UsharAlo logo
মঙ্গলবার, ১৮ই জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৪ঠা আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জীবন বাঁচাতে রক্ত দিন

usharalodesk
জুন ১২, ২০২৪ ৭:১০ অপরাহ্ণ
Link Copied!

ঊষার আলো রিপোর্ট: ১৪ জুন বিশ্ব রক্তদাতা দিবস। ২০০৪ সালে দিবসটি প্রথম পালিত হয়েছিল। নিরাপদ রক্ত নিশ্চিত করা ও স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের উৎসাহ দিতেই বিশ্বব্যাপী পালিত হয়ে আসছে দিবসটি। সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পালিত হবে দিবসটি। ডব্লিউএইচও এ বছরের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছে, 20 years of celebrating giving: thank you blood donors! – ‘দিবস উদযাপনের ২০ বছর : ধন্যবাদ হে রক্তদাতা!’। আন্তর্জাতিকভাবে এ বছর বিশ্ব রক্তদাতা দিবসের বিশ্বব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজক দেশ আলজেরিয়া।

প্রতি বছর বাংলাদেশে প্রায় ৮-১০ লাখ ব্যাগ রক্তের চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ আসে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন থেকে। বাকিটা আত্মীয়স্বজন ও পেশাদার রক্তদাতাদের মধ্য থেকে আসে। স্বেচ্ছাসেবীদের মধ্যে একটা বড় অংশ পূরণ করে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন, সন্ধানী, রেডক্রিসেন্টসহ বেসরকারি সংস্থা।

প্রতিদিন আমাদের যে পরিমাণ রক্তের প্রয়োজন সেটা পর্যাপ্ত পাওয়া যায় না। হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটার বা স্বেচ্ছা রক্তদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে গেলে দেখা যায় রক্তের জন্য হাহাকার। হয়তো ২৪ ঘণ্টায় প্রয়োজন দুইশ ব্যাগের, সরবরাহ আছে একশ পঞ্চাশ ব্যাগের। অর্থাৎ আরও পঞ্চাশজন রক্ত পাবেন না।

অপারেশন ছাড়াও থ্যালাসেমিয়া রোগসহ বিভিন্ন কারণে শরীরে রক্তের ঘাটতি হতে পারে। এ সময় প্রয়োজন বিশুদ্ধ রক্ত। আর প্রয়োজনীয় রক্ত না পাওয়া মানে মৃত্যুঝুঁকি। অবাক করা বিষয় ১৬ থেকে ১৮ কোটি মানুষের দেশে এখনো রক্তের অভাবে মানুষ মারা যাচ্ছে। একসময় বেশির ভাগ রক্তই আসত পেশাদার রক্ত বিক্রেতা ও আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে। তবে এখন স্বেচ্ছা রক্তদান প্রতিষ্ঠান থেকেই বেশির ভাগ রক্ত আসে। তারপরও ঘাটতি অনেক বেশি। আর পেশাদার রক্ত বিক্রেতাদের অধিকাংশই সিফিলিস, হেপাটাইটিস-বি বা এইডসসহ নানা রোগে আক্রান্ত। ফলে এই দূষিত রক্ত পরিসঞ্চালিত হয়ে রক্তগ্রহীতা আক্রান্ত হন দুরারোগ্য ব্যাধিতে। প্রয়োজনের সময়ে রক্ত পাওয়া এবং দূষিত রক্তের অভিশাপ থেকে মুমূর্ষু মানুষকে রক্ষা করার জন্যই প্রয়োজন নিরাপদ ও সুস্থ রক্তের।

এর জন্য প্রয়োজন সচেতন তরুণ সমাজকে এগিয়ে আসা। কারণ স্বেচ্ছা রক্তদানের মাধ্যমে যেকোনো সুস্থ মানুষ নিজের কেনো ক্ষতি না করেই একজন মুমূর্ষু মানুষকে বাঁচাতে পারে। ভালো কাজে মানুষ সবসময় অন্যকে দেখে উদ্বুদ্ধ হয়। বন্ধু রক্ত দিচ্ছে দেখে তার আরও বন্ধুও রক্ত দিতে উদ্বুদ্ধ হয়।

রক্তদান একটি মানবিক দায়বদ্ধতা, সামাজিক অঙ্গীকার। যিনি যে পেশায়ই থাকুন না কেন, সমাজের জন্য তার কিছু না কিছু করার আছে। এক ব্যাগ রক্তদানের মাধ্যমেও তিনি পালন করতে পারেন তার সামাজিক অঙ্গীকার। রক্তদান স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। রক্তদান করার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের শরীরের মধ্যে অবস্থিত ‘বোন ম্যারো’ নতুন কণিকা তৈরির জন্য উদ্দীপ্ত হয়। দান করার ২ সপ্তাহের মধ্যেই নতুন রক্তকণিকা জন্ম হয়ে এই ঘাটতি পূরণ করে।

আর প্রাকৃতিক নিয়মেই যেহেতু প্রতি ৪ মাস পর পর আমাদের শরীরের রেড সেল বদলায়, তাই বছরে ৩ বার রক্ত দিলে শরীরের লোহিত কণিকাগুলোর প্রাণবন্ততা আরও বেড়ে যায়। ইংল্যান্ডে মেডিকেল পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, নিয়মিত স্বেচ্ছা রক্তদাতারা দুরারোগ্য রোগ-ব্যাধি থেকে প্রায়ই মুক্ত থাকেন। রক্তদাতার হৃদরোগ ও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকিও অনেক কম।

রক্তদান ধর্মীয় দিক থেকেও অত্যন্ত পুণ্য বা সওয়াবের কাজ। এটি এমন একটি দান, যার তাৎপর্য সম্পর্কে পবিত্র কোরআনের সুরা মায়েদার ৩২নং আয়াতে বলা হয়েছে, ‘একজন মানুষের জীবন রক্ষা করা সমগ্র মানবজাতির জীবন রক্ষা করার মতো মহান কাজ।’

ঋগবেদে বলা হয়েছে, ‘নিঃশর্ত দানের জন্য রয়েছে চমৎকার পুরস্কার। তারা লাভ করে আশীর্বাদধন্য দীর্ঘজীবন ও অমরত্ব।’ আসলে সব ধর্মেই রক্তদানকে উৎসাহিত করা হয়েছে। নিঃসন্দেহে এটি একটি বড় ইবাদত।

অনেকে নানা অজুহাতে রক্ত দিতে চান না। কারও সুইয়ের ভয়, কেউ অসুস্থ বা দুর্বল হওয়ার ভয়। কেউ ভাবেন, রক্ত দিলে হয়তো শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়বে, দুর্বলতায় ভুগবে বা বড় কোনো ক্ষতি হবে তার। তা ছাড়া অনেকে ভাবেন, রক্ত যদি দিতেই হয় তো সেটা যেন পরিবারের সদস্য, নিকটাত্মীয় বা বন্ধুর জরুরি প্রয়োজনে দেওয়া হয়, বাহিরের মানুষকে নয়। এখন বাস্তবতা হচ্ছে, রক্ত দেওয়া হোক বা না হোক, নির্দিষ্ট একটা সময়ের ব্যবধানে তা এমনিই বদলে যায়। যেমন, রক্তের প্রধান তিন উপাদানের একটি অণুচক্রিকার আয়ু ৮-৯ দিন, শ্বেতকণিকার আয়ু ১৩-২০ দিন এবং লোহিত কণিকার আয়ু ১২০ দিন। নির্দিষ্ট এ সময় পর কণিকাগুলো নিজে নিজেই লিম্ফিটিক সিস্টেমের ভেতরে ধ্বংস হয়ে যায়।

রক্তদানের মাধ্যমে রক্তদাতার বরং উপকার হয়। রক্ত দেওয়ার সময় তার অনেক টেস্ট করা হয়। তার একটা ফ্রি মেডিকেল চেকআপ হয়ে যায়। যতবার রক্ত দেবে ততবার ফ্রি মেডিকেল চেকআপ হয়ে যায়। রক্ত দেওয়ার আগে তার পালস দেখা হয়, ব্লাড পেশার দেখা হয় এবং রক্তের অনেক টেস্ট করা হয়। এর মাধ্যমে যদি তার কোনো অসুস্থতা থাকে সেটা সে জানতে পারে এবং সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা নিতে পারে। এটা তার একটা বাড়তি লাভ।

এ ছাড়া যারা নিয়মিত রক্তদান করেন তাদের হার্ট ডিজিস কম হয়। কারণ রক্তদানের মাধ্যমে শরীর থেকে অতিরিক্ত আয়রন চলে যায়। নিয়মিত রক্তদান করলে স্ট্রোকের আশঙ্কা ৮৮% কমে যায়। এ ছাড়া রক্ত দেওয়ার মাধ্যমে ওবেসিটির পেসেন্টরাও উপকৃত হতে পারেন। রক্তদান করলে অনেকের ক্যানসার ঝুঁকি কমে যায়। যিনি রক্ত দিচ্ছেন তার শরীরে ৬০-১২০ দিনের মধ্যে রক্ত পূরণ হয়ে যায়।

ঊষার আলো-এসএ