UsharAlo logo
শুক্রবার, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

দুই ওসিকে দায়ী করে ঝাড়ুদারের চিরকুট! অতঃপর…

usharalodesk
জুন ৬, ২০২৩ ৫:১১ অপরাহ্ণ
Link Copied!

ঊষার আলো রিপোর্ট : পিরোজপুর সদর থানার ঝাড়ুদার আল মামুন (৪০) নামের এক ব্যক্তি বিষপানে আত্মহত্যা করেছেন।সোমবার সকালে ইন্দুরকানী উপজেলার গাবছিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এদিকে আত্মহত্যার আগে দুই থানার ওসিকে দায়ী করে একটি চিরকুট লিখেছেন এ যুবক।

চিরকুটে তিনি লেখেন, ‘আমি নিরদোশ (নির্দোষ)। আমার মৃত্যুর জন্য দায়ী ইন্দুরকানী থানার ওসি এনামুল হক আর পিরোজপুর সদর থানার ওসি আবির মো. হোসেন। আমি ইন্দুরকানী থানার ওসির টাকা চুরি করি নাই। আমাকে ফাঁসানো হয়েছে। আমার মৃত্যুর পর পোস্টমর্টেম (ময়নাতদন্ত) না করে আমাকে মামার বাড়িতে দাফন করবেন’।

ইন্দুরকানী উপজেলার গাবগাছিয়া গ্রামের আবুল কালাম শেখের ছেলে মামুন। প্রায় ১০ বছর ইন্দুরকানী থানায় ঝাড়ুদারের চাকরি করার পর প্রায় দুই মাস আগে ইন্দুরকানী থেকে পিরোজপুর সদর থানায় বদলী হয়ে আসেন। তবে তিনি বাড়ি থেকে পিরোজপুরে এসে তার দায়িত্ব পালন করতেন।

মামুনের স্ত্রী মরিয়ম বেগম জানান, তার স্বামী মামুন রোববার বিকেলে বাড়িতে ফেরার পর তাকে খুবই বিমর্ষ দেখাচ্ছিল। এর পর তাকে অনেক বার জিজ্ঞাসা করার পর সে জানায় যে, মসজিদ থেকে একটি জায়নামাজ চুরির অভিযোগে পিরোজপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবির মোহাম্মদ হোসেন তাকে গালমন্দ করার পাশাপাশি শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেছে।

এ ঘটনায় মামুন কোনো অঘটন ঘটাতে পারে- এই আশঙ্কায় পরিবারের সদস্যরা পুরো বিকেল এবং রাতেও তাকে পাহারা দিয়েছে। তবে সকালে বাজারে গিয়ে আগাছা নিধনের ওষুধ কিনে তা পান করে মামুন।

এর পর স্থানীয়রা দ্রুত মামুনকে ইন্দুরকানী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখান থেকে তাকে পিরোজপুর জেলা হাসপাতালে এবং পরবর্তীতে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়। সেখানে মামুনের শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায়, দ্রুত তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে মামুনের মৃত্যু হয়।

মামুনের স্ত্রী আরও বলেন, ইন্দুরকানী থানায় থাকাকালীন ওই থানার ওসি এনামুল হক তার স্বামীর উপর বিভিন্নভাবে নির্যাতন করতো। এমনকি সে পিরোজপুর সদর থানায় যাওয়ার পরও ইন্দুরকানী থানার ওসি, ওই থানার ওসির কাছে তার স্বামীর বিরুদ্ধে আজেবাজে কথা বলেছে, যাতে সেখানেও তার স্বামী নির্যাতিত হয়।

এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে ইন্দুরকানী থানার ওসি এনামুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমাদের থানায় কোনো ঝামেলা ছিল না।  সে তিনমাস আগে বদলি হয়েছে। তার স্ত্রীর সঙ্গে একটু ঝামেলা ছিল- সেটা নিয়ে তাদের শান্ত থাকতে বলেছি। কর্তৃপক্ষ অফিসিয়াল সিষ্টেমে তাকে বদলি করেছিল। তার আত্মহত্যার বিষয়ে আমরা কিছু জানি না।

অন্যদিকে পিরোজপুর সদর থানার ওসি আবির মোহাম্মদ হোসেনের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, থানায় চুরি কিংবা মামুনকে গালমন্দ ও মারধরের কোনো ঘটনা ঘটেনি।

তবে মামুনের আত্মহত্যার বিষয়টি জেনেছেন পিরোজপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাঈদুর রহমান। তবে গালমন্দ কিংবা মারধরের কোনো বিষয় তার জানা নাই বলেও জানান এসপি। এ ছাড়া এ বিষয়ে তিনি কোনো অভিযোগও পাননি।

পুলিশ সুপার আরও জানান, মামুনের লেখা চিরকুটের বিষয়টি তিনি সাংবাদিকদের কাছ থেকে জেনেছেন। মামুন এ বিষয়ে আগে কখনো তার কাছে কোনো অভিযোগও করে নাই। চিরকুটের বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে বলেও জানান পুলিশ সুপার।

মামুন ও মরিয়ম দম্পতির আফসানা আক্তার মীম নামের ১৬ বছর বয়সী একটি মেয়ে এবং আব্দুল্লাহ আল কাওসার নামে ৮ বছর বয়সী একটি ছেলে রয়েছে।

ঊষার আলো-এসএ