UsharAlo logo
বুধবার, ১৯শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

ডিসেম্বরেই নির্বাচনের আভাস, কী হতে যাচ্ছে এখন

ঊষার আলো রিপোর্ট
ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২৫ ১০:৫০ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

অন্তর্বর্তী সরকার শুরুতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য দুটো টাইমলাইনের কথা বললেও এখন ডিসেম্বরের দিকেই নির্বাচনের আভাস মিলছে। বিএনপি নেতাদের সাথে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের বৈঠকে ডিসেম্বরেই নির্বাচনের বিষয়ে একমত হওয়ার কথা বলা হয়েছে। এর পরপরই নির্বাচন সামনে রেখে কী কী পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে তা নিয়ে আগ্রহ তৈরি হয়েছে রাজনৈতিক মহলে। যা নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন করেছে বিবিসি বাংলা।

প্রধান ‍উপদেষ্টার সঙ্গে সবশেষ বৈঠকের পর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা তাদের আশ্বস্ত করেছেন।

যদিও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব ওই দিনই তার ব্রিফিংয়ে বলেছেন ‘বিএনপির পক্ষে বলা হয়েছে যেন তাড়াতাড়ি নির্বাচন হয়। ঐকমত্য কমিশনের কাজই হবে এটা নিয়ে কাজ করা।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, তাদের কাছে আলোচনার সময় মনে হয়েছে যে নির্বাচনের বিষয়ে বিএনপির দাবি সরকারের কাছে গ্রাহ্য হয়েছে এবং এর পরবর্তী পদক্ষেপগুলো কী কী হবে সেটি এখন সরকারকেই ঠিক করতে হবে।

‘রোডম্যাপ ঘোষণার মাধ্যমে সরকার এটি পরিষ্কার করতে পারে। তাহলে বুঝতে পারবো যে কী কী পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। তবে আমরা আগেই বলেছি স্বল্পমেয়াদে জরুরি সংস্কার বাস্তবায়নের পাশাপাশি দ্রুত নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাওয়া উচিত’, বলেছেন তিনি।

নাম না প্রকাশ করার শর্তে সরকারের একজন উপদেষ্টা বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, নির্বাচনের আগে কতটা সংস্কার করা প্রয়োজন আর নির্বাচনের পর কতটা হবে- সেটি নিয়ে ঐকমত্য তৈরি করাই হবে পরবর্তী ধাপের কাজ।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব সোমবারই জানিয়েছেন যে, পনেরই ফেব্রুয়ারি অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐকমত্য কমিশন প্রথম বৈঠকে বসবেন রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে।

এদিকে ঢাকায় নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেছেন ডিসেম্বরে সংসদ নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যেই প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশন এখন ভোটার হালনাগাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

প্রসঙ্গত, এর আগে জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা বলেছিলেন চলতি বছরের শেষে কিংবা আগামী বছরের শুরুতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

এরপর কী কী হতে যাচ্ছে

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, তাদের সাথে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকের সময় যেভাবে আলোচনা হয়েছে তাতে তাদের কাছে মনে হয়েছে যে ডিসেম্বরেই নির্বাচনের বিষয়ে বিএনপির যে দাবি সেটিকে বিবেচনায় নেয়া হয়েছে।

‘এখন সরকার ঠিক করবে কখন কী হবে। সংস্কার প্রস্তাব ও নির্বাচনি রোডম্যাপ- কোনটা কতটা এখন দরকার। কোনটা কখন কীভাবে হবে সেটি সরকারের রোডম্যাপ থেকে জানা যাবে,’ বলেছেন তিনি।

ওই বৈঠকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সাথে মি. আহমেদ ছাড়াও স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমেদ (অবসরপ্রাপ্ত) উপস্থিত ছিলেন।

যদিও নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলছেন, নির্বাচনের সময় ঠিক করার পর সরকারের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত একটি ভালো ভোটার তালিকা করে সুষ্ঠু নির্বাচন দেয়া যাতে মানুষ নির্বিঘ্নে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে।

‘আর এ লক্ষ্যে যতটা সংস্কার দরকার সেটুকু করেই নির্বাচন আয়োজনে মনোনিবেশ করাই পরবর্তী ধাপের পদক্ষেপ হওয়া উচিত। বিএনপি বলেছে ডিসেম্বরের বিষয়ে তাদের আশ্বস্ত করা হয়েছে। কিন্তু তার প্রেস সচিব কিন্তু অন্য দলগুলোর রাজী হওয়ার বিষয়টিও তুলেছেন,’ বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।

মাহমুদুর রহমান মান্না বলছেন নির্বাচনের আগে পুলিশ, প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনের সংস্কার ইস্যুটি গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।

‘এসব বিষয়ে কতটা কী করা হবে তা নিয়ে দলগুলোর সাথে আলোচনার মাধ্যমে জরুরি সংস্কার বাস্তবায়ন নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকারের পরবর্তী পদক্ষেপ হতে পারে’, বলেছেন তিনি।

প্রসঙ্গত, বিএনপির সঙ্গে বৈঠকের পর প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম তার ব্রিফিংয়ে বলেছেন পনেরই ফেব্রুয়ারি ঐক্যমত্য কমিশনের প্রথম বৈঠক হবে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে।

‘বিএনপির পক্ষে বলা হয়েছে যেন তাড়াতাড়ি নির্বাচন হয়। ঐক্যমত্য কমিশনের কাজই হবে এটা নিয়ে কাজ করা। আমরা দুটো টাইম দিয়েছিলাম যে এ বছরের মধ্যে ও আগামী বছরের জুনের মধ্যে। এটা নিয়ে সামনে এ বিষয়ে আরও কিছু শুনতে পারবেন,’ বলেছেন তিনি।

ডিসেম্বরে নির্বাচনের আশ্বাসের বিষয়ে বিএনপির দাবির কথা উল্লেখ করে করা একজন সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, ‘জাতীয় নির্বাচন ওনারা চাচ্ছেন ডিসেম্বরের মধ্যে। আমাদের তরফ থেকে চিন্তা আছে। উপদেষ্টা পরিষদ দেখছেন। কোন সিদ্ধান্ত হলে আপনারা জানবেন’।

ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে নির্বাচন আয়োজনের পদক্ষেপগুলো নিয়ে আলোচনা হবে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে সালাউদ্দিন আহমেদ বিবিসি বাংলাকে বলেছেন যে ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে মূলত সরকার যেসব সংস্কার কমিশন গঠন করেছে তাদের রিপোর্ট গুলোতে কী আছে সেটি রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে খোলাসা করা হবে।

সরকারের যে উপদেষ্টা বিবিসির সাথে কথা বলেছেন তিনি অবশ্য বলেছেন যে ওই কমিশনের বৈঠকে কোন কোন বিষয়ে সংস্কার হবে, নির্বাচনের পর কোনগুলো বাস্তবায়ন হবে এবং নির্বাচন কিভাবে হবে তা নিয়ে ঐকমত্য তৈরির চেষ্টা করা হবে।

অর্থাৎ বিএনপির সাথে আলোচনায় ডিসেম্বরে নির্বাচনের বিষয়ে একটি ইতিবাচক বার্তা সরকারের দিক থেকে দিলেও এটি আসলে ঠিক হবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনার মাধ্যমেই।

এখানে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো দ্রুত নির্বাচন চাইলেও জামায়াতে ইসলামী এখনো সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়নকেই বেশি গুরুত্ব দেয়ার পক্ষে। তবে ডিসেম্বরে নির্বাচনের বিষয়ে যে আশ্বাসের কথা বলা হচ্ছে সে বিষয়ে জামায়াতের কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

যদিও গত বিশে জানুয়ারি ঢাকায় জাতিসংঘের একটি বিশেষজ্ঞ প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আলোচনার পর জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে কথা বলেছিলেন।

তিনি তখন বলেছিলেন, ‘বিএনপি বাংলাদেশের একটি বড় দল। নির্বাচনের ব্যাপারে তাদের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি আছে এবং সে হিসেবে তারা তাদের বক্তব্য রেখেছে। আমরা যেটা বলেছি, প্রয়োজনীয় সংস্কার করে যথা শিগগির সম্ভব নির্বাচন দেওয়ার জন্য। এটাই আমাদের অবস্থান।’

বৈঠকে ছাত্র উপদেষ্টারা অনুপস্থিত

বিএনপি প্রতিনিধি দলের সাথে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকে এবার ছাত্র উপদেষ্টাদের কাউকে দেখা যায়নি। এটিও রাজনৈতিক মহলের দৃষ্টিতে এসেছে।

ওই বৈঠকে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ ও শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান যোগ দিয়েছিলেন।

জানা গেছে সোমবার রাতে প্রধান উপদেষ্টার সাথে ওই বৈঠকের সময় একটি চিঠি তুলে দিয়েছিলেন বিএনপি প্রতিনিধি দলের সদস্যরা।

তাদের চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো কোনো উপদেষ্টা ক্ষমতায় থেকে রাজনৈতিক দল গঠন প্রক্রিয়ায় জড়িত রয়েছে মর্মে জনমনে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। এ প্রক্রিয়ায় প্রশাসন যন্ত্রকে ব্যবহার করার নানা প্রকার লক্ষণ ক্রমেই প্রকাশ পাচ্ছে যা দেশ ও গণতন্ত্রের জন্যে মোটেই সুখকর নয়’।

তবে ছাত্রদের দল গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে বিএনপির আপত্তির সাথে বৈঠকে ছাত্র উপদেষ্টাদের অনুপস্থিত থাকার কোন সম্পর্ক আছে কি-না তা নিয়ে কোন ধারণা পাওয়া যায়নি।

প্রসঙ্গত, জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নতুন যে রাজনৈতিক দল গঠনের প্রক্রিয়া চালাচ্ছে তাতে উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ সম্পৃক্ত হবেন এমন খবর সংবাদ মাধ্যমে এসেছে।

যদিও তারা আগেই জানিয়েছেন যে দল গঠন বা দলে সম্পৃক্ত হলে সেটি তারা উপদেষ্টা পদ ছেড়েই করবেন।

ঊষার আলো-এসএ