UsharAlo logo
বৃহস্পতিবার, ৫ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

খুলনা মহানগরে পানি সংকট বাড়ছে: সমাধান দিতে পারছে না ওয়াসা

koushikkln
মার্চ ২১, ২০২১ ১১:১২ অপরাহ্ণ
Link Copied!

বিশেষ প্রতিনিধি : গ্রীষ্মের শুরুতেই পানি সংকটে পড়েছে মহানগরী খুলনা। গভীর নলকূপগুলো পানির স্তর না পাওয়ায় বিভিন্ন এলাকায় পানি পাচ্ছেন না নগরবাসী। ফলে স্বাভাবিক ব্যবহারের পাশাপাশি সুপেয় পানির সংকটে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে মধ্যবিত্ত ও নি¤œবিত্ত পরিবারগুলো দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। পানির বাড়তি বাজেট করতে হচ্ছে।
এদিকে নগরীর অধিকাংশ এলাকায় পাইপলাইনে মধুমতি নদীর পরিশোধিত পানি সরবরাহ করছে খুলনা ওয়াসা। নিত্য প্রয়োজনীয় কাজে এই পানি ব্যবহার করা হয়। কিন্তু দুর্যোগের এই সময় ওয়াসার পানি পান করা কিংবা পানি দিয়ে রান্না করা যাবে-কিনা এ ব্যাপারে কোনো নিশ্চয়তা দিচ্ছে না ওয়াসা। এতে খাবার পানি নিয়ে মানুষের কষ্ট বাড়ছে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুষ্ক মৌসুমে খুলনার মানুষের পানির কষ্ট চলছে গত ৮/১০ বছর ধরে। প্রতিবছরই এই কষ্ট বাড়ছে। মানুষের পানির কষ্ট কমাতে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে ওয়াসা। প্রকল্পের মাধ্যমে মধুমতি নদী থেকে পানি এনে তা পরিশোধন করে নগরীতে সরবরাহ করা হচ্ছে। নগরীর ৩৮ হাজার বাড়িতে এখন ওয়াসা পাইপলাইনে পানি দিচ্ছে। কিন্তু খাবার পানির কষ্ট আগের মতোই থেকে গেছে।
নগরীর বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওয়াসার প্রকল্প বাস্তবায়নের আগে নগরীর মানুষ হস্তচালিত নলকূপের ওপর নির্ভরশীল ছিলো। প্রায় সব পরিবারই নলকূপে মোটর সংযোজন করে পানি উত্তোলন করতো। কিন্তু গত ৮/১০ বছর ধরে গ্রীষ্মের শুরু থেকেই মোটরে পানি ওঠা বন্ধ হতে শুরু করে। এরপর থেকে উচ্চবিত্ত পরিবারগুলো বাড়িতে মিনি উৎপাদক নলকূপ (সাবমার্সিবল পাম্প) স্থাপন শুরু করে। গত ৫ বছরে নগরীর ৯০ ভাগ বহুতল ভবন ও উচ্চবিত্তের বাড়িতে এই উৎপাদক নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে। গরমের সময় নি¤œ ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো এসব বাড়ি থেকেই পানি সংগ্রহ করে থাকে।
সূত্রটি জানায়, ওয়াসার পানি আসার পর জুন থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত মানুষের পানির কষ্ট তেমন ছিলো না। কিন্তু ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে নলকূপে পানির পরিমাণ কমতে থাকে। মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে এসে যা একেবারেই কমে গেছে।
নগরীর মিয়াপাড়া পাইপের মোড় এলাকার বাসিন্দা সরকারি একটি ব্যাংকের কর্মকর্তা কানিজ ফাতেমা সমকালকে বলেন, নলকূপে আগের মতো পানি উঠছে না। রাতে অথবা ভোরে মটর চালালে পানি ওঠে, কিন্তু পরিমাণে তা সামান্য। গরম বাড়লে কী হবে-তাই নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।
নগরীর শেখপাড়া পুরাতন মসজিদ এলাকার বাসিন্দা ফাতেমা বেগম জানান, গত ৮/৯ মার্চের পর থেকে মোটরে পানি উঠছে না। ওয়াসার পাইপলাইনে নিয়মিত পানি আসছে। কিন্তু এই পানি খাওয়া ও রান্নার কাজে ব্যবহার করা যাবে কি-না জানি না। বাধ্য হয়ে অন্য এলাকা থেকে খাবার পানি আনার জন্য লোক রাখতে হয়েছে।
গত কয়েকদিন ধরে নগরীর গোবরচাকা, বসুপাড়া, ফারাজিপাড়া, মির্জাপুর রোড, বাইতিপাড়া, আহসান আহমেদ রোড, টুটপাড়া, বসুপাড়া, পশ্চিম বানিয়াখামার, বাবু খান রোড এলাকায় খোঁজ নিয়ে একই ধরনের সমস্যার কথা জানা গেছে।
এ ব্যাপারে খুলনা ওয়াসার উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালনা কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, গরমের শুরুতে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় অনেক এলাকার নলকূপে পানি পাওয়া যাচ্ছে না। ওয়াসার নিজস্ব নলকূপেও পানি উত্তোলনের পরিমাণ কমেছে।
খুলনা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মোঃ আবদুল্লাহ বলেন, মধুমতি নদীর পানি পরিশোধেনের পর প্রতিদিন পরীক্ষা করা হয়। ওই সময় পানি শতভাগ বিশুদ্ধ এবং পানযোগ্য থাকে। কিন্তু এই পানি পাইপলাইনে ৪০/৫০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে কী অবস্থায় গ্রাহকের কাছে পৌঁছায় সেটা আমরা জানি না। পাইপলাইনের কোথাও ছিদ্র আছে কি-না সেটাও তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায় না। এজন্য গ্রাহকদের এই পানি রান্না বা পান করার আগে ভালোভাবে ফুটিয়ে নেওয়া প্রয়োজন।
তবে ওয়াসা এমডি জানান, তিনি ওয়াসার পানি পান ও রান্নার কাজে ব্যবহার করেন না। উৎপাদক নলকূপ থেকে উত্তোলন করা পানিই ব্যবহার করেন তিনি।