ঊষার আলো প্রতিবেদক : নুরুজ্জামান সুমন। খুলনা সিটি কর্পোরেশনের একজন কর্মচারি। কিন্তু তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রীর নানা ষড়যন্ত্রে তিনি দিশেহারা। তালাক প্রাপ্তির প্রায় দেড় মাসের মাথায় ছেড়ে আসা স্বামী নুরুজ্জামান সুমনকে মৃত দেখিয়ে আবারো বিয়ে করলেন নাদিরা আক্তার ওরফে সুমনা জামান নিপু (৩৫) নামের এক মহিলা। গত ২০২০ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি সুমন ও নাদিরার তালাক চূড়ান্ত হয়। এরপর কেসিসিতে কর্মরত সুমনকে মৃত দেখিয়ে তালাকের এক মাস ১২দিনের মাথায় নতুন সংসার গড়লেন নাদিরা আক্তার। তবে তিনি এবার ছেড়ে আসা স্বামী সুমনকে মৃত দেখিয়ে অন্যকে বিয়ে করেছেন। তার নতুন স্বামীর নাম হচ্ছে মাহবুব হাসান। তার বাড়ি নগরীর টুটপাড়া তালতলা হাসপাতাল এলাকায়। আর আইনভঙ্গকারী নাদিরা আক্তার ৯নং রূপসা স্ট্যান্ড রোড আলতাপ হোসেন লেনের বাসিন্দা মৃত আঃ লতিফ মোল্লার মেয়ে। নাদিরার রয়েছে দু’ ছেলে মেয়ে।
গত ১৩ ফেব্রুয়ারি’২০ কেসিসির সচিব ও সালিশী পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ আজমুল হক স্বাক্ষরিত সালিশী পরিষদের সর্বশেষ সিদ্ধান্ত ও প্রাপ্তি স্বীকার পত্রে উল্লেখ করেন, নুরুজ্জামান সুমন কর্তৃক নাদিরা আক্তারকে গত ৬মে’১৯ তালাকনামার নোটিশ প্রেরণ করেন এবং ওই তালাকনামা নোটিশ অত্র অফিসে ১৬ মে ডাকযোগে প্রাপ্ত হয়। উভয়পক্ষকে মীমাংসার জন্য শুনানীর দিন ধার্য্য করে নোটিশ প্রদান করা হয়। ধার্য্য তারিখ উভয় পক্ষদ্বয় অনুপস্থিত থাকেন। বিধায় আপোষ-মিমাংসা সম্ভব হয়নি। বিধি মতে ৯০ দিন অতিবাহিত হয়েছে। সে মতে তালাক কার্যকর হয়েছে।
এদিকে বাগেরহাট পৌর সভার ৩ ও ১৯ নং ওয়ার্ডে দায়িত্বরত বিবাহ ও তালাক নিয়ন্ত্রক মোঃ শামীম আহসান তিন লাখ টাকা দেন মোহরে গত ২৫ মার্চ’২০ নাদিরা আক্তারের অন্যত্র বিয়ে সম্পন্ন করেন। নাদিরার নতুন স্বামী হলেন মাহাবুব হাসান। যার নিকাহনামার বুক নং-০২/২০১৯, পৃষ্ঠা নং-৮৩, তাং-২৫/০৩/২০২০ইং। ওই নিকাহনামায় ৫নং কলামে নাদিরা নিজেকে বিধাব উল্লেখ করেছেন। এমন কি নগরীর টুটপাড়ার বাসিন্দা হওয়া সত্বেও তারা অন্য জেলায় গিয়ে তথ্য গোপন করে নিজেদের বিবাহ সম্পন্ন করেছেন।
বিবাহ ও তালাক নিয়ন্ত্রক মোঃ শামীম আহসান বিবাহের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, তথ্য গোপন করে তারা বিবাহ সম্পন্ন করেছে। এমন কি তালাকপ্রাপ্ত স্বামীর বিবাহ বিচ্ছেদের তিন মাস ১০ দিন পর বিবাহ করার নিয়ম থাকলে তাও ভঙ্গ করা হয়েছে। আইন অনুযায়ী এটা তারা অপরাধ করেছে বলে বিবাহ ও তালাক নিয়ন্ত্রক দাবি করেন।
বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা খুলনার কো-অর্ডিনেটর এড. মোমিনুল ইসলাম বলেন, তালাকপ্রাপ্ত কোন মহিলা অন্যত্র বিয়ে করতে চাইলে তাকে ১০০ দিন অপেক্ষা করতে হবে। অর্থ্যাৎ তিন মাস ১০ দিন পর তিনি চাইলে অন্যত্র বিয়ে করতে পারবেন। তার আগে বিয়ে করলে তিনি আইনভঙ্গ করলেন। নির্ধারিত সময় পার হওয়ার আগে বিয়ে করা আইনগতভাবে বৈধ হয় না। এছাড়া তালাকপ্রাপ্ত স্বামী যদি বেঁচে থাকেন তাকে মৃত দেখানো অন্যায়। ওই স্বামী বেঁচে থাকলে কোনভাবেই নিজেকে বিধাব পরিচয় দেয়া যাবে না।
এদিকে বিবাহ বিচ্ছেদের আগে নাদিরা আক্তার তার স্বামীর বিরুদ্ধে (সাবেক) দু’টি মামলা দায়ের করেন। একটি ২০১৮ সালের যৌতুক নিরোধ আইনের ৩ ধারা আর অপরটি হচ্ছে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধীত-২০০৩) ১১ (গ)। এই মামলাটি ১৮/০২/২০ইং তারিখে দায়ের করা হয়। অর্থাৎ বিবাহ বিচ্ছেদ চূড়ান্ত হওয়ার ৫ দিন আগে নারী নির্যাতন মামলাটি দায়ের করা হয়। মামলা দু’টি এখন খুলনার আদালতে বিচারাধীন। নুরুজ্জামান সুমন অভিযোগ করে বলেন, নাদিরা মামলাবাজ ও ঠকবাজ। নিজের অপরাধ ধামাচাপা দেয়ার জন্য খুলনার বাইরে বাগেরহাটে গিয়ে বিয়ে করেছে। সেখানে তথ্য গোপন করে করেছে বিয়ে। সে বিয়ে অনুযায়ী তাকে মৃত দেখানো হয়েছে। অথচ কাগজ কলমে তিনি মৃত হলেও নিয়মিত মামলায় হাজিরা দিয়ে চলেছেন।