৃক্ষের উপর মারা হচ্ছে পেরেক বা তারকাঁটা নামক ঘাতক, যা প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে পরম বন্ধু বৃক্ষের। এ অনিয়ম গুলো দেখার যেন কেউ নেই বললেই চলে। মহাসড়কের সকল গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোসহ থানাধীন বিভিন্ন এলাকার প্রায় মোড়ে মোড়ে দীর্ঘকাল ধরে চলে আসছে এই অনিয়ম। যা বৃক্ষের প্রাকৃতিক ভারসাম্যর রক্ষায় বড়ই প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাড়িয়েছে আজ। এভাবে দিনের পর দিন গাছকে বিজ্ঞাপনের স্থলকেন্দ্রে পরিনত করার কারনে ক্ষুব্ধ সচেতন নাগরিক সহ পরিবেশবিদগন।
গাছের প্রতি এমন নির্দয় আচারণ রোধে সরকারী বিএল কলেজের উদ্ভিদ বিদ্যা বিভাগের সরকারী অধ্যাপক ড. মোঃ মোদ্দাসের হোসেন বলেন, গাছে কোন প্রকার কৃত্রিম বস্তু (লোহা, পেরেক বা তারকাঁটা) দ্বারা আঘাত করলে গাছের খাবার সংগ্রহে বাঁধা সৃষ্টি করে, যেমনি আমরা আহারের অভাবে একসময় মারা যেতে পারি। পেরেক বা লোহার আঘাতের স্থানে জাইলেম ও ফ্লোয়ামটিসুৎ ক্ষতিগ্রস্থ হলে মূলদিয়ে কান্ড, শাখা-প্রশাখার সরবরাহে বাঁধারমুখে পড়ে, ফলে শর্করা সৃষ্টি ব্যাহত হয়। অন্যদিকে ক্ষতগ্রস্থ স্থান দিয়ে ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাকসহ বিভিন্ন অনুজীব ঢুকে আক্রমণ করে, ফলে গাছ ধীরে ধীরে মারা যায়। প্রতিটি ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের অবশ্যই বিজ্ঞাপন থাকবে এটাই স্বাভাবিক। তবে গাছকে বাঁচিয়ে নির্ধারিত স্থানে বিজ্ঞাপনের প্রচার করা উচিত বলে আমি মনে করি।
শহরের সৌন্দর্য বর্ধণ ও পরিচ্ছন্নতাকল্পে সরকার ২০১২ সালে দেয়াল লেখন, পোস্টার লাগানো (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১২ পাশ করেন। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য আইনি পাশ হলেও আজৌবদি সরেজমিনে তা প্রয়োগে বাস্তবায়ন হয়নি। এই আইনের ৪ ধারা মোতাবেক নির্ধারিত স্থান ব্যতিরকে অন্য কোন স্থানে দেয়াল লেখন বা পোষ্টার লাগানো যাবে না। আর গাছে লাগোনো তো প্রশ্নই ওঠে না। তবে আইনের লিপিকরণ কেবল খাতা কলমে। স্বচোখে মিলছেনা কোন প্রতিকারের পথ। নেই কোন সচেনতা। তাই আইনের তোয়াক্কা না করে দিনকে দিন বেড়েই চলে এই বিজ্ঞাপন চালানোর প্রতিযোগীতা। যে সকল প্রতিষ্ঠান গুলো আইনের তোয়াক্কা করে বিজ্ঞাপনের এই মহাপ্রতিযোগীতায় বেগতিতে ছুটছেন তাদের প্রতি গৃহিত আইনের যথাযথ প্রয়োগের জন্য কঠোর দৃষ্টি আরোপের আহবান জানিয়েছেন পরিবেশবিদগন।
কেসিসি’র ৫ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শেখ মোহাম্মদ আলী বলেন, এ দেশের আইন আছে তবে কারো আইন মানার প্রবণতা নেই। আইন অমান্য করাই আমাদের স্বভাব। গাছকে বলা হয় অক্সিজেনের ডিপো। আজকে বিশ্বে যে উষœায়ন হচ্ছে তার একটি মাত্র কারণ তাহলো বৃক্ষ কর্তন বা বৃক্ষ নিধন। যারা গাছের সঙ্গে বিজ্ঞাপন দিয়ে গাছের ক্ষতি সাধন করছে সেই সকল ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া উচিত বলে আমি মনে।
পরিবেশ সুরক্ষা ফোরামের আহবায়ক এ্যাড.কুদরত-ই-খুদা বলেন, প্রথমত শহরে যে সকল গাছ আছে তা সংরক্ষণ করা ও অধিকহারে গাছ লাগানো। শহরের মধ্যে দুইটি প্রতিষ্ঠান কেডিএ ও কেসিসি গাছ লাগানোর প্রতি অধিক ভূমিকা পালন করে। আমাদের দেশে আইন আছে তবে আইনের প্রয়োগ নেই। আমাদের দেশে যে প্রচলিত আইন আছে তার মধ্যে সকল সমস্যার প্রতিকার আছে। বিজ্ঞাপন প্রচারে ২০১২ সালে দেয়াল লিখন, পোস্টার লাগানো (নিয়ন্ত্রণ ) আইন সালের আইন গৃহিত হলেও এর সমাধান কল্পে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসহ সুধী নাগরিক সমাজকে আরো সচেতন হতে হবে বলে।
কেসিসি’র সচিব মোঃ আজমুল হক বলেন, নগরীতে যে পরিমানে বিজ্ঞাপনে সয়লাব সে বিষয়ে আমি অবগত আছি। আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনেকরি অনুমোদনহীনভাবে বিজ্ঞাপন প্রচার করা চরম অন্যায়। কোন অবস্থানেই বৃক্ষের ক্ষতি সাধন করা যাবে না। এ ব্যাপারে আমি মেয়র মহোদ্বয়ের সাথে আলোচনা করে সমস্যা সমাধান করবো বলে তিনি জানান।