UsharAlo logo
শুক্রবার, ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঝিনাইদহে সন্তান নিয়ে বাড়ি ছাড়া ধর্ষিতা কিশোরী

usharalodesk
জানুয়ারি ১১, ২০২৩ ৬:৩৬ অপরাহ্ণ
Link Copied!

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি : ঝিনাইদহ জেলার শৈলকুপায় শিশু সন্তান নিয়ে স্বামীর বাড়িতে আশ্রয়ের পরিবর্তে এক কিশোরীকে ভিটে ছাড়া করার অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগী কিশোরী ও তার পরিবার এমন অভিযোগ করেছে।

অভিযোগে বলা হয়েছে, প্রতিবেশী মিলন মোল্লার লালসার শিকার হয়ে গর্ভবতী হন ওই কিশোরী। কিন্তু এরপরও তাকে বিয়ে করতে না চাওয়ায় কিশোরীর মা আদালতের আশ্রয় নেন। এ ঘটনায় মিলন মোল্লাকে কারাগারে পাঠায় আদালত। পরে বিয়ের কাবিন করে জামিনে মুক্তি পান তিনি।

অভিযোগ রয়েছে, কারাগার থেকে জামিন পেয়েই মিলন ওই কিশোরীকে স্ত্রী হিসেবে মানতে চাননি। এরই মাঝে কিশোরী সন্তান প্রসব করলে গ্রামের লোকজন বাচ্চাটির কথা চিন্তা করে মিলনের বাড়িতে তুলে দেন।

কিশোরীর অভিযোগ, তাকে ঘরে তুলে দেয়ার পর বাড়িতে আটকে রেখে শারীরিক নির্যাতন করা হয়। যা সহ্য করে স্বামীর বাড়ি পড়ে থাকলেও গত বছরের ডিসেম্বরে তাকে তাড়িয়ে দেয়া হয়। এখন তালাকের জন্য চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। মাঝে মধ্যে প্রাণনাশের হুমকি দেয়ারও আভিযোগ করেন ওই কিশোরী। প্রাণনাশের ভয়ে কিশোরীটির পরিবার গত এক বছর বাড়ি ছাড়া রয়েছেন।

এ বিষয়ে কিশোরীর মা জানান, একমাত্র মেয়েকে রেখে তার স্বামী বর্তমানে নিরুদ্দেশ হয়ে গেছে। তিনি বর্তমানে তার বাবার বাড়িতে বসবাস করছেন। ২০২০ সালের জুলাইয়ে নানাভাবে তার মেয়ের সাথে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলে মিলন। বিষয়টি নজরে আসলে প্রতিবেশীদের জানান তিনি।

মায়ের অভিযোগ, বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ করলে তারা বিচারের কথা বলে সময় নষ্ট করে। এক সময় তার মেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে। চিকিৎসকের কাছে নিলে তারা গর্ভবতী হওয়ার কথা জানান। বিষয়টি নিয়ে ওই কিশোরীর পরিবারের পক্ষ থেকে মিলনকে বিয়ের জন্য চাপ দেন তারা। কিন্তু মিলন এই প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় ওই বছরের সেপ্টেম্বর মাসে কিশোরীর মা ঝিনাইদহ আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। এই মামলায় মিলন মোল্লাসহ পাঁচজনকে আসামি করা হয়।

কিশোরীর মামী জানান, এই মামলায় আদালত মিলনকে কারাগারে পাঠায়। প্রায় ছয় মাস কারাভোগের পর মিলন পরিবারের লোকজনের মাধ্যমে তাদের মেয়েকে বিয়ের কথা বলে একটি সমঝোতা করেন। চার লাখ টাকা কাবিন ও শিশুটির ভবিষ্যতের জন্য নগদ তিন লাখ টাকা দেয়ার কথা হয়। আদালতে তাদের কাবিন হয়, যা জমা দিয়ে তিনি জামিন পান।

অভিযোগ রয়েছে, জামিনের পর বাড়ি ফিরে তাদের মেয়েকে আর ঘরে নিতে চাননি মিলন। এদিকে মিলনের জামিন হওয়ার দু’সপ্তাহের মধ্যে তাদের মেয়ের গর্ভে থাকা সন্তানের জন্ম হয়। পরে গ্রামের লোকজন মেয়েকে মিলনের বাড়িতে তুলে দেন।

তিনি আরো জানান, লোকজনের চাপে মিলন তাদের মেয়েকে ঘরে নিলেও স্ত্রী হিসেবে মানতে পারেনি। উল্টো বাড়িতে আটকে রেখে সারাক্ষণ নির্যাতন করেছে। তারপরও কিশোরীটি নির্যাতন সহ্য করে স্বামীর বাড়িতে পড়েছিল। কিন্তু ওই বছরের ডিসেম্বরে মেয়েটিকে তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এমনকি তাদের উপর সারাক্ষণ চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে তালাক দেবার জন্য। এই কথায় রাজি না হওয়ায় তাদের বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এই অবস্থায় তারা বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।

এ ব্যাপারে কিশোরীর মা জানান, তিনি বাবার বাড়িতে থাকছেন। তার কারণে তার বৃদ্ধা মা ও ভায়ের স্ত্রীও বাড়ি ছাড়া রয়েছেন। তাদের পরিবারের মোট আট সদস্য বর্তমানে অন্যত্র ঘর ভাড়া করে আছেন। নিজেদের বাড়িঘর থাকতেও অন্যের ঘরে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন তারা। তিনি একটি ক্লিনিকে কাজ করে মেয়ে আর মেয়ের গর্ভে জন্ম নেয়া ওই শিশুকে মানুষ করছেন। বিদেশে থাকা ভাইয়ের পাঠানো টাকায় ভাইয়ের স্ত্রী, তার সন্তান আর তার মা বেঁচে আছেন।

প্রতিবেশী জামির হোসেন জানান, তারা একাধিকবার এই ঘটনাটি সমাধান করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু মিলন মামলা থেকে বাঁচতে নানা সময় কৌশল করেন। মেয়েটিকে বাড়িতে নেন আবার নির্যাতন করে তাড়িয়ে দেন। এর একটা স্থায়ী সমাধান প্রয়োজন। পাশাপাশি তাদের বাড়িতে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে প্রশাসনের পদক্ষেপ কামনা করেন।

এ ব্যাপারে মিলন মোল্লা জানান, তিনি বিয়ে করেছেন। এখন সংসার করতে চান। তবে কিশোরীর পরিবার তাদের সংসার করতে দিচ্ছে না।

তিনি বলেন, মীমাংসার সময় টাকা দেয়ার কথা ছিল। তিনি এক লাখ টাকাও দিয়েছেন। এই টাকা তার স্ত্রীর কাছে থাকার কথা থাকলেও তা অন্যরা নিতে চান।

মিলনের অভিযোগ, মূলত ওই কিশোরীর পরিবার টাকা নিতে চান, সংসার করতে চান না। এছাড়া তাদের বাড়ি ছাড়ার বিষয়ে বলেন, ঘটনা তার ও তার স্ত্রীর মধ্যে হয়েছে এছাড়াও মামলা করার সময় গ্রামের আরো পাঁচ জনের নামে মামলা দেয়া হয়েছে। যে কারণে তারা এখন চাপ দিচ্ছে। তাই তারা বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র থাকেন।

এ বিষয়ে শৈলকুপা থানার এসআই আব্দুস শহীদ জানান, মামলায় তারা অভিযোগপত্র দিয়েছেন। এখন বিচার চলছে। মাঝে মিলন মোল্লা এসেছিলেন। তিনি জানিয়েছেন যে তার স্ত্রী বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে। এ ব্যাপারে জানার জন্য উভয় পক্ষকে তানায় ডাকা হয়েছিল। কিন্তু তারা আসেনি। যে কারণে কোনো সমাধান করা যায়নি।