ঊষার আলো রিপোর্ট : ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) হলের গণরুমে নবীন ছাত্রীকে নির্যাতনের ঘটনায় ছাত্রলীগের এক নেত্রীসহ পাঁচ ছাত্রীকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। উচ্চ আদালতের নির্দেশে প্রশাসনের নেওয়া সিদ্ধান্তের চূড়ান্ত পর্যালোচনা রেজুলেশন আকারে রোববার কপি ফ্যাক্সযোগে আদালতে পাঠিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পর্যালোচনার হার্ড কপি ১৮ জুলাই (আগামীকাল) আদালতে প্রেরণ করা হবে বলে নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার আলী হাসান। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ভুক্তভোগী ছাত্রী ফুলপরী খাতুন। যথাযথ বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন বলে দাবি তার।
ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনার ছয় মাস পর শনিবার ছাত্রলীগ নেত্রী সানজিদা চৌধুরী অন্তরা, ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের তাবাসসুম ইসলাম ও মোয়াবিয়া জাহান, আইন বিভাগের ইসরাত জাহান মীম এবং চারুকলা বিভাগের হালিমা খাতুন উর্মিকে বহিষ্কার করা হয়। তবে এই শাস্তি অপরাধের মাত্রানুযায়ী হয়নি বলে মনে করছেন অনেকে। ‘গুরু পাপে লঘু শাস্তি’ দেওয়া হয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এদিকে নিরাপত্তার শঙ্কার কথা জানিয়েছে ভুক্তভোগী ও সাক্ষ্যদানকারীরা। ফুলপরী খাতুন বলেন, শুরু থেকে দোষীদের যথাযথ শাস্তি দাবি করে আসছি। আমি তাদের আজীবনের জন্য বহিষ্কার চেয়েছি। তারা যে ধরনের হিংস্রতা আমার সঙ্গে করেছে তা যেন আর কারও সঙ্গে না করতে পারে। এমন ভয়ংকর নৃশংস ঘটনার মুখোমুখি যেন কাউকে না হতে হয়। এ জন্য দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি কামনা করেছিলাম। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যে শাস্তি দিয়েছে তাতে তা যথাযথ হয়নি। এখন তারা ক্যাম্পাসে ফিরে প্রতিশোধ পরায়ন হয়ে উঠবে। আমাকে হয়তো ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে যেতে হবে। আমি শঙ্কামুক্ত নই, আমি আতঙ্কিত।’
এছাড়া আতঙ্কে আছেন সাক্ষ্যদানকারী ছাত্রীরাও। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের তদন্ত কমিটি নাম প্রকাশ না করার শর্তে সাক্ষ্য নেয়। কিন্তু কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও গাফিলতির কারণ সাক্ষ্যদানকারীদের নামের তালিকা ও তাদের দেওয়া সাক্ষ্য দোষীদের হাতে পৌঁছে যায় এবং তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। তাই আতঙ্কে আছেন সাক্ষীরা।
সাক্ষ্যদানকারী ছাত্রীদের কয়েকজন জানান, আমরা যতটুকু জানতাম তাই তদন্ত কমিটিকে বলেছি। চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে দোষীদের এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। তারা ক্যাম্পাসে ফিরে প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে উঠতে পারে। তাদের জীবন থেকে যেহেতু এক বছর চলে যাচ্ছে তারা আমাদের ছেড়ে দেবে না। এ ছাড়া তাদের কাছে সাক্ষী তালিকা থাকায় আমরা আরও বেশি নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছি। জানতে চাইলে প্রক্টর প্রফেসর ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদ বলেন, ‘রোববার সিদ্ধান্তের কপি ফ্যাক্সযোগে পাঠানো হয়েছে। হার্ড কপি ১৮ জুলাই আইন প্রশাসকের মাধ্যমে আদালতে পাঠানো হবে।’
রিটকারী আইনজীবী গাজী মো. মহসিন বলেন, অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী অবশ্যই শাস্তি পর্যাপ্ত না। তবে বিশ্ববিদ্যালয় যে সিদ্ধান্ত দিয়েছে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, তাদের সংশোধনের একটা সুযোগ থাকা উচিত। শাস্তি যেটা হয়েছে সেটা যাতে কোনোভাবেই মাফ না হয়, সেটা এনসিউর করতে হবে। আদালতের ক্ষমতা সর্বোচ্চ। আদালত চাইলে অনেক কিছুই করতে পারেন। আদালত সাজা দেওয়ার দায়িত্বটা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে দিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয় আইনে যেটা রয়েছে সেটা দেওয়া হয়েছে। এরপরও চূড়ান্ত বহিষ্কারের ক্ষমতা সিন্ডিকেটের আছে। এখন আদালত সিন্ডিকেটকে কোনো নির্দেশনা দেবে কি না তা আদালতই বলতে পারবে।
ঊষার আলো-এসএ