UsharAlo logo
বুধবার, ১৮ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৩রা পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

জনবল সংকটে মামলার স্তূপ পিবিআইয়ে

usharalodesk
ডিসেম্বর ১৫, ২০২৪ ১১:০৪ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

ঊষার আলো রিপোর্ট :  প্রতিষ্ঠার পর থেকেই একঝাঁক চৌকশ সদস্যদের নিয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কাজ শুরু করে। অসংখ্য ক্লুলেস ও চাঞ্চল্যকর মামলার রহস্য ভেদ করে তদন্ত কর্মকর্তারা।

রাজধানীর রমনা এলাকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী সগিরা মোর্শেদ হত্যার ৩০ বছর পর রহস্য উন্মোচন করে পিবিআই। নৃশংস ভাবে খুন হওয়া ফেনির মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান হত্যা মামলার রহস্যও স্বল্প সময়ের মধ্যে উদ্ঘাটন করে সংস্থাটি।

এছাড়া অজ্ঞাত লাশের সন্ধানেও দক্ষতার সঙ্গে কাজ করে পিবিআই। পুলিশের অন্যান্য সংস্থা বছরের পর বছর যেসব জটিল মামলার কিনারা করতে পারেনি পুলিশেরই বিশেষায়িত সংস্থা পিবিআই ওইসব মামলার রহস্য ভেদ করছে। ফলে প্রতিষ্ঠার কয়েক বছরেই দেশব্যাপী প্রশংসিত হয় পিবিআই। কিন্তু সেই পিবিআইতে এখন দক্ষ জনবলের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।

পুলিশে পুনর্গঠন শুরু হওয়ার পর থেকে গত ৪ মাসে প্রায় সাড়ে ৩শ দক্ষ কর্মকর্তাকে পিবিআই থেকে বদলি করে পুলিশের অন্যান্য ইউনিটে দেওয়া হয়েছে যা অতীতে কখনো হয়নি। বর্তমানে ১১টি জেলা ইউনিটে নেই কোনো পুলিশ সুপার (এসপি)। দক্ষ ও চৌকশ কর্মকর্তাদের বদল করে নতুন করে যাদের পদায়ন করা হচ্ছে তাদের বেশিরভাগের নেই তদন্তের অভিজ্ঞতা। ইয়াং এএসআই ও কনস্টেবলদের বদলি করে তাদের পরিবর্তে দেওয়া হচ্ছে বয়োবৃদ্ধদের।

সূত্র বলছে, বদলি হয়ে পিবিআইতে যাওয়া ইন্সপেক্টরদের বেশিরভাগই ছিলেন বিভিন্ন থানার ওসি। এসআই ও কনস্টেবলরা বেশিরভাগই বয়োবৃদ্ধ আর বিসিএস পুলিশ কর্মকর্তাদের বেশিরভাগই দীর্ঘদিন এপিবিএন, র‌্যাব ও পুলিশ সদর দপ্তরে বিভিন্ন দায়িত্বে ছিলেন। ফলে মামলা তদন্তে মন্থরতা দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে প্রায় ১৫ হাজার সিআরও ও জিআর মামলা পেন্ডিং (মুলতবি) রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

জানতে চাইলে পিবিআই প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মো. মোস্তফা কামাল বলেন, ‘এখন যেহেতু ট্রানজিশনাল পিরিয়ড চলছে এজন্য কিছুটা সমস্যা দেখা দিয়েছে। জনবল ঘাটতি পূরণে পুলিশ সদর দপ্তরকে অবগত করা হয়েছে। সমস্যা সমাধানের প্রক্রিয়া চলমান আছে।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর হামলার মুখে পড়ে পুলিশ। সারা দেশে পুলিশের বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা হয়। আত্মগোপনে চলে যায় পুলিশ। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর পুলিশকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। শীর্ষ সব পদে পরিবর্তন আনা হয়। একই সঙ্গে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের কর্মকর্তাদের বদলি করা হয়।

এরই অংশ হিসাবে পিবিআই থেকে দক্ষ কর্মকর্তাদের অন্যত্র বদলি করা হচ্ছে। এদের পরিবর্তে যাদের পিবিআইতে পদায়ন করা হচ্ছে তাদের দক্ষতা নিয়ে খোদ পিবিআইর কর্মকর্তাদের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে।

নাম প্রকাশ না করে একাধিক কর্মকর্তা বলেন, দীর্ঘদিন তদন্তের বাইরে ছিলেন, অনেকে চাকরি জীবনে সেভাবে কখনো মামলা তদন্ত করেননি এমন সব কর্মকর্তাকে পিবিআইতে পদায়ন করা হচ্ছে। বিশেষ করে বিভিন্ন থানার ওসি দীর্ঘদিন থানা এলাকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ব্যস্ত ছিলেন তাদের হুট করে মামলা তদন্তের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট পিবিআইতে দেওয়া হয়েছে। এতে তারাও হঠাৎ করে তদন্তে নেমে কোনো কূলকিনারা পাচ্ছেন না। বেশিরভাগ সদস্য অফিসে আসা-যাওয়ার মধ্যে আছেন।

পুলিশে বদলি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হলেও পিবিআইর মতো ইউনিটে একসঙ্গে এত অধিকসংখ্যক সদস্যকে বদলি সঠিক সিদ্ধান্ত হয়নি বলে মনে করছেন তারা।

সূত্র বলছে, ২০১২ সালে যাত্রা শুরু করার পর ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে মামলা তদন্ত শুরু করে পিবিআই। এর বিভিন্ন ইউনিটে ১ হাজার ৮৭৯টি পদ রয়েছে যার মধ্যে বর্তমানে ১২১টি পদ শূন্য রয়েছে।

গত ৪ মাসে দক্ষ ১৫ জন পুলিশ সুপার (এসপি), ১৬০ জন ইনস্পেক্টর ও ১৭০ সাব-ইনস্পেক্টরকে (এসআই) বদলি করে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে দেওয়া হয়েছে। এদের পরিবর্তে যাদের পিবিআইতে দেওয়া হয়েছে তাদের মামলা তদন্তের অভিজ্ঞতা তেমন নেই। এছাড়া জনবল সংকটের কারণে বেশ কয়েকটি জেলা ইউনিটে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বা সহকারী পুলিশ সুপার দিয়ে কাজ চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এছাড়া খালি থাকা ১২১টি পদে নতুন করে কাউকে পদায়ন করা হচ্ছে না।

পিবিআইতে এসপি পদ আছে ৪৯টি। এর মধ্যে ১১টি এসপি পদ এখন খালি রয়েছে। অনেক ইউনিট চলছে জোড়াতালি দিয়ে। জেলা ইউনিটগুলোর মধ্যে এখনো এসপি নেই টাঙ্গাইল, জামালপুর, নেত্রকোনা, কুমিল্লা, চাঁদপুর, নওগাঁ, পাবনা, গাইবান্ধা, ঠাকুরগাঁও, কুষ্টিয়া, বাগেরহাট, ঝিনাইদহ ও পিরোজপুরে।

জনবল কমলেও ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে পিবিআইতে তদন্তের জন্য আসা মামলার সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। চলতি বছরের আগস্ট, সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বরে তদন্তের জন্য পিবিআইতে মোট মামলা এসেছে ১৪ হাজার ৯৫৬টি। এর মধ্যে জিআর মামলা ১২৪৪টি ও সিআর মামলা ১৩৭১২টি। এছাড়া নভেম্বর শেষে মুলতবি মামলা রয়েছে ১৪ হাজার ৬৮৪টি। এর মধ্যে সিআর মামলাই বেশি যা ১১ হাজার ২৬২টি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সম্প্রতি তদন্তে অত্যন্ত দক্ষ ও মেধাবী ১৫ জন এসপিকে বদলি করা হয়েছে। অবশ্য এসব এসপিদের বেশিরভাগই বিভিন্ন জেলার এসপি হয়েছেন। অনেকে বদলি হওয়ার তদবির করছেন।

পিবিআইর শীর্ষ কর্মকর্তারা বলছেন, পিবিআইতে যেসব মামলা তদন্তের জন্য আসে তার বেশিরভাগই সিআর মামলা (আদালতে হওয়া মামলা)। এছাড়া পিবিআই কর্মকর্তাদের দিয়ে তদন্ত করতে বাদীপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতেও আদালত অসংখ্য মামলা পিবিআইতে তদন্তের জন্য পাঠাচ্ছেন। এসব মামলা তদন্তে দক্ষ কর্মকর্তার কোনো বিকল্প নেই। পিবিআই দীর্ঘদিন ধরে তাদের সদস্যদের অভিনব পন্থায় কাজের উপযোগী করে তুলেছে।

যানবাহন সংকট : দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে ৪২টি জেলায় পিবিআইর কার্যক্রম চলে। যেসব জেলাতে পিবিআইর ইউনিট নেই আদালত তার পাশের জেলার ইউনিটকে তদন্তের নির্দেশ দিয়ে থাকেন। কিন্তু এ সংস্থায় যানবাহনের তীব্র সংকট রয়েছে। বড় জেলা ইউনিটগুলোতে মাত্র দুই থেকে তিনটি জিপ ও পিকআপ ভ্যান রয়েছে। এছাড়া মোটরসাইকেল আছে তিন থেকে চারটি।

ঊষার আলো-এসএ