ঊষার আলো ডেস্ক : প্রায়ই গরম খুন্তি দিয়ে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে ছ্যাঁকা দেয়া হতো এতিম শিশু আমেনাকে (১৩)। বাড়ির সব কাজ করানো হতো তাকে দিয়ে। কাজ করতে-করতে ক্লান্ত হয়ে পড়তো। কাজ শেষ হওয়ার আগেই নতুন কাজ ধরিয়ে দেয়া, কাজে একটু দেরি হলেই গালমন্দ করা, চুল ধরে টানাটানিসহ করা হতো নানা নির্যাতন। কাজে ভুল হলেই ক্ষুব্ধ হতো শ্যামলী ও তার স্বামী বাদল। বাদল মাটিতে ফেলে দুই পা টেনে ধরতো আর শ্যামলী বুকের ওপর পাড়াতো। উদ্ধারের পর হাসপাতালে ভর্তি হয়ে এমনই নির্মম নির্যাতনের কথা জানায় শিশু আমেনা।
অবুঝ আমেনার হাত পা, পিঠ মুখসহ শরীরে বিভিন্ন স্থানে পোড়া ও ক্ষত চিহ্ন দেখা যায়। পেট পুরে তিন বেলা খাবার ও সামান্য কিছু টাকার জন্য মায়ের বান্ধবীর বাসায় গৃহকর্মীর কাজে গিয়ে দিনের পর দিন এভাবেই নির্যাতনের শিকার হয়েছে আমেনা। সে যশোর সদর উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের ভায়না রাজাপুর গ্রামের মৃত নূর ইসলামের মেয়ে।
আমেনার মা আকলিমা জানিয়েছেন, স্বামীর অকাল মৃত্যুর পর আমাদের সংসার এলোমেলো হয়ে যায়। মেয়ে আমেনার ভালো মন্দ চিন্তা করে তাকে আমার বান্ধবী শ্যামলীর বাসায় গৃহকর্মী হিসেবে পাঠানো হয়। শ্যামলীর স্বামী বাদল শিকদার সরকারি চাকরিজীবী হওয়ার সুবাদে তার ঢাকার মহাখালীতে ৭ তলার একটি ফ্লাটে বসবাস করে। ওই দম্পতির তিন বছর বয়সের ছেলেকে দেখভালের কথা বলে তাকে কয়েক মাস আগে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়।
আকলিমা আরও জানায়, শ্যামলী আমার বান্ধবী হওয়ায় তিনি মেয়েকে পাঠাতে মত দিয়েছিলেন। কিন্তু আমার এতিম মেয়েটাকে এমন হাল করা হবে সেটা কল্পনাতেও আসেনি। নির্মমতা এত কঠিন ছিলো যে প্লাস দিয়ে মাথার চুল পর্যন্ত টেনে উপড়ে ফেলানো হয়েছে। আমি পাষন্ড দম্পতির শাস্তি দাবি করছি। হাসপাতালের বেডে শুয়ে নির্যাতনের শিকার আমেনা কাঁন্নাজড়িত কন্ঠে জানায়, ওই বাড়িতে যাওয়ার কয়েক দিনের মধ্যেই তারা আমাকে মারধর শুরু করে। সকাল-দুুপুর-রাত নির্যাতন করা যেনো এক প্রকার রুটিন হয়েছিলো।
মাটিতে শুইয়ে দুই পা ধরে টেনে ধরে যখন বুকে পাড়া দেয়া হতো তখন হাউমাউ করে চিৎকার করলেও পাষন্ডদের মন গলেনি। গরম খুন্তির ছ্যাঁকা দেয়ার পর মনে হতো আমি আর পৃথিবীতে নেই। নির্যাতনে শ্যামলী ও বাদল কেউ কারো চেয়ে কম নয়। নির্যাতনে আমি অসুস্থ হয়ে পড়েছি অনেকবার। সর্বশেষ অসুস্থতার খবর শুনে আমার নানী আমাকে আনতে গত পরশু ঢাকায় যায়। নির্যাতনের ঘটনা ফাঁস হওয়ার ভয়ে আমাকে প্রথমে পাঠাতে রাজি হচ্ছিলো না ওই দম্পতি। আমার নানী নাছোড় বান্দা হয়ে সেখান থেকে আমাকে যশোরে আনে।
যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ইনচার্জ ডা. আব্দুর রশিদ জানান, বৃহস্পতিবার (২৭ মে) সকালে শিশু আকলিমাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সে মহিলা সার্জারী ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন।
সার্জারী বিভাগের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, শিশু আমেনার শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন রয়েছে। তাকে চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হয়েছে। শিশুর মা আকলিমা জানান, মেয়েকে নির্যাতনের ঘটনায় মামলা করবেন। কোতোয়ালি মডেল থানার (ওসি) তাজুল ইসলাম জানান, অভিযোগ পেলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
(ঊষার আলো-এমএনএস)